হতাশ বেন স্টোকস। ছবি: রয়টার্স।
ম্যাঞ্চেস্টার টেস্ট যে ভারত কোনও ভাবেই জিততে পারবে না, তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনেই। প্রশ্ন ছিল, ভারত কি ইনিংসে হারবে? না, ভারত হারেনি। ১৪৩ ওভার ব্যাট করে ম্যাচ ড্র করেছে তারা। কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার আগে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। খেলা শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময়ের ১৫ ওভার আগে হঠাৎই ড্রয়ের প্রস্তাব দেন বেন স্টোকস। তখন শতরানের কাছে রবীন্দ্র জাডেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দর। ভারতের দুই ব্যাটারের শতরান বানচাল করতেই কি ছক কষেন তিনি? স্টোকসের এই প্রস্তাবের সমালোচনা শুরু হয়েছে। তাঁর ক্রিকেটীয় মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
টেস্টে পঞ্চম দিন শেষ এক ঘণ্টায় ১৫ ওভারের খেলা বাকি ছিল। তখনও ক্রিজ়ে জাডেজা ও ওয়াশিংটন। ভারতের লিড তখন ৭৫ রান। স্টোকস বুঝে গিয়েছিলেন, ভারতের বাকি ছয় উইকেট ফেলে আর এই ম্যাচ জেতা সম্ভব নয়। তাই তিনি ড্রয়ের প্রস্তাব দিতে যান। কিন্তু তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ভারতের দুই ব্যাটার। সেটা দেখে ইংল্যান্ডের উইকেটরক্ষক জেমি স্মিথ আম্পায়ারদের কাছে অভিযোগ করেন যে আলো কমে গিয়েছে। সেই অভিযোগে পাত্তা দেননি আম্পায়ারেরা। তাঁরা খেলা চালিয়ে যেতে বলেন। বাতিস্তম্ভের আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
ম্যাচ বাঁচাতে কঠিন লড়াই লড়তে হয়েছে ভারতকে। প্রথমে লোকেশ রাহুল ও অধিনায়ক শুভমন গিল এবং পরে জাডেজা ও ওয়াশিংটনের জুটি দলকে বাঁচিয়েছে। রাহুল ৯০ রান করেন। শুভমন ১০৩ রানে আউট হন। তাঁরা আউট হওয়ার পর ইংল্যান্ডের জয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু জাডেজা ও ওয়াশিংটন ইংল্যান্ডের মুখের গ্রাস কেড়ে নেন। স্টোকস যখন ড্রয়ের প্রস্তাব দেন, তখন জাডেজা ৮৭ ও ওয়াশিংটন ৮০ রানে ব্যাট করছেন। অর্থাৎ, দু’জনেরই শতরানের সুযোগ ছিল। জাডেজা চলতি সিরিজ়ে বেশ কয়েকটা অর্ধশতরান করলেও শতরান করতে পারেননি। ওয়াশিংটন তো টেস্টে এর আগে শতরানই করেননি। ফলে দু’জনেই চেয়েছিলেন শতরান করতে। সেই কারণেই ড্রয়ের প্রস্তাব মানেননি তাঁরা।
স্টোকস নিজেও জানতেন জাডেজা ও ওয়াশিংটনেক শতরানের সুযোগ রয়েছে। তার পরেও তিনি ড্রয়ের প্রস্তাব দেন। তাঁর এই কাজ অবাক করে ধারাভাষ্যকারদেরও। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ভন বলেন, “স্টোকসের এটা করা উচিত হয়নি। ক্রিকেট জেন্টলম্যানদের খেলা। স্টোকসের সেটা মাথায় রাখা উচিত ছিল।” আর এক ধারাভাষ্যকার সুনীয় গাওস্কর বলেন, “ওরা এই শতরানের যোগ্য। এত পরিশ্রম ওরা করেছে। কেন এখন খেলা ছেড়ে দেবে? স্টোকস কী ভেবে ড্রয়ের প্রস্তাব দিতে গেল? আমি তো বলব ওরা বাকি ১৫ ওভারই ব্যাট করুক।”
ভারত ড্রয়ে রাজি না হওয়ায় হ্যারি ব্রুকের হাতে বল তুলে দেন স্টোকস। অপর প্রান্তে ছিলেন জো রুট। ভাবখানা এমন, যাও তাড়াতাড়ি শতরান করে খেলা শেষ করো। সেই সুযোগ নেন জাডেজারাও। দ্রুত চার-ছক্কা মেরে দু’জনেই শতরান করেন। তাঁরা যাতে বড় শট মারতে পারেন, তার জন্য ফিল্ডারদেরও ৩০ গজ বৃত্তে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন স্টোকস। ভারতের দুই ব্যাটারকে বড় শট মারার কথাও বলছিলেন তিনি। তাঁর এই মনোভাবেরই সমালোচনা হচ্ছে। স্টোকসকে দেখে মনে হয়েছে, ভারতের আগে তিনিই হাল ছেড়ে দিয়েছেন। খেলা শেষে ভারত অধিনায়ক শুভমনও জানিয়েছেন, জাডেজারা ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। এই শতরান তাঁদের প্রাপ্য ছিল। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনিও জাডেজাদের খেলা চালিয়ে যেতে বলতেন বলেও জানিয়েছেন শুভমন।