India vs South Africa

বিশ্বকাপ ফাইনালে কোন কোন দুর্বলতা সমস্যায় ফেলতে পারে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে, কোথায় খামতি দুই দলের?

মহিলাদের এক দিনের বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠা ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা—দু’দলেই নানা দুর্বলতা রয়েছে। যে সব ব্যাপারে সতর্ক না থাকলে ফাইনালে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:৪৬
picture of cricket

(বাঁ দিকে) হরমনপ্রীত কৌর এবং লরা উলভার্ট (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

ম্যাচ জেতার জন্য শুধু শক্তির উপর নির্ভর করলে হয় না। গুরুত্ব দিতে হয় দুর্বলতাগুলিকেও। প্রতিপক্ষ যাতে দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগাতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়। যে কোনও খেলোয়াড় বা দলেরই দুর্বলতা থাকে। মহিলাদের এক দিনের বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠা ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মহিলা ক্রিকেট দলও ব্যতিক্রম নয়।

Advertisement

ভারতীয় দলের দুর্বলতা

হরমনপ্রীত কৌরদের প্রধান দুর্বলতা ফিল্ডিং। প্রতি ম্যাচে প্রতিপক্ষকে ২০-২৫ রান উপহার দিয়ে ফেলছেন ভারতের মহিলা ক্রিকেটারেরা। হয় নিজেদের জয়ের লক্ষ্য বাড়িয়ে ফেলছেন। না হলে, প্রতিপক্ষকে রান তাড়া করায় সুবিধা করে দিচ্ছেন। গত ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ওভার থ্রো থেকে পেয়েছে ৮ রান। সঙ্গে রয়েছে ক্যাচ ধরার ক্ষেত্রে দুর্বলতা। সহজ ক্যাচও ফেলে দিচ্ছেন হরমনপ্রীতেরা। সেমিফাইনালেও একাধিক ক্যাচ ফেলেছে ভারত। প্রতিযোগিতায় এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১৮টি ক্যাচ ফেলেছেন হরমনপ্রীতেরা। ভারতের ক্যাচ ধরার দক্ষতা ৬৬ শতাংশ। যা দ্বিতীয় জঘন্যতম। সবচেয়ে বেশি ৭৪ বার মিস ফিল্ড হয়েছে ভারতের। সবচেয়ে বেশি ৬ বার ওভার থ্রোও করেছে ভারত। ফিল্ডিংয়ের দুর্দশা একটু বেশিই চোখে লাগছে। ফাইনালে সতর্ক থাকতে হবে ভারতীয় দলকে। ক্রিকেটে খারাপ ফিল্ডিংয়ের জন্য ম্যাচ হারার উদাহরণ কম নেই।

ভারতের দুর্বলতার দ্বিতীয় জায়গা উইকেট রক্ষা। বাংলার রিচা ঘোষকে উইকেটের সামনে ব্যাট হাতে যতটা সপ্রতিভ দেখাচ্ছে, উইকেটের পিছনে দস্তানা হাতে ততটা নয়। প্রায় প্রতি ম্যাচে ক্যাচ পড়ছে তাঁর হাত থেকে। সেমিফাইনালেও ফেলেছেন। প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি তিনটি স্টাম্পড আউট করার সুযোগও হাতছাড়া করেছেন রিচা। আধুনিক ক্রিকেটে উইকেটরক্ষকের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফাইনালে সতর্ক থাকতে হবে রিচাকে।

ভারতীয় দলের দুর্বল বোলিং আক্রমণও উদ্বেগে রাখবে কোচ অমল মুজুমদারকে। রেণুকা সিংহ ঠাকুর, ক্রান্তি গৌড়েরা প্রত্যাশা মতো পারফর্ম করতে পারছেন না। চোট সারিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে আসা রেণুকা ছিলেন এক সময় দলের প্রধান স্ট্রাইক বোলার। অথচ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল পর্যন্ত তাঁর উইকেট সংখ্যা ৩। রান কম দিলেও প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলতে পারছেন না। ক্রান্তির সমস্যা ধারাবাহিকতার অভাব। ৯ উইকেট নিলেও ওভার প্রতি প্রায় ৬ রান করে দিয়েছেন। সেমিফাইনালে ৬ ওভারে খরচ করেছেন ৫৮ রান। এক বার মার খেয়ে গেলে লাইন-লেংথ ঠিক রাখতে পারছেন না। আমনজ্যোৎ কৌরও বল হাতে ভরসা দিতে পারছেন না তেমন। ৬ উইকেট নিলেও ওভার প্রতি দিয়েছেন প্রায় সাড় ৬ রান। সেমিফাইনালে ৮ ওভারে ৫১ রান দেন। প্রতিপক্ষের রান তোলার গতি আটকাতে পারছেন না। মাঝে মাঝেই আলগা বল করে ফেলার বদভ্যাস রয়েছে তাঁর। খেতাবি লড়াইয়ে ভারতের জোরে বোলারদের নিয়ে উদ্বেগ থাকছেই।

আরও একটি ব্যাপারে সতর্ক না হলেই নয়। প্রচুর ‘ওয়াইড’ বল করছেন ভারতীয়েরা। এখনও পর্যন্ত ৮৯টি ‘ওয়াইড’ বল করেছেন। গড়ে ১১টির বেশি ‘ওয়াইড’ বল করেছেন ভারতের বোলারেরা। সঙ্গে ‘নো’ বলের সংখ্যা ৬টি। অর্থাৎ প্রতি ম্যাচে প্রতিপক্ষ দলগুলিকে গড়ে ২ ওভার বেশি ব্যাট করার সুযোগ দিয়েছেন তাঁরা।

দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্বলতা

প্রথম বার বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান দুর্বলতা ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতার অভাব। এ বারের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬৯ রানে এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৯৭ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিলেন লরা উলভার্টেরা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি তাঁরা। অধিনায়ক উলভার্ট ছাড়া প্রথম সারির আর কোনও ব্যাটার ভাল ফর্মে নেই। অধিকাংশ ম্যাচেই তাঁরা ব্যর্থ। প্রতি ম্যাচে দলের ইনিংস টানতে হচ্ছে অধিনায়ককে। তিনি ব্যর্থ হলে ভেঙে পড়ছে তাদের ইনিংস। ফাইনালে ব্যাটিং নিয়ে সতর্ক থাকতেই হবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

ফর্মে না থাকার পাশাপাশি স্পিন খেলার ক্ষেত্রেও দুর্বল দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের হাতে দীপ্তি শর্মা, স্নেহ রানা, শ্রী চরণি, রাধা যাদবের মতো স্পিনার রয়েছেন। মুম্বই পিচে তাঁদের সামলাতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের। বিশাখাপত্তনমে লিগের ম্যাচে চরণির বল খেলতে পারেননি তাঁরা। মুম্বইয়ের পিচ খেলার অভিজ্ঞতাও নেই উলভার্টদের। স্পিন বল খেলার দুর্বলতা ফাইনালে সমস্যায় ফেলতে পারে প্রথম বার ফাইনালে ওঠা প্রোটিয়াদের।

ননকুলুলেকো এমলাবা ছাড়া তেমন ভাল স্পিনার নেই দক্ষিণ আফ্রিকা দলে। কিছুটা ক্লো ট্রায়ন। তবে সুনে লুস বা নন্দুমিসো শাঙ্গাসের পক্ষে মুম্বইয়ের ২২ গজে ভারতীয় ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলা কঠিন। ভাল স্পিন বোলারের অভাব ফাইনালে পিছিয়ে রাখতে পারে উলভার্টদের।

Advertisement
আরও পড়ুন