FIFA Club World Cup 2025

উচ্ছ্বাস শুধু ব্রাজিল আর আফ্রিকার, ফিফার ক্লাব বিশ্বকাপ নিয়ে আদৌ কি উৎসাহ রয়েছে বড় দলের সমর্থকদের?

অনেক পরিকল্পনা এবং জাঁকজমক করে ক্লাব বিশ্বকাপ আয়োজন করছে ফিফা। তবে বেশির ভাগ ম্যাচেই দেখা যাচ্ছে প্রচুর ফাঁকা আসন। প্রশ্ন উঠছে, বড় দলগুলির সমর্থকদের কি আদৌ উৎসাহ রয়েছে ক্লাব বিশ্বকাপ নিয়ে?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২৫ ১৫:৫৭
football

চলছে উলসান বনাম মামেলোডির খেলা। ফাঁকা ফ্লোরিডার স্টেডিয়াম। ছবি: রয়টার্স।

অনেক পরিকল্পনা এবং জাঁকজমক করে ক্লাব বিশ্বকাপ আয়োজন করছে ফিফা। বেশ কয়েক দিন খেলাও হয়ে গিয়েছে। তবে বেশির ভাগ ম্যাচেই দেখা যাচ্ছে প্রচুর ফাঁকা আসন। প্রশ্ন উঠছে, বড় দলগুলির সমর্থকদের কি আদৌ উৎসাহ রয়েছে ক্লাব বিশ্বকাপ নিয়ে? যা উচ্ছ্বাস তা তো শুধু দেখা যাচ্ছে ব্রাজিল এবং আফ্রিকার সমর্থকদেরই।

Advertisement

পরের বছরের ফুটবল বিশ্বকাপের মহড়া হিসাবে দেখা হচ্ছে ক্লাব বিশ্বকাপকে। তাই বিশ্বকাপের জন্য চিহ্নিত করে রাখা মাঠগুলিতেই খেলা হচ্ছে। প্রতিটি স্টেডিয়ামই বড় বড়। গড়ে ৬০ হাজার দর্শক খেলা দেখতে পারেন। কিন্তু মাঠ ভরছে কই? ফাঁকা গ্যালারি নিয়ে বিস্ময় ক্রমে বেড়েই চলেছে। আমেরিকায় ফুটবলকে জনপ্রিয় করার যে লক্ষ্য ফিফা নিয়েছে তা নিয়ে স্থানীয় দর্শকদের মধ্যে আদৌ উৎসাহ রয়েছে তো?

উদ্বোধনী ম্যাচে খেলতে নেমেছিলেন লিয়োনেল মেসি। মেজর লিগ সকারে যে ম্যাচে মেসিকে দেখতে স্টেডিয়াম পূর্ণ থাকে, সেই দলেরই ক্লাব বিশ্বকাপের খেলায় অনেক আসন ফাঁকা ছিল। ম্যাচের আগের দিন পর্যন্ত ২৫ হাজার টিকিটও বিক্রি হয়নি। যদি উদ্বোধনী ম্যাচের দর্শকসংখ্যা প্রকাশ করেনি ফিফা। শোনা গিয়েছে মায়ামি ডেল কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, একটি টিকিট কিনলে চারটি বিনামূল্যে পাওয়া যাবে।

ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো অবশ্য এ সব মানতে চাইছেন না। প্রতিযোগিতা শুরুর আগেই বলেছিলেন, “আমি আশা করছি প্রতিটি স্টেডিয়াম ভর্তি থাকবে। অসাধারণ একটা পরিবেশ তৈরি হবে। ঐতিহাসিক।” বাস্তব চিত্রটা অন্য রকম। চেলসি বনাম লস অ্যাঞ্জেলেসের ম্যাচে ৭১ হাজার দর্শকাসনের স্টেডিয়ামে হাজির ছিলেন মাত্র ২২ হাজার সমর্থক। চেলসির কোচ এনজ়ো মারেস্কা বলেন, “অদ্ভুত পরিবেশে খেললাম। প্রায় ফাঁকা স্টেডিয়াম। তবে পেশাদার হিসাবে আমাদের মানিয়ে নিতেই হবে।”

টিকিট কেনার বিষয়ে আমেরিকার পাশাপাশি এগিয়ে রয়েছেন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, কানাডা এবং আফ্রিকার অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলির সমর্থকেরা। ব্রাজিল এবং আফ্রিকার সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ একটু বেশিই। পামেইরাস এবং ফ্লুমিনেন্স খেলছে ক্লাব বিশ্বকাপে। দুই ক্লাবেরই বহু সমর্থক হাজির হয়েছেন আমেরিকায়। একই রকম জনপ্রিয়তা রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার মামেলোডি সানডাউন্স এবং মিশরের আল আহলিকে ঘিরে। সমর্থকেরা টাইম্‌স স্কোয়্যারে ভিড় করছেন প্রিয় ক্লাবের পতাকা নিয়ে। নাচছেন, গাইছেন, মিছিল করে স্টেডিয়ামে যাচ্ছেন। ঠিক যেমনটা ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে হয়ে থাকে।

কিন্তু ইউরোপীয়দেরই আগ্রহ নেই। ইউরোপের যে দেশের ফুটবল সবচেয়ে জনপ্রিয়, সেই ইংল্যান্ডের সমর্থকেরা টিকিট কাটার নিরিখে রয়েছেন ১১ নম্বরে। দূরত্ব একটা কারণ। তার থেকেও বড় কারণ, সারা বছর ধরে খেলা দেখার একঘেয়েমি। ঘরোয়া লিগ, কাপ এ সব শেষ হওয়ার পর সাধারণত এই সময়টাও ফুটবলারেরা যেমন বিশ্রাম পান, তেমনই অন্য দিকে নজর থাকে সমর্থকদের। তাঁরা এখন নতুন খেলোয়াড় কেনা-বেচার খবরের দিকে বেশি নজর দেন। সেই জায়গায় নতুন করে আরও একটি প্রতিযোগিতা তাঁদের আগ্রহ কমিয়েছে।

স্পেনের ঘরোয়া লিগের প্রেসিডেন্ট জেভিয়ার তেবাস সরাসরি মুখ খুলেছেন ফিফার বিরুদ্ধে। বলেছেন, “আমার একমাত্র লক্ষ্য, আর একটাও ক্লাব বিশ্বকাপ যাতে আয়োজন না করা হয়। আরও একটা প্রতিযোগিতা আমরা চাই না। এটা শুধু টাকা এ দিক থেকে ও দিকে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। কেউ জানে না অর্থ কোথা থেকে আসছে। এ ভাবে ফুটবল টিকতে পারবে না।”

টিকিটের দামও আগ্রহ না থাকার একটা কারণ। ফিফা ‘ডায়নামিক প্রাইসিং’ রেখেছে টিকিটের জন্য। অর্থাৎ, চাহিদা অনুযায়ী দাম বদলাবে। ফলে বড় ক্লাবগুলির ম্যাচের টিকিটের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাচ্ছে। যারা স্বল্প পরিচিত, তাদের টিকিটের দাম কম। তাতেও গ্যালারি ভরছে না।

যদিও ইনফান্তিনো বলেছেন, “টিকিটের দাম বাড়লেও ফিফা সমালোচিত হয়, কমলেও সমালোচিত হয়। ছাত্রছাত্রীদের টিকিট দিয়ে উৎসাহিত করতে চাইলেও সমালোচনা শুনতে হয়। যাদের সামর্থ্য নেই তাদের খেলা দেখার সুযোগ করে দিচ্ছি। এর চেয়ে বেশি আর কী করতে পারি?”

সব মিলিয়ে, ফিফার কাছে আশার আলো দেখার মতো এখনও কিছু হয়নি। তবে প্রতিযোগিতা তিন সপ্তাহেরও বেশি বাকি। দেখার এই পরিস্থিতি বদলায় কি না।

Advertisement
আরও পড়ুন