ভারতীয় ফুটবলে সমস্যা আরও বাড়ল। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
এ বার সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের এক সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক স্তরে আপত্তি উঠল। নিজেদের অধীনে ফুটবলারদের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেডারেশন। এই সিদ্ধান্ত নিয়েই জলঘোলা শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলারদের সংগঠন ‘ফিফপ্রো’ জানিয়েছে, একটি কমিটি থাকতে আরও একটি কমিটি গঠনের কোনও প্রয়োজন নেই।
ভারতের ফুটবলারদের নিয়ে একটি কমিটি আগেই রয়েছে। তার নাম ‘ফুটবল প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’ বা এফপিএআই। সেই কমিটি থাকার পরেও ফেডারেশন একটি কমিটি গঠন করতে চাইছে। তার নাম ‘ন্যাশনাল প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’ বা এনপিএ।
একটি বিবৃতিতে ফিফপ্রো জানিয়েছে, ‘সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থা তাদের অধীনে ফুটবলারদের যে কমিটি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে আমরা চিন্তিত। ভারতের ফুটবলারদের নিয়ে তৈরি ফুটবল প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনকে ছাপিয়ে এই নতুন কমিটি তৈরি করা হচ্ছে। এতে আমাদের আপত্তি রয়েছে।’ সেখানে আরও জানানো হয়েছে, ‘২০০৯ সাল থেকে ফিফপ্রো-র অনুমোদিত কমিটি ফুটবল প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া। ভারতের ফুটবলারদের স্বার্থে এই কমিটি দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছে। তা হলে হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হল?’
সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার সংবিধান অনুযায়ী, নতুন যে কমিটি তৈরি করা হবে, সেটির আলাদা কোনও আইনি বৈধতা নয়। তার উপর পুরো অধিকার থাকবে ফেডারেশনের। তাই ফেডারেশনের অনুপস্থিতিতে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া বা তৃতীয় কোনও সংস্থার সঙ্গে তাদের আলোচনার কোনও জায়গা নেই। এই কমিটিতে কারা থাকবে, সেই সিদ্ধান্তও নেবে ফেডারেশন।
এই বিষয় নিয়েও আপত্তি রয়েছে ফিফপ্রো-র। তারা বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ফেডারেশন যদি ফুটবলারদের কমিটির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখে, তা হলে ফুটবলারদের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হয়। প্রতিটি ফুটবল লিগে স্বাধীন ফুটবলারদের কমিটি রয়েছে। ভারতে সেই দায়িত্ব দীর্ঘ দিন পালন করছে ফুটবল প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন। তার স্বাধীনতা খর্ব করবে ফেডারেশনের এই সিদ্ধান্ত।’
২০০৬ সালে তৈরি হয়েছিল ফুটবল প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া। ২০০৯ সালে ফিফপ্রো-র অনুমোদন পায় তারা। ভারতের প্রাক্তন ফুটবল অধিনায়ক ভাইচুং ভুটিয়া ছিলেন এই সংস্থার প্রথম সভাপতি। সংস্থার বর্তমান সভাপতি তথা প্রাক্তন ফুটবলার মেহরাজউদ্দিন ওয়াডুও ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। তিনি ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-কে বলেছেন, “বিশ্বের কোথাও ফেডারেশনের অধীনে ফুটবলারদের কমিটি থাকে না। ফুটবলারদের কমিটির কাজ হল ফুটবলারদের স্বার্থের কথা ভাবা। তাদের হয়ে লড়াই করা। কিন্তু যদি তাদের সেই অধিকারই না থাকে, তা হলে সেই কমিটি গড়ে কী লাভ?”
ফিফপ্রো-র আপত্তির জবাব দিয়েছে কল্যাণ চৌবের নেতৃত্বাধীন ফেডারেশন। সংস্থার সচিব এন সত্যনারায়ণ বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে আমরা কাজ করছি। আমার মনে হয়, ফেডারেশনের অধীনে ফুটবলারদের যে কমিটি তৈরি হওয়ার কথা তা নিয়ে ফিফপ্রো-র মাথাব্যথার কোনও কারণ নেই। ফুটবল প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া যে ভাবে কাজ করছিল, সে ভাবেই করবে। ফেডারেশনের তাতে কোনও আপত্তি নেই। ফেডারেশনের অধীনে ফুটবলারদের একটা কমিটি থাকবে।”