India U17 Football Team

জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া বিবিয়ানোর লক্ষ্য যুব বিশ্বকাপ

ফিফা ক্রমতালিকায় ইরান ২০ নম্বরে। ভারত ১৪২! শেষ তিনটি বিশ্বকাপের মূল পর্বেই খেলেছে ইরান। খেলবে ২০২৬ বিশ্বকাপেও।

শুভজিৎ মজুমদার
শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:২০
মধ্যমণি: ইরানকে হারিয়ে সহকারীদের সঙ্গে বিবিয়ানো।

মধ্যমণি: ইরানকে হারিয়ে সহকারীদের সঙ্গে বিবিয়ানো। এআইএফএফ ।

ইরানকে ২-১ হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বে ভারতের যোগ্যতা অর্জন কি বিবিয়ানো ফার্নান্দেসেরও যন্ত্রণা ভোলার রাত নয়? প্রায় দু’দশক আগে অনেক স্বপ্ন নিয়ে তিনি ইস্টবেঙ্গলে সই করেছিলেন। ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে কলকাতা ময়দানকে নীরবে বিদায় জানিয়ে শুধু গোয়া ফিরে যাননি, কার্যত হারিয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলের মূলস্রোত থেকেই। সেই বিবিয়ানোর কোচিংয়েই রবিবার আমদাবাদে স্মরণীয় রাত উপহার দিল ভারতের খুদেরা।

ফিফা ক্রমতালিকায় ইরান ২০ নম্বরে। ভারত ১৪২! শেষ তিনটি বিশ্বকাপের মূল পর্বেই খেলেছে ইরান। খেলবে ২০২৬ বিশ্বকাপেও। ইরানের বিরুদ্ধে ম্যাচ মানেই অবধারিত ভাবে ফুটবলপ্রেমীদের রক্তচাপ বৃদ্ধি। সম্প্রতি কাফা নেশনস কাপেও ০-৩ হেরেছিলেন সন্দেশ জিঙ্ঘনরা। ১৯৭৪ অনূর্ধ্ব-২০ এশীয় যুব ফুটবলে ইরানের সঙ্গে যুগ্মজয়ী হয়েছিল ভারত। ম্যাচ শেষ হয়েছিল ২-২ গোলে। কিন্তু যুব পর্যায়ে এত দিন জয় অধরাই ছিল। রবিবার ইরানের বিরুদ্ধে ১৯ মিনিটে পিছিয়ে পড়েও দালালমুয়ো গাংতে এবং গুনলেইবা ওয়াংখেইরাকপমের গোলে প্রথমবার ভারতের ঐতিহাসিক জয়ের রহস্য কী?

সোমবার দুপুরে আমদাবাদ থেকে গোয়া বিমানবন্দরে নেমে আনন্দবাজারকে ফোনে বিবিয়ানো বলছিলেন, ‘‘সব কৃতিত্ব ছেলেদের। শুরুতে পিছিয়ে পড়ার পরেও ভেঙে পড়েনি ওরা। দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জিতেছে।’’ ইরানের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে রণকৌশল কী ছিল? বিবিয়ানোর ব্যাখ্যা, ‘‘নিয়মিত বিশ্বকাপে খেলা ইরানের শক্তি এবং গুণগত মান সম্পর্কে আমরা সকলেই ওয়াকিবহাল। এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বে যোগ্যতা অর্জন করতে হলে এই ম্যাচে আমাদের জিততেই হত। তা সত্ত্বেও ছেলেদের বুঝিয়েছিলাম, জিততে হলে রক্ষণ শক্তিশালী করে খেলতে হবে। কারণ, আমি জানতাম, ইরানের লক্ষ্যই থাকবে ম্যাচের শুরু থেকে আক্রমণের ঝড় তুলে আমাদের চাপে রাখা। ওরা দ্রুত পাস খেলবে।’’ আরও বললেন, ‘‘আমি জানতাম, এই ম্যাচে হয়তো একটা-দুটোর বেশি সুযোগ পাওয়া যাবে না। কিন্তু সেটাই কাজে লাগাতে হবে। ছেলেরা আমার কথা শুনেছে। ইরান প্রথমে গোল করলেও খেলা থেকে হারিয়ে যায়নি ওরা। প্রথমার্ধেই গাংতে সমতা ফেরায়। ড্রেসিংরুমে ফিরে ওদের সঙ্গে কথা বলি। খেলা শুরু হওয়ার সাত মিনিটের মধ্যেই গুনলেইবা ২-১ করে।’’

ড্রেসিংরুমে কী বলেছিলেন? বিবিয়ানো বলে চললেন, ‘‘জানতাম, দ্বিতীয়ার্ধে ইরান আরও চাপ বাড়াবে। ছেলেদের বলেছিলাম, আমাদের পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ওদের কোনও ফুটবলারকে ঢুকতে দেওয়া চলবে না। রক্ষণাত্মক খেললেও ছেলেদের উপরে বিশ্বাস ছিল, গোলের সুযোগ ঠিক তৈরি করবেই। ওরাসেটাই করেছে।’’

বিবিয়ানো শুধু অনূর্ধ্ব-১৭ ভারতীয় দলের কোচ নন, ফুটবলারদের অভিভাবকও। কোচিং করানোর চেয়ে কঠিন ছিল একঝাঁক খুদেকে সামলানো। হাসতে হাসতে বিবিয়ানো বলছিলেন, ‘‘প্রতিটি বাচ্চাই আলাদা। কারণ, ওরা প্রত্যেকেই ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি এবং পরিবার থেকে এসেছে। ফলে তাদের আচরণও আলাদা হবে। আমার প্রথম কাজ ছিল, ওদের মানসিকতা ভাল ভাবে বোঝা। কারণ, এদের মধ্যে অনেকেই খুব দুষ্টু ছিল। প্রথম দিকে কোনও কথাই শুনত না। কিন্তু অবাধ্য বলে আমি যদি কোনও ভাল ফুটবলারকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতাম, তা হলে ক্ষতি হত ভারতীয় দলেরই। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, আমাকে ওদের কাছের এক জন হয়ে উঠতে হবে। আস্থা অর্জন করতে হবে। তা হলেই সাফল্য পাওয়া সম্ভব হবে।’’

নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা মানে? বিবিয়ানোর গলা এ বার একটু কেঁপে উঠল। বললেন, ‘‘কলকাতা ময়দানে আমি কেন সফল হতে পারিনি, কারণগুলি খোঁজার চেষ্টা করেছি। আসলে সেই সময় আমি ভাবতাম, পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, আমাকে খেলতে হবে। অথচ নতুন ক্লাবে সব চেয়ে আগে প্রয়োজন কোচের আস্থা অর্জন করা। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিশ্রমও করতে হয়। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হয়। আমি, তা করিনি। জীবন আমাকে শিখিয়েছে কী ভাবে সফল হতে হয়। তাই কখনওই ছেলেদের কাছে আমি শুধুমাত্র কোচ হয়ে থাকতে চাইনি। ওদের অভিভাবক এবং বন্ধু হয়ে উঠতে চেয়েছি। কারণ, আমাদের পাখির চোখ এএফসি এশিয়ান কাপের শেষ আটে উঠে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের মূল পর্বে যোগ্যতা অর্জন করা।’’

আরও পড়ুন