Mohun Bagan Vs East Bengal Derby

বাগানে দীপাবলি, ডার্বি জয়ের হ‍্যাটট্রিক হল না ইস্টবেঙ্গলের, টাইব্রেকারে লাল-হলুদকে হারিয়ে ২২ বছর পর শিল্ড সবুজ-মেরুনের

চলতি মরসুমে প্রথম ডার্বি জিতল মোহনবাগান। যুবভারতীতে আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে পিছিয়ে পড়েও টাইব্রেকারে জিতল সবুজ-মেরুন। ট্রফি জেতা হল না ইস্টবেঙ্গলের।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৫ ২০:৫৬
football

আইএফএ শিল্ড নিয়ে মোহনবাগান ফুটবলারদের উল্লাস। সঙ্গে রাজ্যের দুই মন্ত্রী সুজিত বসু, অরূপ বিশ্বাস ও আইএফএ সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এক্স।

মোহনবাগান - ১ (আপুইয়া)
ইস্টবেঙ্গল - ১ (হামিদ)
টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে জয়ী মোহনবাগান।

Advertisement

আরও একটি ফাইনাল জিতল মোহনবাগান। আরও একটি ফাইনালে ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলকে হারাল তারা। চলতি মরসুমের প্রথম দু’টি ডার্বি হেরেছিল মোহনবাগান। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচ জিতে নিল তারা। যুবভারতীতে আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে পিছিয়ে পড়েও হাল ছাড়েনি মোহনবাগান। ইস্টবেঙ্গল এই ম্যাচে দুর্দান্ত লড়াই করেছে। বেশির ভাগ সময় দাপট দেখিয়েছে তারাই। কিন্তু কাজের কাজ করতে পারেননি লাল-হলুদ ফুটবলারেরা। গোল না করতে পারলে যে ম্যাচ জেতা যায় না তা আরও এক বার দেখা গেল। টাইব্রেকারে জিতে চলতি মরসুমে প্রথম বড় ট্রফি জিতল মোহনবাগান। ২২ বছর পর আবার আইএফএ শিল্ড জিতল বাগান।

১২০ মিনিটের লড়াইয়ে খেলার ফল ছিল ১-১। টাইব্রেকারে বাগানের জয়ের নায়ক সেই বিশাল কাইথ। ইস্টবেঙ্গলের নতুন ডিফেন্ডার জয় গুপ্তের শট বাঁচিয়ে দিলেন তিনি। মেহতাব সিংহের শট জালে জড়াতেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল সবুজ-মেরুন। যুবভারতীতে উল্লাস শুরু করে দিলেন সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা।

খেলার শুরুতে দুই দলই কিছুটা গুছিয়ে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করছিল। প্রথম ১০-১৫ মিনিটে ভাল খেলছিল মোহনবাগান। লিস্টন কোলাসো সুযোগও পেয়েছিলেন। কিন্তু লাল-হলুদ রক্ষণ ভাঙতে পারেননি। ১৫ মিনিটের পর থেকে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ায় ইস্টবেঙ্গল। এই ম্যাচে শুরু থেকে জেসন কামিংস ও জেমি ম্যাকলারেনকে নামিয়েছিলেন মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনা। কিন্তু কামিংস যত ক্ষণ মাঠে থাকলেন খারাপ খেললেন। ভাল জায়গা থেকে অন্তত তিনটি ফ্রি কিক পেয়েছিলেন তিনি। তিন বারই তাঁর ক্রস হতাশ করল। দেখা গেল না ম্যাকলারেনকেও। ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারেরা নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাসে আক্রমণে উঠছিলেন। তুলনায় বাগান ফুটবলারদের গতি ছিল খুব কম। প্রতি-আক্রমণে সুযোগ পেলেও তা নষ্ট করছিলেন কোলাসো, কামিংসেরা।

তার মাঝেই সুযোগ চলে আসে মোহনবাগানের সামনে। ৩৩ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে ম্যাকলারেনকে ফাউল করেন আনোয়ার আলি। রেফারি পেনাল্টি দেন। কিন্তু স্পট থেকে বল উড়িয়ে দেন কামিংস। ফুটবলে পেনাল্টির থেকে সহজ সুযোগ আসে না। কিন্তু কামিংস যে ভাবে বড়লোকের বখাটে ছেলের মতো বল উড়িয়ে দিলেন তা অবাক করল। সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হল মোহনবাগানকে। দু’মিনিট পরেই বক্সের বাইরে বল পান মহেশ নাওরেম সিংহ। অনেকটা দৌড়ে বক্সে ঢুকে ডিফেন্ডারকে ঘাড়ের উপর নিয়ে ক্রস বাড়ান তিনি। গোলরক্ষক বিশাল কাইথ ঝাঁপিয়েও তার নাগাল পাননি। বক্সে ঠিক জায়গায় ছিলেন হামিদ। পায়ের টোকায় গোল করেন তিনি।

গোল খাওয়ার পরেও বাগানের খেলার উন্নতি হয়নি। ফুটবলারদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব চোখে পড়ছিল। মোলিনার পরিকল্পনা নিয়েও প্রশ্ন উঠছিল। প্রথমার্ধে ব্যবধান আরও বাড়াতে পারত ইস্টবেঙ্গল। বক্সের বাইরে থেকে হামিদের বাঁ পায়ের বাঁক খাওয়ানো শট পোস্টে লেগে ফেরে। দেখে মনে হচ্ছিল, পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যেতে হবে মোহনবাগানকে। কিন্তু বিরতির ঠিক আগে সাহাল আব্দুল সামাদ একক দক্ষতায় বক্সে ঢোকেন। তিনি বল বাড়ান কোলাসোর দিকে। কোলাসো বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। বল যায় আপুইয়ার কাছে। বক্সে অরক্ষিত অবস্থায় ছিলেন তিনি। তাঁর জোরালো শট বারে লেগে গোললাইন অতিক্রম করে যায়। সমতা ফিরিয়ে বিরতিতে যায় মোহনবাগান।

দ্বিতীয়ার্ধে কামিংসকে আর মাঠে রাখতে পারেননি মোলিনা। তাঁর বদলে নামানো হয় রবসন রোবিনহোকে। দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই আক্রমণাত্মক খেলছিল। ফলে সুযোগ তৈরি হচ্ছিল। ৬৫ মিনিটের মাথায় একসঙ্গে তিনটি বদল করেন লাল-হলুদ কোচ অস্কার ব্রুজ়ো। নতুন বিদেশি হিরোশি ও মাঝমাঠে মিগুয়েলকে নামান তিনি। নামানো হয় জয় গুপ্তকেও। হিরোশি নেমে প্রথম টাচেই গোল করতে পারতেন। ভাল হেড করেন তিনি। তবে বাঁচিয়ে দেন বিশাল।

ম্যাচের নির্ধারিত সময়ে আর গোল হয়নি। তবে প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও শেষ মুহূর্তে গোল করতে পারত বাগান। রবসনের ফ্রি কিক থেকে হেড করেন মেহতাব। ভাল বাঁচান প্রভসুখন সেই। সেটাই নির্ধারিত সময়ের শেষ টাচ ছিল। ফল ১-১ থাকায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়ে দু’দলের খেলা দেখে বোঝা যাচ্ছিল, খুব একটা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না তাঁরা। যেন টাইব্রেকারেই ম্যাচ জেতার লক্ষ্য নিয়েছেন দুই কোচ। তবে তার মাঝেই কয়েক বার সুযোগ তৈরি করে দু’দল। বিশেষ করে মোহনবাগান। সাহালের ক্রস কাজে লাগাতে পারেননি ম্যাকলারেন। গোটা ম্যাচে হতাশ করলেন বাগানের এই বিদেশিও। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধেও দু’বার বক্সের মধ্যে সুযোগ পান পরিবর্ত হিসাবে নামা দিমিত্র পেত্রাতোস। নায়ক হওয়ার সুযোগ ছিল তাঁর। কিন্তু তিনিও গোল করতে পারেননি। ফলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।

টাইব্রেকারের আগে প্রভসুখনকে তুলে বাঙালি দেবজিৎ মজুমদারকে নামান লাল-হলুদ কোচ। তিনি ভেবেছিলেন দেবজিতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। তিনি চেষ্টাও করেন। কিন্তু একটি গোলও বাঁচাতে পারেননি। অন্য দিকে জয়ের শট বাঁচিয়ে দেন বিশাল। ম্যাচ জেতে মোহনবাগান।

Advertisement
আরও পড়ুন