Mohun Bagan Election

মোহন-ঐতিহ্যের দখল নিতে চায় দু’পক্ষই, বাগানের ভোটে তরজা শুরু শ্যামপুকুরের সেনবাড়ি নিয়ে

সবুজ-মেরুনের স্মৃতিবিজড়িত সেনবাড়িতে ক্লাবের দফতর করার ইচ্ছা নির্বাচনে যুযুধান দুই পক্ষেরই। সেই নিয়েই শাসক ও বিরোধী গোষ্ঠীর তরজা তুঙ্গে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৫ ১৩:২৮
Sen Bari at Shyampukur. Mohun Bagan Secretary Debasish Dutta, Srinjoy Bose.

ভেঙে ফেলা হয়েছে শ্যামপুকুরের সেনবাড়ি। মোহনবাগান নির্বাচনে যুযুধান দেবাশিস দত্ত (বাঁ দিকে) এবং সৃঞ্জয় বসু (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহিত

মোহনবাগানের নির্বাচন ঘিরে দু’পক্ষের তরজা রোজ বাড়ছে। বাদ গেল না উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যশালী সেনবাড়িও। সবুজ-মেরুনের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত এই বাড়িতে ক্লাবের দফতর করার ইচ্ছা নির্বাচনে যুযুধান দুই পক্ষেরই। সেই নিয়েই শাসক ও বিরোধী গোষ্ঠীর তরজা তুঙ্গে।

Advertisement

মঙ্গলবার বাগবাজারের একটি প্রচারসভায় বর্তমান সচিব শাসক গোষ্ঠীর দেবাশিস দত্ত বলেন, তাঁরা সেনবাড়ির একতলায় মোহনবাগান ক্লাবের একটি দফতর করবেন। এই নিয়ে বিরোধী গোষ্ঠীর সৃঞ্জয় বসু দাবি করলেন, এই উদ্যোগ তাঁরা বেশ কয়েক মাস আগেই নিয়েছিলেন। কিন্তু আইনি জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। সৃঞ্জয়ের বক্তব্য, একই কারণে দেবাশিসের পক্ষেও এই কাজ করা সম্ভব নয়।

Plaque at Senbari carries history of Mohun Bagan

সেনবাড়ির ফলকে মোহনবাগানের ইতিহাস। ছবি: সংগৃহীত

ঘটনা হল, শ্যামপুকুরের ৪৪ নম্বর রামকান্ত বোস স্ট্রিটের সেনবাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এই বাড়িতেই ছিল মোহনবাগানের আদি দফতর। কিন্তু প্রায় দু’বিঘা জমির উপর এই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের যে বিপুল খরচ, তা সেনপরিবারের বর্তমান সদস্যেরা বহন করতে অপারগ। ফলে এই বাড়ি বিক্রি করে আবাসন তৈরি হবে। নতুন আবাসনে মোহনবাগানের দফতর করতে চেয়ে আবেদন করেছে বর্তমান ক্লাবের শাসক গোষ্ঠী। বিরোধী গোষ্ঠীর দাবি, তারা অনেক আগেই এই আবেদন করেছে।

বাগবাজারের সভায় মঙ্গলবার দেবাশিস বলেন, ‘‘সেনবাড়িতে প্রোমোটিং হচ্ছে। আমরা প্রোমোটারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, নতুন আবাসন তৈরি হয়ে যাওয়ার পর মোহনবাগান ক্লাব ২০০ স্কোয়্যার ফুট জায়গা কিনবে। আমরা একতলায় এই জায়গা চেয়েছি। বাড়ির সামনের দিকে জায়গা দেওয়ার জন্য বলেছি। রুইয়ারা এই প্রোমোটিংয়ের কাজ করছেন। তাঁদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কথাবার্তায় তাঁরা সব মেনে নিয়েছেন। এ বার আইনি কাগজপত্র তৈরি হবে।’’ ওই সভায় তিনি আরও জানান, ‘‘আমরা ঠিক করেছি, উত্তর কলকাতায় মোহনবাগানের যে সদস্যেরা আছেন তাঁরা এই নতুন দফতর থেকেই তাঁদের সদস্যকার্ড নবীকরণ করাতে পারবেন। এর জন্য তাঁদের ক্লাবে যেতে হবে না। এতে এই বাড়ির সঙ্গে মোহনবাগানের স্মৃতিটা থেকে যাবে। আমরা রুইয়াদের এটাও বলব, নতুন আবাসনের নাম যাতে ‘মোহনবাগান বাড়ি’ করা যায়।’’

srinjoy

সৃঞ্জয় বসুকে দেওয়া প্রোমোটারি সংস্থা স্বস্তিক প্রোজেক্টস লিমিটেডের চিঠি। ছবি: সংগৃহীত।

এই নিয়ে আন্দবাজার ডট কমকে সৃঞ্জয় পাল্টা বললেন, ‘‘আমি মাস দুয়েক আগেই এই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ওখানে মোহনবাগানের একটা মিউজ়িয়াম করার কথা ভেবেছিলাম। বিবেক রুইয়ার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। কিন্তু ওঁরা আমাকে বলেছিলেন, একতলায় জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, সেটা একমাত্র গাড়ি রাখার জায়গা হিসেবেই ব্যবহার করা যাবে। অন্য কোনও কাজে লাগানো যাবে না। উপরের বাকি তলাগুলো শুধুই থাকার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। ফলে আইনি কারণে ওখানে মোহনবাগানের দফতর বা মিউজিয়াম করা সম্ভব নয়। যেহেতু আমি আগেই এটা জেনেছিলাম, তাই এই নিয়ে আর কথা বলিনি। আমি কোনও মিথ্যা বা সস্তা প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না।’’

প্রোমোটারি সংস্থা স্বস্তিক প্রোজেক্টস লিমিটেডের কর্ণধার বিবেক রুইয়া বিদেশে। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। সংস্থার সিইও উদয় জালান আনন্দবাজার ডট কম-কে বললেন, ‘‘২০ মে মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্তের চিঠি আমরা পাই। ওঁরা জানান, নতুন আবাসনের এক তলায় জায়গা কিনতে চান। কিন্তু গতকাল (২১ মে) ইমেল মারফৎ আমরা ওঁদের জানিয়ে দিয়েছি, এটা সম্ভব নয়। সৃঞ্জয়বাবুকে যেমন জানানো হয়েছিল যে, একতলাটা পুরোটাই গাড়ি রাখার জন্য এবং বাকি তলাগুলো শুধু বসবাসের জন্য, দেবাশিসবাবুকেও একই কথা জানানো হয়েছে। এটা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।’’

মোহনবাগানের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই সেনবাড়ি। এই বাড়িতেই আগে মোহনবাগানের মূল দফতর ছিল। এখানে গোষ্ঠ পাল, শৈলেন মান্না, চুনী গোস্বামীর মতো ফুটবলারেরা দিনের পর দিন এসেছেন। সেনবাড়ির তৎকালীন সদস্যদের সঙ্গে আড্ডা মেরেছেন। জুন মাসে নির্বাচন ঘিরে দুই পক্ষই চাইছে, সেনবাড়ির মোহনবাগানি আবেগ ধরে রাখতে। সেটা আদৌ সম্ভব কি না তা সময়ই বলবে।

Advertisement
আরও পড়ুন