Himachal Travel

পাহাড় থেকে নেমে আসছে সফেন ঝর্না, হিমাচল প্রদেশকে চিনুন অন্য রূপেও, কী ভাবে সফর সাজাবেন?

বরফাবৃত উপত্যকা, পাইন, পাহাড়ের সৌন্দর্য শুধু নয়, হিমাচল প্রদেশের জলপ্রপাতের আকর্ষণও কিছু কম নয়। এ রাজ্যের নানা প্রান্তে অজস্র ঝর্না, ঝোরা, জলপ্রপাত রয়েছে। তারই মধ্যে তিনটির হদিস জেনে নিন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৫ ১১:৪৭
সিসু জলপ্রপাত।

সিসু জলপ্রপাত। ছবি: সংগৃহীত।

বরফাবৃত পাহাড় চূড়া, বিস্তীর্ণ উপত্যকা, পাইন, ফারের সমারোহ। পর্যটক মহলে হিমাচল প্রদেশের ছবিটি ঠিক এমনই। এ এমন এক রাজ্য— যা সবটুকু নিয়েই সুন্দর। শিমলা, কুলু, মানালি হিমাচল প্রদেশের অত্যন্ত পরিচিত তিন জনপদ। ইদানীং অবশ্য কাজা, নাকো, টাবো, চন্দ্রতাল হ্রদ, কিবের, সিসু— এমন অনেক জায়গা নিয়ে পর্যটক মহলে উৎসাহ বাড়ছে। অনেকেই হিমাচল উপভোগ করছেন ট্রেকিং করে। শুধু পার্বত্য সৌন্দর্য বা অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের আকর্ষণ নয়, হিমাচল প্রদেশ ঘোরা যায়, এখানকার জলপ্রপাতগুলির জন্যই। এ রাজ্যে এমন অনেক ঝর্না বা জলপ্রপাত রয়েছে যেখানে পৌঁছতে হয় পদব্রজে বা হাইকিং করে। জেনে নিন, এমন কোন তিন জলপ্রপাত আপানার আগামী সফরের অংশ হতে পারে?

Advertisement
সাতধারা জলপ্রপাত।

সাতধারা জলপ্রপাত। ছবি: সংগৃহীত।

সাতধারা জলপ্রপাত: হিমাচল প্রদেশের ডালহৌসির কাছেই ঘন বনানীর মধ্যে রয়েছে সাতধারা জলপ্রাত। ২০৩৬ মিটার উচ্চতা থেকে নেমে আসছে জলের সাতটি ধারা। মনে করা হয়, সাত প্রস্রবণ থেকেই জলপ্রপাতের এমন নামকরণ। বর্ষায় পাহাড়ের উপর থেকে নেমে আসা দুধসাদা জলধারার সশব্দ পতন এবং সৌন্দর্য বিস্ময় জাগায়। তবে বর্ষায় ধসের বিপদ এড়াতে চাইলে যেতে পারেন সেপ্টেম্বর পার করেও। এই সময়েও সাতধারা জলে পরিপূর্ণই থাকবে।

ডালহৌসির জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পঞ্চপুলার পথে পড়ে সাতধারা জলপ্রপাত। স্থানীয় লোকজন মনে করেন, এই জলে রয়েছে অভ্রের মতো বেশ কিছু খনিজ। যা ত্বকের অসুখ সারিয়ে তুলতে পারে বলে ধারণা। সাতধারার আশপাশে ঘোরার মতো একাধিক জায়গা রয়েছে। ডালহৌসি থেকে দেখা যায় বরফঢাকা পাহাড়। কাছেপিঠেই ঘন রয়েছে বনানী। সাতধারার কাছাকাছি গাড়িও যায়। তবে হেঁটে জলপ্রপাতের কাছে পৌঁছলে প্রকৃতিকে আরও নিবিড় ভাবে উপভোগের সুযোগ মিলবে। ডালহৌসির আশপাশে ঘোরার একাধিক জায়গা রয়েছে। কালাটপ অভয়ারণ্য, বিজিস পার্ক, ডেনকুণ্ড শৃঙ্গ-সহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে নিতে পারেন, ট্রেক করতে পারেন। মোটামুটি ৩-৪ দিনে ভাল ভাবেই ডালহৌসির আশপাশ ঘোরা যাবে।

শিমলা থেকে ডালহৌসির দূরত্ব সড়কপথে ৩৪৫ কিলোমিটার। দিল্লি থেকে দূরত্ব ৫৫৯ কিলোমিটার। পাঠানকোট রেল স্টেশন থেকে ডালহৌসির দূরত্ব ৮৬ কিলোমিটার। ডালহৌসির সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর রয়েছে কাংড়া উপত্যকায়। দূরত্ব প্রায় ১১০ কিলোমিটার।

যোগিনী জলপ্রপাত।

যোগিনী জলপ্রপাত। ছবি: সংগৃহীত।

যোগিনী জলপ্রপাত: মানালির অদূরে বশিষ্ঠ গ্রামে রয়েছে যোগিনী জলপ্রপাত। এখানে যেতে গেলে ট্রেকিংই ভরসা। পথ খুব মসৃণ নয়। মোটামুটি ২ কিলোমিটার চড়াই, উতরাই পেরিয়ে পৌঁছনো যায় যোগিনী জলপ্রপাতে। বিপাশার সৌন্দর্য, তুষারাবৃত পাহাড়চূড়া এই পথে সঙ্গ দেয়। জুলাই, অগস্ট বাদ দিয়ে সারা বছরই সেখানে যাওয়া যায়। বর্ষার শেষে গেলে জলপ্রপাতের উচ্ছ্বল রূপ প্রত্যক্ষ করার সুযোগ থাকে। কাছেই রয়েছে বশিষ্ট মন্দির, যোগিনী মাতার মন্দির। অনেকে বলেন, যোগিনী মাতার নাম থেকেই জলপ্রপাতের এমন নামকরণ।

মানালির সবচেয়ে কাছে রয়েছে ভুনটার বিমানবন্দর। কালকা থেকে শিমলার টয়ট্রেনও আছে। শিমলা থেকে মানালির দূরত্ব প্রায় ২৩৫ কিলোমিটার। এই পথ গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারেন। বাসেও যাওয়া যায়।

মানালি থেকে হিড়িম্বা মন্দির, রোহতাং পাস, সোলাং ভ্যালি, মনু টেম্পল, মিউজ়িয়াম-সহ একাধিক জায়গা ঘুরে নেওয়া যায়। মানালির আশপাশে কিছু কিছু স্বল্পচেনা গ্রামও আছে। ৪-৫ দিনে মানালি ঘোরা যায়। তবে জায়গাটি খুব ভাল ভাবে ঘুরতে চাইলে দিন বাড়াতে হবে।

সিসু জলপ্রপাত

হিমাচলের লাহুলে অবস্থিত সিসু গ্রামটি ছবির মতো সুন্দর। হাইকিং বা ট্রেকিংয়ে আপত্তি না থাকলে সিসু থেকে পাহাড়ি পথে ট্রেক করে চলুন সিসু জলপ্রপাত দেখতে। হিমবাহ গলে তার সৃষ্টি। অটল টানেল থেকে সিসু গ্রামে পর্যটক যাতায়াত বেড়েছে গত কয়েক বছরে। মার্চ-এপ্রিলের শুরুতে বরফ মেলে এই জায়গায়। সিসুর সৌন্দর্য সুইৎজ়ারল্যান্ডের সমতুল্য, বলেন অনেকে। সিসু গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে চন্দ্র নদী। এই নদী সিসু থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে তান্ডিতে কেলং থেকে আসা ভাগা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে চন্দ্রভাগা নাম নিয়ে বয়ে গিয়েছে কাশ্মীরের দিকে। সিসুর অন্যতম দ্রষ্টব্য চন্দ্র আর ভাগার সঙ্গম।

সিসু হিমাচল প্রদেশের লাহুলে অবস্থিত। এখান থেকে কাজা, কি মনাস্ট্রি, চন্দ্রতাল বিভিন্ন জায়গা ঘুরে নিতে পারেন।

মানালি থেকে সিসুর দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। ব্যক্তিগত গাড়িতেই সেখানে যেতে পারেন। না হলে কেলং যাওয়ার বাসও ধরতে পারেন। ট্রেনে বা বিমানে দিল্লি অথবা চণ্ডীগড় এসে বাসেও মানালি আসা যায়।

Advertisement
আরও পড়ুন