সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে! বাংলাদেশের ঘটনায় আক্ষেপ চিরঞ্জিতের, প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পাক, বললেন কোয়েল

বাংলাদেশে শান্তিকামী মানুষের উপরে বার বার আঘাত। বিষয়টি ভাবাচ্ছে ভারতকেও। “পড়শি ভাল না থাকলে আমরা ভাল থাকি কী করে?” প্রশ্ন টলিউডের।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৫
ভাল নেই বাংলাদেশ। মনখারাপ টলিউডের।

ভাল নেই বাংলাদেশ। মনখারাপ টলিউডের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

পড়শি যদি ভাল না থাকে, কী করে ভাল থাকা যায়? উত্তাল বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠতেই আনন্দবাজার ডট কম-এর কাছে আক্ষেপ কল্লোলিনীর অভিনেতা-অভিনেত্রীদের। রঙ্গমঞ্চ থেকে রুপোলি পর্দা— সর্বত্রই মনখারাপের ছায়া।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে প্রত্যেকের অনুরোধ, ধ্বংস নয়, সমৃদ্ধ হোক সে দেশের শিল্প-সংস্কৃতি।

সে দেশের ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির মৃত্যুর পর ফের নতুন করে উত্তাল বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হিংসা ছড়িয়েছে। ভাঙচুর চালানো হয়েছে একাধিক সংবাদপত্রের দফতরে। বিক্ষোভকারীদের আগ্রাসন থেকে রেহাই পায়নি দেশের ঐতিহ্যমণ্ডিত সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ছায়ানট’।

এ পারে পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী প্রমিতা মল্লিক যেমন বলেছেন, “প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যা ঘটল তা এক কথায় দানবিক, উন্মত্ত গুন্ডাগিরি।” একই ভাবে এই অঘটনের প্রতিবাদ জানানোর ভাষাও তাঁর জানা নেই। গায়িকার আফসোস, “যে গান ব্যাধি কমাতে ব্যবহৃত হয় সেই সঙ্গীত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এর চেয়ে ঘৃণ্য ঘটনা আর কী হতে পারে! প্রতি মুহূর্তে ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি, ধিক্কার জানাচ্ছি।”

একই আক্ষেপ শোনা গেল বর্ষীয়ান অভিনেতা চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীর কথাতেও। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় তৈরি ‘বেদের মেয়ে জোস্‌না’র নায়ক তিনি। ও পার বাংলায় শুটিং না করলেও তিনি বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির অনুরাগী। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বললেন, “বাংলাদেশ শিল্প-সংস্কৃতিতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সেই সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যা কিছু ভাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গন— সব পু়ড়িয়ে নষ্ট করে ফেলছে। জানি না, এর শেষ কোথায়! বার বার অকারণে বিনোদনদুনিয়ার উপরে আঘাত নেমে আসছে, যা একেবারেই কাম্য নয়।” বর্ষীয়ান অভিনেতার মতে, “নিজের দেশকে ধ্বংস করার পাশাপাশি ভারত-বিরোধী বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। এতে দুই দেশের সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ব্যাহত হবে।”

গত বছরের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ক্ষত এখনও টাটকা সে দেশে। দীর্ঘ সময় ধরে দুই দেশের নানা বিষয়ে আদানপ্রদান বন্ধ ছিল। ভিসা না পেয়ে দুই দেশের অভিনেতারা শুটিংয়ে যোগ দিতে পারছিলেন না। ক্রমে সেই ভয় মুছে যখন স্বাভাবিক হচ্ছিল বাংলাদেশ, চলছিল সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতিপর্ব। তখনই ফের আঘাত!

কোয়েল মল্লিক মানতে পারছেন না, বছরশেষে উত্তাল এই বাংলাদেশকে। তাঁর কথায়, “সব ধরনের হিংসার ঊর্ধ্বে বিনোদনদুনিয়া। সেখানেও মৌলবাদ ছায়া ফেললে এর থেকে দুঃখের আর কিছুই হতে পারে না।” বড়দিনে মুক্তি পেতে চলেছে নায়িকার ‘মিতিন মাসি’র নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি। মহিলা গোয়েন্দার হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়া হলে তিনি কী করতেন? “সকলের আগে প্রকৃত খুনিকে ধরে তাকে শান্তি দিতেন মিতিন। প্রাণ বাঁচাতেন নিরপরাধ মানুষের”, দাবি কোয়েলের।

বাংলাদেশ শান্ত হোক, আর্জি ঊষসী চক্রবর্তী, অবন্তী চক্রবর্তীর।

বাংলাদেশ শান্ত হোক, আর্জি ঊষসী চক্রবর্তী, অবন্তী চক্রবর্তীর। ছবি: ফেসবুক।

বাংলাদেশের ধ্বংসাত্মক রূপ সুখস্মৃতি মনে করাচ্ছে নাট্যকার অবন্তী চক্রবর্তীকে। “কত নাটক ও পার বাংলায় গিয়ে মঞ্চস্থ করেছি! আমার বাংলাদেশের অভিনেতা বন্ধুরা সেই নাটক দল বেঁধে দেখতে গিয়েছেন। কখনও এ পার বাংলায় এসেছেন নাটক মঞ্চস্থ করতে। সে সব দিন আর কি ফিরে আসবে?” নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করেছেন তিনি। তিনিও বিশ্বাস করেন, সকলের উপরে মানুষ, মানবিকতা সত্য। অবন্তীও আবেদন জানিয়েছেন, হিংসা ভুলে শান্ত হোক ও পার বাংলা।

কেন বারবারা আঘাত নেমে আসবে বিনোদনদুনিয়ায়? প্রশ্নে বিক্রম চট্টোপাধ্যায়, রূপাঞ্জনা মিত্র।

কেন বারবারা আঘাত নেমে আসবে বিনোদনদুনিয়ায়? প্রশ্নে বিক্রম চট্টোপাধ্যায়, রূপাঞ্জনা মিত্র। ছবি: ফেসবুক।

প্রায় একই কথা বলেছেন ঊষসী চক্রবর্তী, বিক্রম চট্টোপাধ্যায়, রূপাঞ্জনা মিত্রেরা। ঊষসীর মতে, বাংলাদেশের সবুজ-শ্যামল রূপটাই দেখতে ভালবাসেন তিনি। দুই বাংলার সৌভ্রাতৃত্বের কথা মনে পড়ে তাঁর। এই হানাহানি শান্তি ফেরাতে পারে না। অভিনেত্রী তাই শান্ত থাকার আর্জি জানিয়েছেন সবাইকে। বিক্রম যেমন সাফ লিখেছেন, “বাংলাদেশে যা ঘটছে তা লজ্জাজনক এবং হৃদয়বিদারক। তারা যে পরিমাণ ঘৃণা দেখাচ্ছে, তা বিশ্বাস করা যায় না। এই পৃথিবীতে সবার আগে মানবতা। আমি সব সময় এটাই বিশ্বাস করব। আর এই পৃথিবীর কোনও দেশে যদি কেউ ধর্মের নামে ঘৃণা ছড়ায়, মানুষকে হত্যা করে, তবে সে মানুষ নয়।” রূপাঞ্জনাকেও স্তব্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশে ঘটে চলা ঘটনাক্রম। তাঁর লেখনীতে, “বাংলাদেশে এখন যা ঘটছে তা লজ্জাজনক এবং হৃদয়বিদারক। ধর্মের নামে যে ভাঙচুর, ঘৃণা ও সহিংসতা চালানো হচ্ছে, তা অমানবিক। মানবতা সব সময়ই ধর্মের ঊর্ধ্বে হওয়া উচিত।”

Advertisement
আরও পড়ুন