Updates Of Bangladesh Anarchy After Osman Hadis Death

‘সন্‌জীদাদিও এই আক্রমণ ঠেকাতে পারতেন না!’ আবার ঘুরে দাঁড়াবে ‘ছায়ানট’, আশা প্রমিতার

অনেক খারাপ সময় দেখেছে বাংলাদেশের এই সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান। তার পরেও ফিরে দাঁড়িয়েছে। এ বারেও পারবে, আশা এ শহরের গায়িকার।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:০৫
প্রমিতা মল্লিকের ‘ছায়ানট’ নিয়ে স্মৃতিচারণ।

প্রমিতা মল্লিকের ‘ছায়ানট’ নিয়ে স্মৃতিচারণ। ছবি: সংগৃহীত।

‘ছায়ানট’ নিয়ে কলকাতার শিল্প-সংস্কৃতির আঙিনার ব্যক্তিত্বদের আবেগ অনস্বীকার্য। যেমন, প্রমিতা মল্লিক। খ্যাতনামী রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়িকা বাংলাদেশে গিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে গান শুনিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের উপরে হামলার ঘটনায় তিনিও আহত, স্তব্ধ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করতেই স্মৃতি উজাড় করলেন প্রমিতা। তাঁর কথায়, “শুধুই নজরুলগীতি বা রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখানো বা পরিবেশন করা নয়, নিখুঁত ভাবে গান তোলানোর অন্যতম প্রতিষ্ঠান ‘ছায়ানট’।” প্রমিতা মনে করেন, বাংলা এবং বাঙালির সংস্কৃতি যত্নে আগলে রাখাই যেন এই প্রতিষ্ঠানের ব্রত। সেই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্ণধার প্রয়াত সন্‌জীদা খাতুন, লালন ফকিরের মতো ব্যক্তিত্বের ছবি ছিঁড়ে ফেলেছে আক্রমণকারীরা। পুড়িয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানের বাদ্যযন্ত্র। তছনছ এত দিনের সংরক্ষণ। যেন বাংলার যা কিছু, তারই ধ্বংসসাধনের চেষ্টা!

প্রমিতা নিজে প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছেন একাধিক বার। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সন‌্‌জীদা খাতুনের সঙ্গে হৃদ্যতা ছিল তাঁর। সন‌্‌জীদা বেঁচে থাকলে কি এই ঘটনা ঘটতে পারত? প্রশ্ন ছিল প্রমিতার কাছে। তাঁর সাফ কথা, “প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যা ঘটল তা এক কথায় দানবিক, উন্মত্ত গুন্ডাগিরি। এই আক্রমণ ঠেকানোর ক্ষমতা সন্‌জীদাদিরও নেই। একমাত্র অস্ত্রই এই আক্রমণ ঠেকাতে পারে। সেটা সন্‌জীদাদি পারতেন না বা করতে চাইতেনও না।” একই ভাবে এই অঘটনের প্রতিবাদ জানানোর ভাষাও তাঁর জানা নেই। গায়িকার আফসোস, “যে গান ব্যাধি কমাতে ব্যবহৃত হয় সেই সঙ্গীত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এর চেয়ে ঘৃণ্য ঘটনা আর কী হতে পারে! প্রতি মুহূর্তে ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি, ধিক্কার জানাচ্ছি।”

প্রমিতা বলেছেন, “‘ছায়ানট’ অনেক উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। অনেক খারাপ সময় দেখেছে। বিশেষ করে, ১৯৭১ সালের কথা মনে পড়ছে। ‘ভাষা আন্দোলন’-এর অন্যতম হোতা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে, অনেক লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি নিজের জায়গা তৈরি করেছে।”

তবু প্রমিতা আশাবাদী। এমন খারাপ সময়ের মধ্যেও ইতিবাচক দিক খোঁজার চেষ্টা করছেন তিনি। ‘মানুষের উপর থেকে বিশ্বাস হারানো পাপ’— রবীন্দ্রনাথের এই বাণীতে বিশ্বাস গায়িকার। সেই উপলব্ধি এখনও অটুট তাঁর।

তাই বাহ্যিক দিক থেকে যতই আঘাত আসুক, প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকের মনে ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য জেদ বছরের পর বছর ধরে বজায় রয়েছে। এমনই মনে করেন প্রমিতা। অনেক দূর থেকেও সেই শক্তি, আত্মিক যোগ অনুভব করতে পারছেন তিনি। তাঁর বিশ্বাস, সংস্কৃতির সেই জোর, সেই শক্তিকে সাময়িক থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। চিরকালের মতো থামিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।

গায়িকা স্বপ্ন দেখছেন, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এগিয়ে আসবেন ‘ছায়ানট’-এর ঐতিহ্য রক্ষায়। ছাই সরিয়ে যে ভাবে ফিনিক্স পাখি ডানা ঝাপটে ওঠে, সে ভাবেই ঘুরে দাঁড়াবে এই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য মেনে আরও এক বার সংরক্ষিত হবে বাংলা ও বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতি।

Advertisement
আরও পড়ুন