Osman Hadi Burial Row

নজরুলের সমাধি থাকবে তো? পাশেই হাদিকে সমাধিস্থ করার পর আশঙ্কিত কাজী পরিবার! তাণ্ডব শেষ হওয়া নিয়েও সংশয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নজরুলের সমাধির পাশাপাশি, যেখানে একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রথিতযশা শিক্ষকের সমাধি রয়েছে, সেখানেই হাদিকে সমাধিস্থ করা কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। হাদির সমাধিকে ঘিরে নতুন করে অশান্তির আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না নিরাপত্তা আধিকারিকেরা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:৩৪
BLO Suffers

কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে কবরস্থ করা হয়েছে ওসমান হাদিকে। ছবি: সংগৃহীত।

প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে। তা-ই নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নজরুলের পরিবারও। তারা নিশানা করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে। শনিবার পশ্চিম বর্ধমানের চুরুলিয়ায় কবির জন্মভূমিতে বসে তাঁর পরিবারের সদস্যদের আশঙ্কা, এর পর বাংলাদেশের জাতীয় কবির সমাধির উপর আক্রমণ হবে না তো!

Advertisement

বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, শুক্রবার গভীর রাতে জরুরি বৈঠকের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, নজরুলের সমাধির পাশে সমাধিস্থ করা হবে হাদিকে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। শনিবার দুপুর ৩টে নাগাদ তাঁর দেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজী নজরুলের সমাধি চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়। ফ্রিজ়ার ভ্যান থেকে বার করা হয় দেহ। কবরস্থ করা হয় ৪টে নাগাদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান সে দেশের সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘শহিদ শরিফ ওসমান হাদি ইতিহাসের অংশ হয়ে গিয়েছেন। দেশের জন্য তাঁর যে ত্যাগ, আল্লা তাআলা কবুল করুন।’’

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নজরুলের সমাধির পাশাপাশি যেখানে একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রথিতযশা শিক্ষকের সমাধি রয়েছে, সেখানেই হাদিকে সমাধিস্থ করা কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। হাদির সমাধিকে ঘিরে নতুন করে অশান্তির আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না নিরাপত্তা আধিকারিকেরা। কেন নজরুলের সমাধির পাশে হাদিকে সমাধিস্থ করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কবির পরিবার।

নজরুলের পরিবারের সদস্য সোনালি কাজী এবং স্বরূপ কাজীর বক্তব্য, যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা অনৈতিক। নিয়ম মতো ওই স্থানে বিশেষ কয়েক জনকে সমাধিস্থ করা হয়। এত জায়গা থাকতে নজরুলের সমাধির পাশে হাদিকে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রাজনীতি রয়েছে। সোনালি বলেন, ‘‘আমাদের প্রাণের কবি বাংলাদেশে শেষ জীবন কাটিয়েছেন। এত দিন বাংলাদেশে আমরাও (পরিবারের অন্যেরা) ভাল ছিলাম। কিন্তু এখন যা হচ্ছে...।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ওই কবরস্থানে সকলকে সমাধিস্থ করা হয় না। কিন্তু ছায়ানট ভাঙচুর করা, রবীন্দনাথের বই পুড়িয়ে দেওয়া বাংলাদেশিদের উগ্রবাদীরা হাদিকে সমাধিস্থ করলেন কবির সমাধির পাশে! এটা হল কেন? নজরুল যেখানে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে গিয়েছেন, জাতের নামে বজ্জাতির কথা বলেছেন, তখন তাঁর সমাধির পাশে এমন এক জনকে সমাধিস্থ করা হল সরকারেরই নির্দেশে!’’ তাঁর আশঙ্কা, আগামিদিনে হয়তো কবির সমাধিও ওখানে থাকবে না। তিনি বলেন, ‘‘পৃথিবীতে ভাল মানুষের জায়গা কি হারিয়ে যাচ্ছে? রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে কি পরবর্তী প্রজন্ম অস্বীকার করবে? আমাদের আর্জি, নজরুলকে যেন অসম্মান করা না-হয়। তবে এই সরকারের (বাংলাদেশের অন্তর্বতী সরকার) দায়বদ্ধতা নেই। আমরা ভীষণ মনোকষ্টে রয়েছি। আমরা মর্মাহত।’’

কবির পরিবারের আর এক সদস্য স্বরূপ জানান, ১৯৭৬ সালে বিদ্রোহী কবি নজরুলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। সেখানে আততায়ীদের গুলিতে নিহত কট্টরপন্থী নেতাকে কোন যুক্তিকে কবর দেওয়া হয়, তাঁর মাথায় ঢুকছে না।

গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হন হাদি। প্রথমে তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি উদ্যোগে হাদিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সিঙ্গাপুরে। গত বৃহস্পতিবার রাতে সেখানেই মৃত্যু হয় বছর ৩২-এর যুবকের।

হাদির মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজনা ছড়ায় বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায়। ‘সংগঠিত জনরোষে’ ছারখার হয়ে যায় বাংলাদেশের একাধিক সরকারি ভবন, শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের কার্যালয়। রেহাই পায়নি সংবাদমাধ্যমও। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের আবেদন উড়িয়ে রাতভর হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। দেশের প্রথম সারির দুই সংবাদপত্র প্রথম আলো এবং ডেলি স্টার-এর দফতরে ঢুকে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঙা হয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংস্কৃতিকেন্দ্র ছায়ানট ভবন, উদীচীর কার্যালয়। অন্য দিকে, হাদির স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশে।

Advertisement
আরও পড়ুন