Durga Puja Travel 2025

পুজোর ছুটিতে চাই একটু নির্জনতার খোঁজ? গন্তব্য হোক বাংলা, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের তিন চেনা-অচেনা ঠিকানা

পুজোর ছুটিতে সফরের জন্য ট্রেন, বাস, বিমানের টিকিট কাটা হয়নি? বেড়ানোর সঙ্গী হতে পারে চারচাকাই। আনন্দবাজার ডট কম-এ থাকছে সড়কপথে ভ্রমণের চেনা-অচেনা গন্তব্যের হদিস।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:০৩
পুজোর ছুটিতে গাড়ি করেই যেতে পারেন, কাছে-দূরের তিন ঠিকানা জেনে নিন।

পুজোর ছুটিতে গাড়ি করেই যেতে পারেন, কাছে-দূরের তিন ঠিকানা জেনে নিন। ছবি: সংগৃহীত।

পুজো মানে কারও কাছে যেমন প্যান্ডেল হপিং, জমিয়ে খাওয়া, মনের মতো সাজগোজ, ঢাকের বোল, কারও কাছে আবার দুর্গার মর্ত্যে আগমন মানেই ছুটির অপেক্ষা। বেরিয়ে পড়া কোনও না কোনও গন্তব্যে। লম্বা যাত্রাপথ, হইহই করতে করতে যাওয়া, কোনও এক নির্জন স্থানে গিয়ে দু’দিন জিরিয়ে নেওয়ার মধ্যেই পুজো উপভোগের রসদ খুঁজে পান কেউ কেউ। আপনি যদি সেই দ্বিতীয় পথের পথিক হন, তা হলে তো ভাবতেই হবে ছুটিতে কোথায় যাবেন? সফরের আনন্দ উপভোগ করতে চারচাকায় সওয়ার হয়ে ঘুরে নিতে পারেন কলকাতা থেকে খুব দূরে নয়, এমন তিন ঠিকানার খোঁজ রইল এখানে।

Advertisement

ভঞ্জনগর

ভঞ্জনগর জলাধার, দেখা যায় পাহাড়।

ভঞ্জনগর জলাধার, দেখা যায় পাহাড়। ছবি: সংগৃহীত।

দু’টি দিন প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে চাইলে চলুন ওড়িশার ভঞ্জনগরে। পাহাড়ঘেরা জলাধারকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে ওড়িশা সরকারের নেচার ক্যাম্প। এখান থেকেই ঘুরে নেওয়া যায় ভেটনাইও। কৃষ্ণসার মৃগের দর্শন পাওয়া যায় সেখানে। ভঞ্জনগর থেকে রয়েছে জঙ্গল সাফারির ব্যবস্থাও। অ্যাডভেঞ্চারের শখ থাকলে অবশ্য ক্যাম্প পাততে পারেন জলাধারের অদূরেই। গুনে গুনে পর্যটনকেন্দ্র দেখতে চাইলে অবশ্য এই জায়গা মনমতো হবে না। ভঞ্জনগর ভাল লাগবে তাঁদের, যাঁরা বেড়াতে গিয়ে অলসযাপন পছন্দ করেন, স্থানীয় খাবারের স্বাদ পেতে চান, আর কোনও সুন্দর জায়গায় থেকে আড্ডা-গল্পে সময় কাটাতে চান।

গঞ্জাম জেলার ভঞ্জনগর শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে তৈরি হয়েছে দহ জলাধার। পাহাড় এই স্থানের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। শীতের মরসুমে জলাধারের আশপাশে পিকনিক দলের ভিড় জমে। এখানকার মূল আকর্ষণই এই জলাধার। এখান থেকে ঘুরে নিতে পারেন বিজু পট্টনায়ক পার্ক, প্ল্যান্ট রিসার্চ সেন্টার, বেলেশ্বর মন্দির। দহ জলাধারের কাছেও রয়েছে থাকার জায়গা। পক্ষী পর্যবেক্ষণ, হেঁটে আশপাশ উপভোগ করার জন্য এটি দারুণ জায়গা।

কী ভাবে যাবেন?

চারচাকায় সফর মানে তো শুধু গন্তব্যে পৌঁছোনো নয়! বরং দেখতে দেখতে যাওয়া যায় বিভিন্ন স্থান। ভঞ্জনগর যেতে হলে কলকাতা থেকে পাড়ি দিতে হবে ব্রহ্মপুর। দূরত্ব ৬১০ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে খড়্গপুর, বালেশ্বর, ভদ্রক, কটক, খুরদা হয়ে ভঞ্জনগর। ভদ্রক বা কটকে রাত্রিবাস করতে পারেন। হাতে সময় থাকলে বালেশ্বর হয়ে আসার সময় দেখে নিতে পারেন চাঁদিপুর।

কোথায় থাকবেন?

ওড়িশা সরকারের ব্ল্যাকবাক নেচার ক্যাম্পের অন্তর্ভুক্ত থাকার জন্য তিন ঠিকানা রয়েছে। তার মধ্যে ভঞ্জনগর একটি। ভঞ্জনগর নেচার ক্যাম্পটি জলাধারের গায়েই। এখানে থাকা যায়। দহতেও অতিথি নিবাস আছে।

পত্রাতু

পত্রাতু ভ্যালি।

পত্রাতু ভ্যালি। ছবি: সংগৃহীত।

সিকিমের রেশমপথের মতো পাহাড়কে পাক খেয়ে উঠেছে সর্পিলাকার রাস্তা। পথের সৌন্দর্য উপভোগ্য হয়ে ওঠে, বেশ কিছুটা উপরে ওঠার পর ভিউ পয়েন্টে দাঁড়ালে। চারপাশ জুড়ে ঢেউ খেলানো পাহাড়, আর দূরে দেখা যায় পত্রাতু জলাধার। রাঁচি শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরের পত্রাতু ভ্যালিও হতে পারে পুজোর ছুটির গন্তব্য। এই স্থান অবশ্য একেবারে নির্জন নয়। পত্রাতু জলাধারের পাশেই রয়েছে ঝাড়খণ্ড পর্যটন দফতরের দু’টি থাকার জায়গা। পত্রাতু থেকেই ঘুরে নেওয়া যায় পালানি ফল্‌স, টেগোর হিল, কাঁকে জলাধার। এক রাত রাঁচি শহরে থেকেও ঘুরে নিতে পারেন হুড্রু, জোনা, দশম, লোধ জলপ্রপাত।

কী ভাবে যাবেন?

১৬ এবং ১৮ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে গেলে কলকাতা থেকে রাঁচির দূরত্ব ৪০১ কিলোমিটার। যেতে ৯-১০ ঘণ্টা লাগবে। রাঁচি থেকে পত্রাতু আরও ঘণ্টাখানেকের পথ। কলকাতা থেকে খড়্গপুর, লোধাশুলি, ধলভূমগড়, ঘাটশিলা, গালুডি পার করে টাটা রোড ধরে পৌঁছোতে হবে রাঁচি। লোধাশুলিতে অরণ্যের মধ্যেও রাত্রিবাসের ব্যবস্থা আছে। এক রাত সেখানে বা ঘাটশিলায় থেকে আশপাশের দর্শনীয় স্থান ঘুরে নিতে পারেন।

কোথায় থাকবেন?

ঝাড়খণ্ড পর্যটন দফতরের দু’টি থাকার জায়গা। পত্রায়ন বিহার ও সরোবর বিহার। রাঁচিতে অসংখ্য হোটেল আছে স্টেশনের কাছেই।

দুয়ারসিনি

এখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে সাতগুড়ুম নদী।

এখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে সাতগুড়ুম নদী। ছবি: সংগৃহীত।

জঙ্গলের ভিতর ছোট ছোট কটেজে রাত কাটানোর অ্যাডভেঞ্চারের টানে এখন অনেকেই ছুটে যাচ্ছেন পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামের দিকে। তেমনই একটি স্থান দুয়ারসিনি। জায়গাটি বাংলা ও ঝাড়খন্ডের সীমান্তে। ছোট ছোট পাহাড়ের মাঝে রয়েছে শাল-পিয়াল-শিমুলের বন। দুয়ারসিনির কাছেই বয়ে চলছে সাতগুড়ুম নদী। সেখানেই পাখপাখালি দেখতে দেখতে নিরিবিলিতে কাটিয়ে দেওয়া যায় সময়। আদিবাসী গ্রামও ঘুরে দেখতে পারেন। ভাগ্য ভাল থাকলে বনে নজরে পড়তে পারে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। গাড়ি নিয়ে ঘুরে নিতে পারেন টটকো জলাধার। ঘুরে নিতে পারেন ১১৬ কিলোমিটার দূরে আর এক স্থান, হাতিবাড়িও।

কী ভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে বাগনান, খড়্গপুর, লোধাশুলি, ধলভূমগড়, ঘাটশিলা হয়ে দুয়ারসিনি। দূরত্ব ২৬২ কিলোমিটার। টানা গেলে ঘণ্টা ছয়েক সময় লাগবে। তবে শুধু গন্তব্য ভ্রমণের লক্ষ্য না হলে, প্রথম বিরতিটি নিতে পারেন লোধাশুলিতে। আরণ্যক পরিবেশে বেশ কিছু ক্ষণ কাটাতে পারেন। ঘাটশিলাতেও দেখে নিতে পারেন গালুডি ড্যাম। দুয়ারসিনি থেকে ফেরার সময় এক রাত রাখতে পারেন ঘাটশিলার জন্যও। এখানেও অনেক কিছুই দেখার আছে।

কোথায় থাকবেন?

দুয়ারসিনির আরণ্যক পরিবেশে থাকতে চাইলে বনোন্নয়ন নিগমের কটেজ সবচেয়ে ভাল। তবে জায়গা না পেলে ঘাটশিলায় থেকে আশপাশ ঘুরতে পারেন। কিংবা গালুডির আশপাশে কোথাও থাকতে পারেন।

Advertisement
আরও পড়ুন