এক ঝলক দেখলে হাজারদুয়ারি বলে ভ্রম হতে পারে। তবে এই রাজবাড়ি রয়েছে হেতমপুরে। ছবি: সংগৃহীত।
বাঙালির শীতের গন্তব্যে শান্তিনিকেতন থাকবে না, তা-ও কি হয়? দীঘা, পুরী, দার্জিলিঙের সঙ্গে যেমন বঙ্গবাসীর সখ্য, তেমনই প্রাণের টান রবি ঠাকুরের শান্তিনিকেতনের প্রতিও।
রাঙা কাঁকুড়ে মাটি না থাক, গ্রামীণ নির্জনতা না থাক, শান্তিনিকেতন মনে করায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মকাণ্ডের কথা। কিন্তু শান্তিনিকেতন ভ্রমণ যদি বার কয়েক হয়েই থাকে, তবে এই শীতে বীরভূমকে চিনুন অন্য ভাবে।
শান্তিনিকেতন থেকে পানাগড়-মোড়গ্রাম রাজ্য সড়ক দিয়ে পৌনে ২ ঘণ্টা গাড়ি ছোটালে পৌঁছে যাবেন এমন এক জায়গায় যেখান থেকে ঘুরে নিতে পারেন জলাধার, পাহাড়, উষ্ণ প্রস্রবণ, রাজবাড়ি, মন্দির। এককথায় এ এক এমন স্থান যেখানে ২টি রাত রয়ে গেলেই দারুণ ভাবে ঘোরা সম্ভব। জায়গাটির নাম দুবরাজপুর।
এখানকার এক আকর্ষণ যদি মামা-ভাগ্নে পাহাড় হয়, অন্যটি নীল নির্জন ড্যাম। শীতের পরিষ্কার আকাশে জলাধারের জল দেখায় ঘন নীল। তা থেকেই এমন নাম। ঠান্ডা পড়লে জলাধারে ভেসে বেড়ায় পরিযায়ীরা।
মামা-ভাগ্নে পাহাড়
দুবরাজপুর পৌঁছে খানিক বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন সাইট সিইং করতে। যেহেতু গরমকালে এখানে বেশ গরম, তাই ঘোরার জন্য শীতই আদর্শ। প্রথমে চলুন মামা-ভাগ্নে পাহাড়। পাহাড়ের উপর দু’টি পাথর এমন কায়দায় রয়েছে, যা দেখলে মনে হবে সযত্নে,ব্যালান্স করে তা বসানো হয়েছে। এই দুই পাথর থেকেই পাহাড়ের নাম মামা-ভাগ্নে। কাছেপিঠে ঘুরে নিতে পারেন রঘু ডাকাতের টেরাকোটার মন্দির। বাজারের কাছে রয়েছে শিব মন্দির যার ১৩টি চূড়া। নমো পাড়ায় আছে পাঁচটি শিব মন্দির।
নীল নির্জন ড্যাম
দুবরাজপুরের উপকণ্ঠে সিউড়ির সড়কপথে রয়েছে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। তা থেকেই তৈরি হয়েছে জলাধার, নাম নীল নির্জন। মেঘমুক্ত নীল আকাশের প্রতিবিম্বে জলের এমন রং দেখায়। মনোরম একটি পর্যটন স্থান। শীতের দিনে এখানে দেখা মেলে পরিযায়ী পাখিদের।
মাজার, রামকৃষ্ণ আশ্রম
এই পথেই দেখে নিতে পারেন আলম শাহের মাজার। রেললাইনের ধারে স্থানটি এমনিতে নির্জনই থাকে। ঢুঁ মারতে পারেন দুবরাজপুর রামকৃষ্ণ আশ্রমেও।
হেতমপুরের রাজবাড়ি
দুবরাজপুর শহর থেকে ৩ কিলোমিটার পথ হেতমপুর। শোনা যায়, হাতেম খাঁয়ের নামানুসারে এই স্থানের নাম হয়েছে হেতমপুর। সেখানেই রয়েছে সুবিশাল রাজবাড়ি। একটি আদি বাড়ি। আর একটি অপেক্ষাকৃত নতুন। নতুনটি বাড়িটি হেতমপুরের চক্রবংশীয় রাজাদের বাসভবন, নাম রঞ্জন প্যালেস। এটিকে হাজারদুয়ারির ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা যেতে পারে। আদি রাজবাড়ির অনেকটাই এখন ভেঙে পড়েছে। বড় বড় গাছ গজিয়েছে। সাপখোপের আড্ডা। তবে একাংশ সারিয়ে নিয়ে তৈরি হয়েছে স্কুল। রঞ্জন প্রাসাদেও দুষ্প্রাপ্য চিত্রকলা, প্রাচীন জিনিসপত্র সংগৃহীত রয়েছে। এই গ্রামে একাধিক পুরনো জলাশয় আছে। আর এখানকার দ্রষ্টব্য টেরাকোটার কাজের শিবমন্দির। অষ্টকোনাকৃতি চন্দ্রনাথ শিব মন্দিরের অদূরে রয়েছে দেওয়ানজি শিব মন্দির। ‘দামু’-সহ অসংখ্য বাংলা সিনেমার শুটিং হয়েছে রাজবাড়িতে। এখনও হয়। এই গ্রামে এলে আজও শোনা যায় ‘হাফেজ়- শেরিনার’ প্রেমগাথা। তার সত্যি-মিথ্যে নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। শেরিনাবিবির গোড় আজও হেতমপুরের পবিত্র স্থান।
খগেশ্বর শিব মন্দির
দুবরাজপুর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ফুলবেড়ে গ্রামে গেলে দেখতে পাবেন খগেশ্বর শিব মন্দির। বক্রেশ্বর মন্দিরের আদলেই এটি তৈরি। কথিত আছে, খগেশ্বর নামে এক সামন্ত এটি তৈরি করিয়েছিলেন। মন্দিরের পশ্চিমেই পুকুর, বাঁধানো ঘাট। শোনা যায়, এখানকার জলাশয়গুলি থেকে অনেক প্রত্নসামগ্রী মিলেছিল। পুকুর সংস্কারের সময় কষ্টিপাথরের গোপাল উঠেছিল, যা মন্দিরে রাখা হয়েছে।