Durga Puja Travel 2025

কলকাতা থেকে কালিম্পং, যাওয়ার পথে ঘুরে নিন মালদহ আর গুলমা, সফর সাজান মনের মতো

পুজোর ছুটিতে সফরের জন্য ট্রেন, বাস, বিমানের টিকিট কাটা হয়নি? বেড়ানোর সঙ্গী হতে পারে চারচাকাই। আনন্দবাজার ডট কম-এ থাকছে সড়কপথে ভ্রমণের চেনা-অচেনা গন্তব্যের হদিস।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৪৭
Explore offbeat places near kaimpong in this Puja Vaccation

পুজোয় চলুন কালিম্পংয়ের স্বল্পচেনা এক গ্রামে। ছবি: সংগৃহীত।

নিম্নচাপের ভ্রূকুটি, অবিরাম বৃষ্টি যতই থাক, পুজো মানে গতানুগতিক জীবন থেকে মুক্তি। আড্ডা, হইচই, বেরিয়ে পড়া। হাতে দিন সাতেকের ছুটি থাকলে চারচাকায় সওয়ার হয়ে চলুন উত্তরবঙ্গে। ভিড়ে ঠাসা কালিম্পঙের অদূরেই প্রকৃতির উজাড় করা রূপের ডালি, মুক্ত বাতাস, নির্জনতা নিয়ে অপেক্ষা করছে অসংখ্য পাহাড়ি গ্রাম। ডুয়ার্স, দার্জিলিং, কালিম্পং— একাধিক জায়গাকে কেন্দ্র করে সফর সাজানো যায়। এখানে রইল কালিম্পং জেলার তিন গ্রামের হদিস।

Advertisement

কলকাতা থেকে সড়কপথে উত্তরবঙ্গ যাওয়া এখন আর বিশেষ ঝক্কির নয়। হরদমই বাস যাচ্ছে। রাস্তার বেশির ভাগটাই জাতীয় সড়ক। মসৃণ পথ। কোথাও কোথাও যানজটের সমস্যা হলেও, টানা গেলে ঘণ্টা ১২-তেই শিলিগুড়ি পৌঁছোনো যায়। কিন্তু উদ্দেশ্য যদি বেড়ানোই হয়, তা হলে নানা জায়গায় থেমে, এক রাত বিশ্রাম করে, সেই জায়গাগুলি ঘুরতে ঘুরতেও কিন্তু যাওয়া যায়। তা হলে যাত্রাপথ একঘেয়ে লাগবে না। লম্বা সফরে ধকলও থাকবে না।

ওড়গ্রাম হয়ে মালদহ

কলকাতা থেকে বেরিয়ে পড়ুন নিবেদিতা সেতুর রাস্তা ধরে। সোজা চলুন বর্ধমান। এই পথেই পড়বে গুসকরা। গাড়িতে যাওয়া মানে মাঝেমধ্যে বিশ্রাম। মাঝেমধ্যে চা পান। গুসকরা থেকে ঘুরে নেওয়া যায় ওড়গ্রাম, আউস গ্রাম। কলকাতা থেকে যেতে মোটমুটি ঘণ্টা ৪-৫ সময় লাগবে। তবে ওড়গ্রাম ঘুরতে গেলে দিনের বেলাতেই সেখানে পৌঁছোতে হবে। সে ক্ষেত্রে যাত্রা শুরু করতে হবে রাতে নয়, ভোরে। এখানে একটি পরিত্যক্ত এয়ারফিল্ড রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন 'চাতাল'। জঙ্গলে ঘেরা জায়গাটি ঘণ্টা দুয়েক ঘুরে নেওয়ার জন্য বেশ ভাল। ওড়গ্রামে জঙ্গলের ভিতরে একটি থাকার জায়গাও রয়েছে। সেখানকার রেস্তরাঁয় প্রাতরাশ সেরে নিতে পারেন। কলকাতা থেকে মালদহ বর্ধমান হয়েও যাওয়া যায় আবার কৃষ্ণনগর, বেথুয়া, বহরমপুর দিয়েও যাওয়া যায়। দুই রাস্তা মিলেছে মোরগ্রামে।

ঘুরে নিতে পারেন মালদহও।

ঘুরে নিতে পারেন মালদহও। ছবি: সংগৃহীত।

কলকাতা থেকে মালদহের দূরত্ব ৩১৪ -৩১৬ কিলোমিটারের মতো। ওড়গ্রাম ঘুরে গেলে দূরত্ব খানিক বাড়বে। তবে সব মিলিয়ে ১০ ঘণ্টার মধ্যে সেখানে পৌঁছোনো সম্ভব। বিকালের মধ্যে পৌঁছতে পারলে মালদহ থেকে জাতীয় সড়ক ধরে ফরাক্কার দিকে ৩ কিমি গিয়ে বাঁ দিকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মহদীপুরের পথে ৭ কিমি গেলে পিয়াস বারি বা পিয়াজবাড়ি ঘুরে নিন। এখান থেকে ডান দিকে আরও ৩ কিমি যেতে গৌড়ের অতীত রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ। পিয়াস বারি থেকে ডান দিকে কিছুটা গেলে রামকেলি। বৃন্দাবন যাওয়ার পথে শ্রীচৈতন্য এসেছিলেন এখানে। তমালতলের ছোটো মন্দিরে পাথরের উপর তাঁর পদচিহ্ন রয়েছে। মদনমোহনের মন্দির রয়েছে এখানে। আছে ৮টি কুণ্ড।

মালদহে রাতটা বিশ্রাম নিন। জাতীয় সড়কের ধারে, শহরে বা শহরের বাইরেও একাধিক হোটেল-রিসর্ট পেয়ে যাবেন। পরের দিন সকাল সকাল বেরিয়ে ঘুরে নিতে পারেন পাণ্ডুয়া। জাতীয় সড়ক ধরে মহানন্দা পেরিয়ে ১৬ কিমি উত্তরে পাণ্ডুয়া। প্রথম দ্রষ্টব্য বড়ী দরগাহ্‌। জাতীয় সড়কেই। ৫৫০ বছরের পুরনো দরগা। চতুর্দশ শতকে পারস্য থেকে আসা পির সৈয়দ মখদুম শাহ জালালের নকল সমাধি।

পাণ্ডুয়ার প্রবেশদ্বার সালামি দরওয়াজা। পাশেই উপাসনা বেদি আসনশাহী। অদূরে মিঠা তালাও, কাছেই কাজি মসজিদ। সালামি দরওয়াজা পেরিয়ে আধ কিমি গেলে নুর কুতব-উল-আলমের মাজার তথা ছোটি দরগাহ্‌। এখান থেকে উত্তর-পশ্চিমে যেতে একলাখি মসজিদ। টেরাকোটা সমৃদ্ধ, কারুকার্য সুন্দর। একলাখি লাগোয়া চত্বরে ১০ ডোমের কুতবশাহি মসজিদ।

পাণ্ডুয়ার আর এক গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য আদিনা মসজিদ। ৪০০টি স্তম্ভে ৩৭০টি গম্বুজওয়ালা মসজিদটি দামাস্কাসের জুম্মা মসজিদের আদলে ১৩৬০ সালে তৈরি।

গুলমায় উপভোগ করুন মহানন্দার সৌন্দর্য।

গুলমায় উপভোগ করুন মহানন্দার সৌন্দর্য। ছবি: সংগৃহীত।

ঘুরে নিন গুলমা

মালদহ ঘুরে পরের গন্তব্য গুলমা। দূরত্ব ২২৮ কিলোমিটার। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় পর্যটকেরা গেলেও, এ স্থান রয়ে গিয়েছে লোকচক্ষুর আড়ালে। মালদহ থেকে গাজোল, রায়গঞ্জ, ইসলামপুর হয়ে ধরতে হবে শিলিগুড়ির রাস্তা। শিলিগুড়ি থেকে হিলকার্ট রোড ধরে এগিয়ে গেলে সুকনা মোড় আসার আগে ডান দিকের রাস্তা। অল্প গেলেই গুলমা টি এস্টেট। জায়গাটি সমতল। কিন্তু পাহাড় এখান থেকেই শুরু। গ্রামটি কার্যত পাহাড়ের কোলে। মহানন্দা নদীর ধারে। শিলিগুড়ি থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ধরে আরও উত্তরে গেলে সেবকের আগে গুলমা স্টেশন। গুলমা ছাড়ালেই পেরোতে হয় মহানন্দা। একটা দিন প্রকৃতির কোলে বিশ্রাম নেওয়ার পক্ষে দারুণ জায়গা এটি।

কালিম্পং হয়ে রামধুরা

পর দিন সকালটা মহানন্দার আশপাশটাই উপভোগ করুন। প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন কালিম্পঙের উদ্দেশে। শিলিগুড়িতে এসে ধরতে হবে ধরতে হবে শালুগাড়ার পথ। এই পথের দুপাশে সঙ্গ দেবে ঘন অরণ্য। বেঙ্গল সাফারি হয়ে রাস্তা এগিয়েছে সেবকের দিকে। পাহাড়, চা-বাগানের সৌন্দর্য মিলবে শহর ছাড়ালেই। এই পথের সঙ্গী হবে অপূর্ব তিস্তা। বর্ষার পর কানায় কানায় পূর্ণ থাকে নদীখাত। পুরো যাত্রাপথটি ঘণ্টা চারেকের বেশি লাগার কথা নয়। সঠিক ভাবে পরিকল্পনা করলে দুপুরের মধ্যেই পৌঁছোনো সম্ভব। সরাসরি কালিম্পঙে না থেকে তৃতীয় দিনটিতে পৌঁছে যেতে পারেন রামধুরায়। কালিম্পং থেকে রামধুরা যাওয়ার সময় ঘুরে নিতে পারেন ডেলো পার্ক। এখানে প্যারাগ্লাইডিং হয়। অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের শখ থাকলে তা পূরণ করে নিতে পারেন।

মেঘমুক্ত আকাশে রামধুরা থেকে দৃশ্যমান হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। পাহাড়ের নির্জন আর পাঁচটা গ্রামের মতোই রামধুরা নিজস্ব সৌন্দর্যে উজ্জ্বল। আশপাশে ঘোরাঘুরি করা যায় ঠিকই, তবে কোথাও না গিয়ে হোম স্টেতে বসে থাকলেও মন্দ লাগবে না। হেঁটেই ঘুরে নিতে পারেন আশপাশ।

কোলাখাম

রামধুরা থেকে রেশি রোড এবং লাভা রোড ধরে চলুন কোলাখাম। পাহাড়ের কোলে ছোট্ট গ্রাম। পাইনে মোড়া উপত্যকা। লাভা হয়ে যাওয়ার সময় অবশ্যই ঘুরে নিন এখানকার বহু পুরনো মনাস্ট্রি। শান্তি পরিবেশ। পাহাড়ের মাথার মনাস্ট্রিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়া যায়। পড়ুয়াদের ছোটাছুটি, প্রার্থনার শব্দ মন নিমেষে ভাল করে দেয়।

লাভা ভিউ পয়েন্ট ঘুরে চলুন কোলাখাম। এখানে দেখা মিলবে চেল নদীর। আছে ছাঙ্গে জলপ্রপাত। তবে সেখানে পৌঁছতে গেলে বেশ কিছুটা চড়াই-উতরাই পার করতে হবে। রয়েছে সিঁড়িও।

কাফেরগাঁও

কোলাখাম থেকে আসুন কাফেরগাঁও। ৩৩ কিলোমিটার রাস্তা। পথেই পড়বে লাভার পাইন বন। থেমে, ঘুরতে ঘুরতে আসুন। ঘুরে নিন ডাবলিন ভিউ পয়েন্ট, গুম্বাদারা মনাস্ট্রি। পাহাড়ের উপরের অংশটি খানিক চ্যাটালো। সেখানেই সাদা মনাস্ট্রি। পাশেই মাঠ। সেখানে খেলা করে আবাসিক পড়ুয়ারা। অনেকেই এই মনাস্ট্রিটি ঘোরেন না বা নাম জানেন না। তবে এক বার গিয়ে পড়লে অনেকখানি ভাললাগা সঞ্চিত হবে। ঘুরে নিতে পারেন নকদাঁড়া লেক এবং ভিউ পয়েন্টও। কৃত্রিম জলাশয় আছে এখানে। রয়েছে বোটিং-এর ব্যবস্থাও। পাহাড়ের কোলে যত্নে সাজানো উদ্যান।

মেঘমুক্ত দিনে কাফেরগাঁও থেকে দৃশ্যমান হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা।

মেঘমুক্ত দিনে কাফেরগাঁও থেকে দৃশ্যমান হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। ছবি: সংগৃহীত।

অজানা বাঁকের হাতছানি, উড়ে আসা মেঘ, দিগন্তে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর পাইনের জঙ্গল ঘেরা ছোট্ট গ্রাম কাফেরগাঁও। উচ্চতা ৫২০০ ফুট। বিলাসবহুল হোটেলের আধিক্য না থাকলেও হোম স্টেগুলির উষ্ণ আপ্যায়ন বাড়তি ভাললাগা যোগ করবে। পায়ে হেঁটেই ঘুরে দেখতে পারেন গ্রাম। প্রতিটি বাড়িতে বাহারি ফুল। সহজ-সরল অনাড়ম্বর জীবনও বেরঙিন নয়। বরং রঙের প্রাচুর্যে প্রাণের ছোঁয়া।এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন মেলে। সূর্যাস্তও ভারি সুন্দর দেখায়। কাছেই রয়েছে একটি বুদ্ধ পার্ক। ঘুরে নিন সেটি।

ফেরার পথে কুলিক

কাফেরগাঁও থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব ৭০ কিলোমিটারের মতো। ফেরার সময় রাতে থেকে যান রায়গঞ্জে। জাতীয় সড়কের উপরে রয়েছে কুলিক পক্ষী নিবাস। সুযোগমতো সেটি ঘুরে নিন। কাফেরগাঁও থেকে রায়গঞ্জের দূরত্ব ২৩৯ কিলোমিটার।

রায়গঞ্জে একটি রাত থেকে কলকাতার পথ ধরে নিন।

কী ভাবে যাবেন?

কলকাতা থেকে প্রথম দিন মালদহ। দূরত্ব ৩৩৩ কিলোমিটার। মালদহ থেকে গুলমা ২২৮ কিলোমিটার। গুলমা থেকে শিলিগুড়ি হয়ে রামধুরার দূরত্ব ৮৫-৯০ কিলোমিটারের মতো। সেখান থেকে ঘুরে নিন কোলাখাম এবং কাফেরগাঁও।

কোথায় থাকবেন?

মালদহ, শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ, কালিম্পঙে হোটেল-রিসর্ট পাবেন। পাহাড়ি গ্রামগুলিতে থাকার জন্য একাধিক হোম স্টে রয়েছে।

Advertisement
আরও পড়ুন