Mamata Banerjee On Agarpara Death Case

এনআরসি-কে দায়ী করে আগরপাড়ার প্রৌঢ় শেষ করলেন নিজেকে! মমতার অভিযোগ, দায়ী বিজেপির ‘নির্মম খেলা’!

‘এনআরসি-র আতঙ্কে’ আগরপাড়ার মহাজাতি নগরের বাসিন্দা ৫৭ বছর বয়সি প্রদীপ কর নিজের আবাসনে আত্মঘাতী হন বলে দাবি পরিবারের। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় খড়দহ থানার পুলিশ। এই মৃত্যুর ঘটনায় বিজেপিকে দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:৪২
Mamata Banerjee On Agarpara Death Case

(বাঁ দিকে) প্রদীপ কর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

‘এনআরসি আতঙ্কে’ আত্মঘাতী উত্তর ২৪ পরগনার আগরপাড়ার এক প্রৌঢ়। মঙ্গলবার সকালে তাঁর দেহ উদ্ধারের পর শোরগোল আগরপাড়ার মহাজাতি নগর এলাকায়। মৃতের ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি ডায়েরি। তার একটি পাতায় লেখা, ‘এনআরসি আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী।’ এ নিয়ে সমাজমাধ্যমে বিজেপিকে দুষেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, ‘‘আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, এই নির্মম খেলা চিরতরে বন্ধ করুক। বাংলা কখনও এনআরসি অনুমোদন করবে না এবং কাউকে আমাদের জনগণের মর্যাদা বা স্বত্ব কেড়ে নিতে দেবে না।’’

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃতের নাম প্রদীপ কর। মঙ্গলবার তাঁর ঝুলন্ত দেহ মেলে বাড়িতে। খবর যায় খড়দহ থানায়। পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধারের পাশাপাশি একটি ডায়েরি পায়। পুলিশ সূত্রে খবর, ডায়েরির একটি পৃষ্ঠায় লেখা, ‘আমার মৃত্যুর জন্য এনআরসি দায়ী।’ স্বাভাবিক ভাবে, এই মৃত্যুর ঘটনায় শোরগোল শুরু হয়েছে এলাকায়। পরিবারের দাবি, প্রদীপের জন্ম এবং বড় হয়ে ওঠা পশ্চিমবঙ্গেই। তবে তাঁর বাবা বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এসেছিলেন।

ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মুরলীধর নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, সকালে খবর পেয়ে প্রদীপ যে আবাসনে থাকেন, সেখানে যায় পুলিশ। ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোটও পাওয়া গিয়েছে। বাড়ির লোকজন এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এনআরসি সংক্রান্ত নানা খবর নিয়ে প্রদীপ চিন্তিত ছিলেন। মুরলীধর বলেন, ‘‘গতকাল (সোমবার) এসআইআর-এর ঘোষণা হয়। ওঁর পরিবারের দাবি, তার পর থেকে উনি অস্থির হয়ে ওঠেন। বাড়ির লোক ভেবেছিলেন, অসুস্থবোধ করছেন। রাতে খাওয়া-দাওয়া করে শুতে চলে যান নিজের ঘরে। সকালে ওঁর ভাইয়ের স্ত্রী অনেক বার ডাকাডাকি করেও সাড়া পাননি। এর পর বাড়ির অন্য সদস্যেরা এবং প্রতিবেশীরা ঘরে ঢুকে প্রদীপের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন। আমরা দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছি। তদন্ত চলছে।’’

প্রদীপের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘‘৫৭ বছর বয়সি প্রদীপ কর, ৪ মহাজাতি নগর, পানিহাটি, খড়দহের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আত্মহত্যা করেছেন। একটি চিরকুট রেখে গিয়েছেন তিনি। যেখানে লেখা আছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য এনআরসি দায়ী।’ বিজেপির ভয় ও বিভাজনের রাজনীতির এর চেয়ে বড় অভিযোগ আর কী হতে পারে?’’ মুখ্যমন্ত্রী আরও লেখেন, ‘‘বছরের পর বছর ধরে বিজেপি কী ভাবে এনআরসি-র হুমকি দিয়ে, মিথ্যা প্রচার করে, আতঙ্ক ছড়িয়ে এবং ভোটের জন্য নিরাপত্তাহীনতার অস্ত্র ব্যবহার করে নিরীহ নাগরিকদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে, তা কল্পনা করলে আমার হৃদয় কাঁপে। ওরা সাংবিধানিক গণতন্ত্রকে ভয়ের একটি রঙ্গমঞ্চে পরিণত করেছে, যেখানে মানুষকে তাদের অস্তিত্বের অধিকার নিয়ে সন্দেহ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এই মর্মান্তিক মৃত্যু বিজেপির বিষাক্ত প্রচারের প্রত্যক্ষ পরিণতি।’’

আগরপাড়ার প্রৌঢ়ের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও লেখেন, ‘‘যাঁরা দিল্লিতে বসে জাতীয়তাবাদের প্রচার চালান, তাঁরা সাধারণ ভারতবাসীকে এতটাই হতাশার দিকে ঠেলে দিয়েছন যে, তাঁরা তাঁদের নিজের দেশেই মারা যাচ্ছেন এই ভয়ে যে, তাঁদের ‘বিদেশি’ ঘোষণা করা হবে। আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, এই নির্মম খেলা চিরতরে বন্ধ করুক তারা। বাংলা কখনও এনআরসি অনুমোদন করবে না এবং কাউকে আমাদের জনগণের মর্যাদা বা স্বত্ব কেড়ে নিতে দেবে না। আমাদের সরকার মাটি মা-মাটি-মানুষের। ঘৃণার উপর ভরসা করেন যাঁরা, তাঁদের জন্য নয়। দিল্লির জমিদারদের এই কথাটি স্পষ্ট ভাবে শুনতে হবে: বাংলা প্রতিরোধ করবে, বাংলা রক্ষা করবে এবং বাংলা জয়ী হবে।’’

মুখ্যমন্ত্রীর পরে প্রদীপের মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘পানিহাটির প্রদীপের মৃত্যুর জন্য দায়ী অমিত শাহ, জ্ঞানেশ কুমার। তাঁদের নামে এফআইআর হওয়া উচিত। প্রদীপের মৃত্যুর বদলা রাজনৈতিক ভাবে ভোটের মাধ্যমে নেওয়া হবে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন