RG Kar Rape And Murder Case

আরজি কর কাণ্ড: আইন হাতে তুলে নেব! হুঁশিয়ারি নির্যাতিতার মায়ের, বাবা ফের কটাক্ষ করলেন সিবিআইকে

গত বছরের অগস্টে আরজি কর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ে ধর্ষণ করে খুন করা হয় চিকিৎসক-ছাত্রীকে। ওই ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:২০
RG Kar Rape And Murder Case

আরজি কর কাণ্ডে সিবিআইয়ের ভূমিকা প্রশ্ন নির্যাতিতার বাবা-মায়ের। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আরজি কর ধর্ষণ এবং খুনের সাজা ঘোষণার পরেও নির্যাতিতার বাবা-মা জানিয়েছিলেন তাঁরা বিচার পাননি। প্রৌঢ় দম্পতির দাবি, অপরাধে এক নয়, একাধিক ব্যক্তি জড়িত। সেই নিয়ে এখনও মামলা চলছে। সোমবার নির্যাতিতার মা জানান, আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই তাঁদের। মেয়ের মৃত্যুর বিচার ছিনিয়ে আনবেন। প্রয়োজনে আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন। স্ত্রীর কথায় সায় দেন কন্যাহারা পিতাও।

Advertisement

সোমবার উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে একটি অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন দম্পতি। সেখানে আরজি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার বাবার অভিযোগ, সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকেরা নিজেদের ভূমিকা পালন করেননি। তাঁর কথায়, ‘‘শিয়ালদহ আদালতে যে সমস্ত সওয়াল-জবাব হয়, পরের দিন রায়ের কপি বার হলে সিবিআই তাকে পাত্তা দেয় না। আবার হাই কোর্টে সাত মাস মামলা চলার পর বিচারপতি তীর্থঙ্কর বসুর কাছ থেকে ডিভিশন বেঞ্চে চলে গিয়েছে ওই মামলা। কিন্তু তিন মাস হল শুনানিই হয়নি। তখন তো অবশ্যই কথা বলতে হয়।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সিবিআই আদালতে বলছে, তারা কোনও ‘স্পেসিফিক ইনভেস্টিগেশন’ করেনি! আমরা জবাব খুঁজছি। সিবিআই, রাজ্য প্রশাসন কেউ-ই বলবে না। যদি বলে আদালতই বলবে।’’

প্রৌঢ় দাবি করেছেন, আরজি কর-কাণ্ডের ডিএনএ রিপোর্টে একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু তদন্ত সেই পথে এগোয়নি। তাঁর স্ত্রী বলছেন, মেয়ের পরিণতিতে তৎকালীন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় একা দোষী নয়, তার সঙ্গে অপরাধে জড়িত ছিল আরও কয়েক জন। তিনি মনে করেন, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ মেয়ের খুন এবং ধর্ষণের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। প্রৌঢ়া বলেন, ‘‘ওখানকার দুর্নীতি সংক্রান্ত নানা তথ্য জেনে ফেলেছিল মেয়ে। সে কথা আমাকে বলত। তা ছাড়া ভোর ৪টের আগে আমার মেয়ে ঘুমোত না। ক্লাস নাইনে পড়াশোনার সময় থেকে ওর ওই অভ্যাস ছিল। সে ডিউটিরত অবস্থায় ঘুমোতে গিয়েছিল, বিশ্বাস করি না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ও সে দিন কোথায় ছিল, সেমিনার রুমে ছিল কি না, এ কথা আদালতে আইও-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। এটা শুনেই তিনি কান্না জুড়েছিলেন। এত বড় হাসপাতাল, সেখানে এক জন বাইরে থেকে এসে ধর্ষণ, খুন করে চলে গেল, কেউ জানল না, এটা সম্ভব নয়।’’

গত বছরের অগস্টে আরজি কর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ে ধর্ষণ করে খুন করা হয় এক চিকিৎসক-ছাত্রীকে। ওই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে এই ঘটনার তদন্তভার হাতে নেয় সিবিআই। কলকাতা পুলিশের হাতে ধৃত সিভিককে হেফাজতে নেয় তারা। শিয়ালদহ আদালতে চার্জশিট জমা দেয় সিবিআই। তাতে অভিযুক্ত হিসাবে একমাত্র সঞ্জয়ের নামই উঠে আসে। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে নিম্ন আদালত।

ঘটনাক্রমে নির্যাতিতার পরিবার সিবিআইয়ের তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়। শিয়ালদহ আদালত আরজি করে ধর্ষণ-খুনের মামলার রায় দেওয়ার আগে এই বিষয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। সিবিআই তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে উচ্চ আদালতে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বেঞ্চে আবেদন করা হয়। যদিও বিচারপতি ঘোষ সেই সময় নির্যাতিতার পরিবারের ওই আবেদন শুনতে চাননি। বিচারপতি ঘোষ জানিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি ছাড়া শুনানি সম্ভব নয়। সেইমতো শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় পরিবার। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে হাই কোর্টে ওই মামলার শুনানি হতে পারে। এখন ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হবে।

Advertisement
আরও পড়ুন