(উপরে) সোমবার দুপুরে সিইও দফতরের ভিতরে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির প্রতিনিধিদল। বাইরে বিক্ষোভ ‘বিএলও অধিকার রক্ষা কমিটি’-র (নীচে)। — নিজস্ব চিত্র।
কলকাতায় রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দফতরের সামনে দফায় দফায় ছড়াল উত্তেজনা। সোমবার দুপুরে সিইও দফতরে আসেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সিইও মনোজকুমার আগরওয়ালের সঙ্গে সাক্ষাতের পূর্বনির্ধারিত সূচি ছিল তাঁর। এ দিকে আগে থেকেই সিইও দফতরের সামনে অবস্থান করছিলেন ‘বিএলও অধিকার রক্ষা কমিটি’-র সদস্যেরা। শুভেন্দু এবং বিজেপির প্রতিনিধদল সেখানে পৌঁছোতেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। শুরু হয়ে যায় দু’পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডাও।
গত কয়েক দিন ধরেই সিইও দফতরের সামনে অবস্থান চালাচ্ছে ‘বিএলও অধিকার রক্ষা কমিটি’। তৃণমূলপন্থী এই সংগঠনের বিক্ষোভের সময়ে সেখানে বিএলও-দের উপস্থিতি ছিল হাতে গোনাই। সোমবার শুভেন্দুরা সিইও দফতরে পৌঁছোনোর আগে ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখা হয় এলাকা। সেই ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। শুভেন্দুদের দেখা মাত্রই ‘গো ব্যাক’ স্লোগান তুলতে থাকেন তাঁরা।
সেই বিক্ষোভ এবং স্লোগানের মাঝেই শুভেন্দুর নেতৃত্বে বিজেপির প্রতিনিধিদল সিইও দফতরের ভিতরে প্রবেশ করে। সিইও দফতরের ভিতরে পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুসারেই বৈঠক শুরু করেন তাঁরা। অন্য দিকে সিইও দফতরের বাইরে তখন বিক্ষোভ ক্রমশ বাড়তে থাকে। ‘বিএলও অধিকার রক্ষা কমিটি’-র বিক্ষোভের পাশাপাশি সিইও দফতরের বাইরে ভিড় জমে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদেরও। দু’পক্ষই স্লোগান এবং পাল্টা স্লোগান তুলতে থাকে সেখানে।
সোমবার দুপুরে এই উত্তেজনা সামাল দিতে সিইও দফতরের বাইরে আগে থেকেই পুলিশি প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বসানো হয়েছিল ব্যারিকেডও। তবে শুভেন্দুরা সিইও দফতরে প্রবেশ করার পরই সেই ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। ‘বিএলও অধিকার রক্ষা কমিটি’-র সদস্যদের দাবি, তাঁদেরও ভিতরে প্রবেশ করতে দিতে হবে। তাঁরাও সিইও দফতরে স্মারকলিপি জমা দিতে চান। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর বিরুদ্ধেও স্লোগান তুলতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা।
সিইও দফতের বাইরে যখন এই বিক্ষোভ চলছে, তখন দফতরের ভিতরে সিইও মনোজ আগরওয়ালের সঙ্গে দেখা করে নিজেদের দাবিদাওয়ার কথা তুলে ধরেন শুভেন্দুরা। সিইও-র হাতে একটি দাবিপত্র তুলে দেন তাঁরা। ওই বৈঠকে শুভেন্দু বলেন, “সুপার টাইমার আইএএসদের বাদ দিতে হবে। ইআরও (ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার)-দের এসডিও র্যাঙ্ক না থাকলে বাদ দিতে হবে। বাংলাদেশি মুসলিমদের নাম বাদ দিতে হবে। অনেকের নাম রয়েছে।” আই প্যাকের বিরুদ্ধেও কমিশনের কাছে অভিযোগ জানান তিনি। কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, “পাঁচ হাজার বিএলও-র বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলাম। দু’মাস হয়ে গেল কমিশন। কেন কিছু জানাল না?”
সিইও দফতরের বৈঠক শেষে সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু বলেন, “বিডিও-দের একাংশের সাহায্য বিএলও-দের চাপ দিয়ে তাদের কাছ থেকে ওটিপি নিয়ে আইপ্যাকের লোকেরা মৃত, অন্যত্র চলে যাওয়া এবং বাংলাদেশি মুসলিম, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নাম রেখে দিয়েছে। আমরা তার নমুনা ওদের (কমিশনকে) দিয়েছি। ১৭১১১টি বুথের অভিযোগ, সিরিয়াল নম্বর এবং ডেটা আমরা স্পেশাল অবজার্ভার এবং সিইও-কে দিয়েছি। তাঁরা বলেছেন, ফিজিক্যাল ফেরিফিকেশন এবং টেকনোলজি ব্যবহার করে যতটা সম্ভব ফিল্টার করার চেষ্টা করবেন। এই আশ্বাস মিলেছে।”
তিনি আরও বলেন, “১৪ ডিসেম্বরের পরে যে হিয়ারিং হবে, সেখানে লাইভ সিসিটিভি কমিশনের কন্ট্রোল রুম থেকে মনিটরিং করতে হবে। সিসিটিভি বন্ধ করে একটি হিয়ারিংও হবে না। এটি তাঁরা লিখিত অর্ডারও করেছেন। আমাদের আশ্বাসও দিয়েছেন।”