SIR in West Bengal

এসআইআরে বাংলায় বাদ পড়ছে অন্তত ১০ লক্ষ নাম! এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানাল কমিশন, মৃত ভোটার ৬.৫ লক্ষ

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর পর রাজ্যে বাদ পড়ছে অন্তত ১০ লক্ষ ভোটারের নাম। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ বার এমনটাই জানাল ভারতের নির্বাচন কমিশন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৫৮

— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এ আপাতত ১০ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়ার হিসাব পেল নির্বাচন কমিশন। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ওই সংখ্যক ভোটারের নাম বাদ যাচ্ছে বলে তাদের প্রাথমিক ধারণা। কমিশন সূত্রে খবর, প্রতি দিনই তথ্য আসছে। আপাতত বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)-দের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই হিসাব মিলেছে। তাঁরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফর্ম বিলি করতে গিয়ে এই তথ্য পেয়েছেন। সব এনুমারেশন ফর্ম জমা হওয়ার পরে চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে বাদ পড়ার সংখ্যা যে অনেক বেশি হবে, তা এক প্রকার নিশ্চিত।

Advertisement

প্রথমে বুথে বুথে বিএলও-রা ফর্ম বিলি করেছেন। পরে পূরণ করা ফর্ম তাঁরা সংগ্রহ করেছেন। সেই সময় বিএলও-রা তথ্য পেয়েছেন, কাদের কাদের ফর্ম পূরণ না হয়েই ফেরত এল। এই ১০ লক্ষের মধ্যে ৬.৫ লক্ষ মৃত ভোটার রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছেন একাধিক জায়গায় নাম, স্থানান্তরিত এবং নিরুদ্দেশ ভোটারও। বাদ পড়ার ক্ষেত্রে শতাংশের বিচারে উত্তর কলকাতা এগিয়ে রয়েছে। কমিশন সূত্রে খবর, চলতি সপ্তাহের মধ্যে পুরো তথ্য চলে আসার কথা। তখন এই সংখ্যাটি কত দাঁড়ায় তা দেখার। ২০২৫ সালের ২৭ অক্টোবরের তালিকা থেকে মোট কত নাম বাদ পড়ল তা জানা যাবে খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে। আগামী ৯ ডিসেম্বর খসড়া তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন।

কমিশন জানাচ্ছে, ২৪ নভেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজ্যে ৯৯.৭৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৭ কোটি ৬৪ লক্ষের বেশি এনুমারেশন ফর্ম বিলি করা হয়েছে। খুবই অল্প সংখ্যক ফর্ম বিতরণ বাকি রয়েছে। পূরণ করা ফর্ম ডিজিটাইজ় করা হয়ে গিয়েছে ৪ কোটির বেশি (৫৯.৪ শতাংশ)। এখনও পর্যন্ত ওই কাজ চলছে।

রবিবারই পশ্চিম বর্ধমানের এক মহিলার নাম রাজ্যের ৪৪টি আলাদা আলাদা জায়গার ভোটার তালিকায় থাকার অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছিল। মায়ারানি গোস্বামী নামে পাণ্ডবেশ্বরের ওই মহিলার নামে ৪৪টি ভুয়ো এপিক কার্ড রয়েছে বলে অভিযোগ। কমিশন সূত্রে খবর, এ সব ক্ষেত্রে নকল ভোটার শনাক্ত করে খসড়া তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। আবার, ঠিকানা পরিবর্তন করায় কারও কারও বাড়ি তিন-চার বার গিয়েও তাঁদের হদিস পাননি বিএলও-রা। আপাতত সব মিলিয়ে এই সংখ্যাটাই অন্তত ১০ লক্ষ।

এসআইআর পর্বে বার বার ‘অনুপ্রবেশ তত্ত্বে’ শাণ দিয়েছে বিজেপি। রবিবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ফের দাবি করেছেন, এসআইআর হলে এক কোটি ভোটারের নাম বাদ যাবে। তাতে মৃত ভোটার, একাধিক জায়গায় থাকা এক নামের পাশাপাশি বাদ পড়বেন অনুপ্রবেশকারীরাও। যদিও ‘অনুপ্রবেশকারী ভোটার’ প্রসঙ্গে এখনও কিছু জানায়নি কমিশনের সূত্র।

সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়াল বলেন, ‘‘আমরা ভোটারদের কাছে অনুরোধ করেছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এনুমারেশন ফর্ম জমা দিন। ৪ ডিসেম্বর শেষ দিন, তার কোনও পরিবর্তন হয়নি।’’

এগিয়ে কোন কোন জেলা

কমিশনের তরফে আরও জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত এসআইআরের যা কাজ হয়েছে, তাতে রাজ্যের পাঁচটি জেলা এগিয়ে রয়েছে। পূর্ব বর্ধমানে ৬৬.৪৭ শতাংশ, আলিপুরদুয়ারে ৬৬.৪১ শতাংশ, উত্তর দিনাজপুরে ৬৫.৪৩ শতাংশ, মালদহে ৬৬.২৩ শতাংশ এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ৬৫.২৭ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে ভাল কাজ হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার গোসাবায়। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত
১২১ জন বিএলও। ইতিমধ্যেই ১০০ শতাংশ কাজ সেরে ফেলেছেন।

বিএলও-মৃত্যু

‘এসআইআরের কাজের চাপে’ এখনও পর্যন্ত রাজ্যে তিন জন বিএলও-র মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে সিইও মনোজ বলেন, কী ভাবে বিএলও-দের মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টও চাওয়া হয়েছে। কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে এই মর্মে কমিশনকে জানানো হবে। মনোজ আরও জানিয়েছেন, কোনও বিএলও কাজের মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা শারীরিক সমস্যা থাকলে ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও) সেই বিএলও-কে পরিবর্তন করতে পারবেন। এর জন্য সিইওর অনুমতির প্রয়োজন নেই।

সিইও জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গই দেশের একমাত্র রাজ্য যেখানে এখনও পর্যন্ত কোনও বিএলও-র বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়নি। কাজ করতে গিয়ে কোনও ভুল হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট বিএলও-কে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু, শাস্তি দেওয়া হয়নি। তবে ইচ্ছাকৃত ভাবে কেউ কিছু করলে শাস্তি হবে।

বরং মোটের উপর বিএলও-দের ভূয়সী প্রশংসাই শোনা গিয়েছে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের মুখে। তিনি বলেন, ‘‘বিএলও-রা প্রচুর কাজ করছেন। তাঁরাই এসআইআরের হিরো!’’

কী কাজ বাকি?

গত ৪ নভেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গে ঘরে ঘরে গিয়ে এনুমারেশন ফর্ম বিলি করার কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ৪ ডিসেম্বর ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ দিন। কমিশনের তথ্য বলছে, এ রাজ্যে মোট ভোটারের সংখ্যা ৭,৬৬,৩৭,৫২৯। এখনও পর্যন্ত ফর্ম বিলি হয়েছে ৭,৬৪,৪৮,০০৬টি। অর্থাৎ, এখনও প্রায় ২ লক্ষ মানুষের হাতে ফর্ম পৌঁছনো বাকি। ডিজিটাইজ় হয়েছে ৪,২৮,৯৮,৩৫০টি ফর্ম। আরও প্রায় ৪১ শতাংশ ফর্মের ডিজিটাইজ়েশন বাকি। মোট ভোটারের ২.৫ শতাংশের ম্যাপিং-ও বাকি রয়েছে। অথচ হাতে আর ১০ দিনও নেই। পুরোদমে কাজ চলছে।

Advertisement
আরও পড়ুন