SIR

নাগরিক প্রমাণে হলফনামা! শীত ও মশা উপেক্ষা করে আগের দিন সন্ধ্যা থেকেই জমছে ভিড়

সূর্য ডুবতেই আদালত চত্বরের বাইরে ভিড় জমাতে শুরু করছেন বহু মানুষ। কেউ দোকানের সিঁড়িতে, কেউ বা নোংরা নর্দমার পাশে রাত কাটাচ্ছেন শুধুমাত্র একটি হলফনামার আশায়। যা আদালত থেকে পাওয়া যাবে সকালে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০২:১১
নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হলফনামার জন্য অপেক্ষা।

নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হলফনামার জন্য অপেক্ষা। — নিজস্ব চিত্র।

এসআইআর আবহে অমানবিক চিত্র সামনে এল পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমা আদালতের বাইরে। হলফনামা করানোর জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে আগের দিন সন্ধ‍্যা থেকে। ঠান্ডা ও মশার উপদ্রপ উপেক্ষা করে দিতে হচ্ছে লম্বা লাইন।

Advertisement

সূর্য ডুবতেই আদালত চত্বরের বাইরে ভিড় জমাতে শুরু করছেন বহু মানুষ। কেউ দোকানের সিঁড়িতে, কেউ বা নোংরা নর্দমার পাশে রাত কাটাচ্ছেন শুধুমাত্র একটি হলফনামার আশায়। যা আদালত থেকে পাওয়া যাবে সকালে। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরকেও অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘ লাইনে।

অপেক্ষারতদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন মাত্র ২০ থেকে ২৫টি করে হলফনামা দেওয়া হয়। সেই কারণেই আগের দিন থেকেই আদালত চত্বরে অপেক্ষা করে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ঠান্ডার পাশাপাশি মশার কামড় তো আছেই সেই সঙ্গে অন্ধকারে অপেক্ষা করে ও না খেয়ে রাতভর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে অনেককে।

পরিচয়পত্রে নাম, জন্মতারিখ বা অন্য কোনও তথ্যে সামান্য ভুল থাকলে দ্রুত সংশোধনের ভরসা হয়ে উঠেছে হলফনামা। অভিযোগ, প্রতিদিন ভুল সংশোধনের জন্য কাটোয়া মহকুমা আদালতে হলোপনামা করানো হলেও চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম। ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা কম থাকার জন্য জমা পড়া আবেদনের তুলনায় প্রতিদিন গড়ে মাত্র ২০টি করে হলফনামা হচ্ছে। এতেই ঘুম উড়েছে সাধারণ মানুষের।

হলফনামার জন্যই দূর-দূরান্ত থেকে কাটোয়া আদালতে হাজির হচ্ছেন বহু মানুষ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অনেক বয়স্করাও। অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে নেই উপযুক্ত বসার জায়গা, পর্যাপ্ত আলো, খাবার জল বা ন্যূনতম পরিকাঠামো।

কেতুগ্রামের সুষমা ঘোষ বলেন, ‘‘লাইন পাওয়া যায় না বলে বিকেল থেকেই দাঁড়িয়ে আছি। রাতের অন্ধকারে মশার কামড়ে যত কষ্টই হোক না কেন হলফনামা নিতেই হবে।”

জসিমুদ্দিন আহমেদ নামের এক জন বলেন, ‘‘নথিতে বাবার নামে ভুল থাকার জন্য এসআইআর শুনানিতে ফার্স্ট ক্লাস জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে এভিডেভিট করতে বলা হয়েছে। কাটোয়া আদালতে প্রতিদিন মাত্র ২০টি করে এফিডেভিট হচ্ছে। আমরা দূরের গ্রামে থাকি তাই বাধ্য হয়েই এই ঠান্ডার রাতে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে।” এসআইআর শুনানিতে ডাক পড়া বহু জনের হলফনামা যে হেতু জরুরি তাই প্রতিদিন তার সংখ্যা বাড়ানোর দাবি উঠছে।

এই প্রসঙ্গে কাটোয়া বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তথা কাটোয়া আদালতের অ‍্যাডভোকেট সৌমেন সরকার বলেন, ‘‘বর্তমানে কাটোয়া আদালতে এভিডেভিট সংক্রান্ত একটা সমস্যা চলছে। আদালতে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কম থাকার জন্য প্রত্যেক দিন ২০টি করে এভিডেভিড হচ্ছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। কারও নথিতে নাম ভুল রয়েছে, কারও জন্ম তারিখ আবার কারও বা জন্মের তথ্য সংক্রান্ত সমস্যা। এসআইআর প্রক্রিয়ায় তা ঠিক করার জন্য প্রয়োজন এভিডেভিড। তবে নোটারি পাবলিক বাদ।’’

তাঁর প্রশ্ন, শুনানিতে জুডিশিয়াল এভিডেভিড চাওয়া হচ্ছে কেন? সৌমেনের দাবি, ‘‘এটা অন্যায়।’’ জুডিশিয়াল এভিডেভিড নিয়ে কি নির্বাচন কমিশনের কোনও নির্দেশিকা রয়েছে কি না তা-ও জানতে চান তিনি। প্রশ্ন তুলেছেন, নোটারি পাবলিক দিয়ে এভিডেভিড জমা না নেওয়া নিয়েও।

Advertisement
আরও পড়ুন