শুক্রবার গণবিবাহের আসর বর্ধমানে। — নিজস্ব চিত্র।
শীতকাল মানেই মেলার মরসুম। তবে এ যে সে মেলা নয়। একে বারে বিয়ের মেলা! শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানে বসল হিন্দু, মুসলমান, আদিবাসী-সহ আট রাজ্যের বাসিন্দাকে নিয়ে এই গণবিবাহের আসর। সংখ্যায় মোট ১২৫ জোড়া। সকাল থেকেই কাঞ্চননগর কঙ্কালেশ্বরী মন্দিরকে ঘিরে ছিল উৎসবের মেজাজ। বরপক্ষ ছিল টাউনহলে। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, বিয়ের ভোজ আর ৩০ রকম বাজনা নিয়ে এক অন্য রকম বিয়ের মেলার সাক্ষী থাকল সকলে। প্রতি বছরের মতোই এ বছরও গণবিবাহের আয়োজন করেন বিধায়ক খোকন দাস।
প্রত্যেক পাত্রীর জন্য সাজানো ছিল মণ্ডপ। ছিল সব দানসামগ্রী। তার তালিকা নজর কাড়ার মতো। এ পর্যন্ত গত ১২ বছরে ১২০০-র বেশি বিয়ে হয়েছে এখান থেকে। বিধায়ক খোকন দাস এই মহা সমারোহের আয়োজক। রাজ্যের অনেক মন্ত্রী, বেশ কয়েক জন বিধায়ক, ৩০ জনের বেশি কাউন্সিলর হাজির ছিলেন। আর ছিলেন অসংখ্য উৎসাহী মানুষ। বর ও কনেপক্ষের ২৫ জন করে দু’বেলা খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। শুক্রবার গণবিবাহের আসরে ১৯ জন ভিন্রাজ্যের মেয়ের বিয়ে হয়। তা ছাড়া ছিলেন একজন বিশেষভাবে সক্ষম পাত্রীও। তাঁকে ভাল লাগায় বিয়ে করেছেন পূর্ব বর্ধমানের কালনার শিবশঙ্কর পাল।বিয়ের আসরে ছিলেন মুসলমান পরিবারের পাত্র-পাত্রীরাও। তাঁরা জানিয়েছেন, এ ভাবে বিয়ে করে তাঁরা মোটেই অখুশি নন। বিয়ের আসরে বাজি, গান-বাজনা থেকে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আনন্দে সবই মাতলেন।
গত ১২ বছর ধরে খোকনের উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে। যখন শুরু হয় তখন তিনি ছিলেন কাউন্সিলর। তখন থেকেই বর-কনেকে সব দানসামগ্রী উপহার দেওয়া হত। এ বারেও তাই দেওয়া হয়েছে। এতে থাকে সাইকেল, সেলাই মেশিন, সোনার গয়না থেকে বিয়েতে যা যা লাগে সবই। এমন কি সংসার চালাবার মতো অনেক সামগ্রীও দেওয়া হয়। দেওয়া হয় জীবনবীমার কাগজও। প্রতি বারই বর এবং কনেপক্ষের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এ বারে ৩০ রকম বাজনা বাজিয়ে পাত্ররা শোভাযাত্রা করে বিয়ে করতে আসেন। খোকন জানান, এ বারে ২৫ জন আদিবাসী, ৮ জন মুসলমান, ২৬ জন অবাঙালি ও ২ জন মতুয়া মেয়ের বিয়ে হয়েছে এই গণবিবাহে। যে যার ধর্মীয় প্রথা এবং রীতি মেনেই এখানে বিয়ে করেছেন। অন্য রাজ্যের মধ্যে রাজস্থান থেকে দু’জন, দিল্লি থেকে এক জন, হরিয়ানা থেকে এক জন, উত্তরপ্রদেশ থেকে পাঁচ জন, বিহার থেকে চার জন, ঝাড়খণ্ড থেকে তিন জন এবং কর্ণাটক থেকে এক জন পাত্রপাত্রীর বিয়ে হয়েছে।
খোকন জানান, দীর্ঘ ১২ বছরে ১২০০-র বেশি বিয়ের মধ্যে মেশির ভাগ জন সুখে ঘরকন্না করছেন। মাত্র দু’তিন জনের সমস্যা হয়েছিল। তা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটিমাত্র বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। বিয়েপ পর কোনও সমস্যা হলে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়।