গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, ‘‘এত দিন চাকরি করেছেন ৩২ হাজার শিক্ষক। তাঁদের পরিবারের কথা ভেবে আদালত চাকরি বাতিল করছে না।’’
দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু এতগুলো পরিবারের দিকে তাকিয়ে চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্ত খারিজ করা হল।
প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় বাতিল করে দিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বুধবার রায়ে জানানো হল, ৩২ হাজার চাকরিপ্রার্থীর কাজ থাকছে।
রায়ের কপিতে স্বাক্ষর করেন দুই বিচারপতি। রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতি চক্রবর্তী।
২টো ২৪: বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্র এজলাসে এলেন।
দুপুর ২টো: এজলাসে ভিড় বাড়ছে। এসে গিয়েছেন আইনজীবীরা। অপেক্ষা রায়ের। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করবে। অন্য দিকে, বাইরে প্রাথমিক শিক্ষক, চাকরিপ্রার্থী এবং মামলাকারীদের ভিড়।
প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি থাকবে কি? বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ সেই রায় দেবেন।
২০২৩ সালের ১২ মে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
তার আগে শুনানি চলাকালীন আদালত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ার প্যানেলের নম্বর বিভাজন-সহ তালিকা তলব করেছিল। পর্ষদ তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে তালিকা জমা দিয়ে জানায়, প্যানেলের চাকরি প্রাপকদের সর্বনিম্ন নম্বর ১৪.১৯১। পর্ষদের এই বক্তব্যে ভুল রয়েছে বলে দাবি করেন মামলাকারীরা। তাঁদের চেয়ে ১৩ নম্বর কম পেয়েও চাকরি পেয়েছেন ৮২৪ জন চাকরিপ্রার্থী। ওই ৮২৪ জনের নাম প্যানেলে রয়েছে। তার প্রেক্ষিতে আদালত পর্ষদের কাছে তথ্য চেয়ে পাঠায়। কিন্তু তা দিতে পারেনি তারা। শুধু তা-ই নয়, শুনানি চলাকালীন মামলাকারীরা তফসিলি জাতি (এসসি), তফসিলি উপজাতি (এসটি) এবং অন্যান্য অনগ্রসর জাতির (ওবিসি) প্রার্থীদের প্যানেল প্রকাশের দাবিও জানিয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, প্যানেল প্রকাশ করলেই স্পষ্ট হবে ওই প্রার্থীদের সর্বনিম্ন নম্বর কত। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও পর্ষদ নীরব থেকেছে। সেই তথ্য আদালতে জমা করতে পারেনি।
‘বঞ্চিত’ চাকরিপ্রার্থী প্রিয়াঙ্কা নস্কর-সহ ১৪০ জন হাই কোর্টে ২০১৪ সালের প্রাথমিকে নিয়োগপরীক্ষায় (টেট) দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা চাকরি পাননি। মামলাকারীরা যে নিয়মের কথা বলেছিলেন সেটা অনুযায়ী, এনসিটিই-এর (জাতীয় শিক্ষক শিক্ষণ পর্ষদ) নিয়ম মেনে শিক্ষক হওয়ার জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। মামলাকারীদের বক্তব্য, ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যে প্যানেল তৈরি করা হয়েছে, তাতে একাধিক অনিয়ম রয়েছে। নিয়মে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চাকরিপ্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হলেও দেখা গিয়েছে, ওই প্যানেলের বেশির ভাগ চাকরিপ্রার্থী প্রশিক্ষণহীন। ফলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
২০১৪ সালের ‘টেট’-এর ভিত্তিতে ২০১৬ সালে ৪২৫০০ শিক্ষক নিয়োগ হয় প্রাথমিক স্কুলগুলিতে। ওই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় বেনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।