CM Mamata Banerjee

বাংলা ভাষা ও ভোটার তালিকা নিয়ে তীব্র আন্দোলনের ডাক মমতার, ঝাড়গ্রাম থেকে আবার বোঝালেন ভোটের অভিমুখ

দু’টি বিষয়কে অভিমুখ করেই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অবতীর্ণ হতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিকে বিঁধতে তাঁর জোড়া রণকৌশল নিয়েই বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামের মঞ্চ থেকে আক্রমণ শানালেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৫ ১৫:৫৮
CM Mamata Banerjee hints at 2026 assembly elections with voter list and Bengali language in Jhargram speech

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

ভোটার তালিকা এবং বাংলা ভাষা আন্দোলন! এই দুটি বিষয়কে অভিমুখ করেই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অবতীর্ণ হতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপিকে বিঁধতে তাঁর জোড়া রণকৌশল নিয়েই বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের মঞ্চ থেকে আক্রমণ শানালেন তিনি।

Advertisement

নির্বাচন কমিশনের শুরু করা “স্পেশ্যাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ (এসআইআর) নিয়ে তিনি যে ক্ষুব্ধ তা বুঝিয়ে দিয়েছেন বক্তৃতায়। সঙ্গে বাংলা ভাষা নিয়েও যে তাঁর আন্দোলন চলবে তা আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ভোটার তালিকা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে যেমন নিশানা করলেন, তেমনই বাংলা ভাষা নিয়ে বিজেপি নেতাদের বিরূপ মন্তব্যকে হাতিয়ার করে আক্রমণ শানালেন মমতা।

মমতা বলেন, ‘‘কেউ যদি বলে ফর্ম ফিলাপ করুন আমরা কিছু দেব। না জেনে করবেন না। আপনার ডিটেলস নিয়ে ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ দিয়ে দেবে। তার পরেই বলবে এই নাও এনআরসির নোটিস।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা মানব না। আমরা চাই আমাদের আদিবাসী, তফসিলি, দলিত, হিন্দু, মুসলিম হোক। আর আমার কন্যাশ্রীই হোক, সকলের নাম ভোটার লিস্টে তুলতে হবে।’’ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে মমতা বলেন, ‘‘আমি জানি না এটা আমার বলা ঠিক কি না, তবে আমি বলছি কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। শুধু এপিক কার্ড থাকলেই আর হবে না, নতুন করে নাম তোলার চক্রান্ত চলছে। কারণ নিয়ম পাল্টে দিয়েছে। ভোটার লিস্টে নাম আছে কি না, আগে তালিকা দেখলেই হবে না। নতুন করে নাম তোলার আবার চক্রান্ত চলছে। আগের ভোটার লিস্টে নাম থাকলে হবে না। নতুন ভোটার লিস্টে গিয়ে ক্রস চেক করতে হবে। ২০০২ সালের আগে যাদের জন্ম বা ২০০২ সালে যাদের ভোটার লিস্টে নাম উঠেছে, তাদের বলছে বাবা-মায়ের বার্থ সার্টিফিকেট আনতে হবে। তখন মাত্র ৬০ শতাংশ মানুষের জন্মের সার্টিফিকেট থাকত। তাই ২০০৪-এর পর যাদের জন্ম তাদের বাবা-মায়ের সার্টিফিকেট থাকা সম্ভব কি!’’ তিনি বলেন, “আমরাও তো হোম ডেলিভারি, আমাদের স্কুলের সার্টিফিকেটই আছে শুধু। ওদের সার্টিফিকেট আছে তো? যাঁরা আইন করছেন, তাঁদের আছে তো? ওঁরা সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মেছেন, খেটে খাওয়া মানুষের কথা বুঝবেন কী করে!” আমি জিজ্ঞাসা করছি, যাঁরা আইন করছেন, তাঁদের মা-বাবার বার্থ সার্টিফিকেট আছে তো? ’’

মমতা বলেন, ‘‘বাংলা ভাষা বলে কোনও ভাষা না থাকলে কোন ভাষায় জাতীয় সঙ্গীত লেখা? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন ভাষায় কথা বলতেন, স্বামীজি, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কোন ভাষায় কথা বলতেন? ’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রত্যেক মানুষের একটা ভাষা আছে। ভাষা তাঁর সম্মান, ভাষা তাঁর গর্ব। নেতাজি কোন ভাষায় কথা বলতেন? অপদার্থগুলো বলছে বাংলা বলে কোনও ভাষা নেই। মনে রাখবেন ভোটার লিস্ট আর ভাষার সম্মান কেউ ছাড়বেন না। মনে রাখবেন এই মাটি সোনার মাটি। ’’

মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘‘সরকারি কর্মচারীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। কালকে আমার দুই অফিসারকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। কি না, তাঁদের সাসপেন্ড করা হল। আমরা বলি, তোমার নির্বাচন এখনও ঘোষণা হয়েছে? কোন আইনের বলে তুমি নোটিস পাঠাচ্ছ? সাসপেন্ড করছ। আর বলে দিচ্ছ, এফআইআর করতে হবে। হবে না। আমি কারও পানিশমেন্ট হতে দেব না। এটা মাথায় রাখবেন।” প্রসঙ্গত, ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে বড়সড় গলদ ধরা পড়েছিল। রাজ্যের দুই ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারের (ইআরও) বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। ওই দুই অফিসারের বিরুদ্ধে এফআইআরের সুপারিশ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে কমিশন চিঠি পাঠিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তিনি যে রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের পাশেই রয়েছেন, ফের বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা।

Advertisement
আরও পড়ুন