Lionel Messi in Kolkata

এসআইআর নিয়ে ‘উজ্জীবিত’ বিজেপি যুবভারতী-কাণ্ডকে নতুন ‘অস্ত্র’ করছে! দিলীপের পোস্ট দেখিয়ে কটাক্ষে তৃণমূল

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রবিবার জানিয়েছেন, সোমবারও বিজেপি যুবভারতী-কাণ্ড নিয়ে পথে নামবে। আওয়াজ তুললেন, ‘‘যুবভারতীর ঘটনা ঘিরে যে নিন্দার ঝড় উঠেছে, তাকে প্রতিবাদে পরিণত করতে হবে।’’

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:৪১
(বাঁ দিক থেকে) শুভেন্দু অধিকারী, শমীক ভট্টাচার্য এবং দিলীপ ঘোষ।

(বাঁ দিক থেকে) শুভেন্দু অধিকারী, শমীক ভট্টাচার্য এবং দিলীপ ঘোষ। — ফাইল চিত্র।

যুবভারতী বিপর্যয়ের রেশ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টায় বিজেপি। লিয়োনেল মেসির আগমন ঘিরে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল, শনিবার দুপুর থেকেই তা নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছিল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। শুধু পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা নন, সুধাংশু ত্রিবেদীর মতো প্রথম সারির জাতীয় মুখপাত্রকে দিয়ে নয়াদিল্লি থেকে তোগ দাগানো হয়েছিল। রবিবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ‘নিন্দার ঝড়কে প্রতিবাদে পরিণত’ করার ডাক দিলেন। কর্মরত কোনও বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্তের দাবি তুলে পর পর দু’দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচিও ঘোষণা করে দিলেন।

Advertisement

এসআইআর নিয়ে এমনিতেই ‘উজ্জীবিত’ বিজেপি। এ বার আরও এক নতুন ‘অস্ত্রে’ তৃণমূলকে ঘায়েল করার সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইছে না বলে অনেকে মনে করছেন। বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁয়ের নেতৃত্বে ধর্মতলায় রবিবার বিক্ষোভ দেখানো হল। তার কয়েক ঘণ্টা আগে রাজ্য দফতরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে শুভেন্দু জানান যে, রবিবারের মতো সোমবারও বিজেপি পথে নামবে। তাঁর কথায়, ‘‘যুবভারতীর ঘটনা ঘিরে যে নিন্দার ঝড় উঠেছে, তাকে প্রতিবাদে পরিণত করতে হবে। আমরা এই বিষয় ছাড়ছি না। প্রতিবাদ চলবে। সবে শুরু।’’

রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য শনিবারই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তোপ দেগেছিলেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার, বিজেপির আইটি সেলের সর্বভারতীয় প্রধান অমিত মালবীয়রাও শনিবার থেকেই বিষয়টি নিয়ে সুর চড়াতে শুরু করেছিলেন। তার পরে বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্ররা যখন দিল্লি থেকে এই বিষয় নিয়ে সরব হতে শুরু করেন, তখনই বোঝা গিয়েছিল যে, যুবভারতী-কাণ্ড নিয়ে তৃণমূলকে চেপে ধরতে বিজেপি তৎপর। রবিবারের সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দুর তোলা একগুচ্ছ দাবিতে আরও স্পষ্ট হল যে, এই ঘটনাকে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ করে তুলতে বিজেপি মরিয়া।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবারই প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার রায়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন যুবভারতী-কাণ্ডের তদন্তের জন্য। শুভেন্দু রবিবার বলেন, ‘‘নিজের পাড়ার লোকেদের নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কমিটি বানিয়েছেন। ওই তদন্ত কমিটি আমরা মানি না। হাইকোর্টের কর্মরত বিচারপতির নেতৃত্বে নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। সেই তদন্তে কলকাতা পুলিশ, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বা বিধাননগর পুলিশ কোনও ভাবেই থাকবে না।’’ যাঁরা টিকিট কেটে মেসিকে দেখতে শনিবার যুবভারতী গিয়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে টাকা ফেরত দিতে হবে বলেও শুভেন্দু দাবি করেছেন। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুকে অবিলম্বে বরখাস্ত করার দাবিও তুলেছেন তিনি।

বিরোধী দলনেতা রবিবারের সাংবাদিক বৈঠকে বেশ কিছু ছবি দেখিয়েছেন। মেসিকে ঘিরে কখনও ক্রীড়ামন্ত্রী, কখনও তাঁর পরিবার, কখনও মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার বা কখনও দমকল মন্ত্রীর পরিবার দাঁড়িয়েছিলেন বলে তিনি দাবি করেছেন। তৃণমূলের প্রথম সারির নেতামন্ত্রী তথা তাঁদের ঘনিষ্ঠ লোকজন মেসিকে ওই ভাবে ঘিরে রেখেছিলেন বলেই দর্শকাসন থেকে কেউ তারকা ফুটবলারকে দেখতে পাননি বলে শুভেন্দু অভিযোগ করেন। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘ভোটের আগে মেসিকে দিয়ে খেলা হবে বলিয়ে নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজে অনেক জিনিসপত্র কিনে এনেছিলেন। কার্বাইড দিয়ে যেমন ফল পাকানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী তেমনই ক্ষয়িষ্ণু জনপ্রিয়তা থেকে দলকে উদ্ধার করতে ভোটের আগে মেসিকে দিয়ে ‘খেলা হবে’ করতে গিয়েছিলেন, উল্টো খেলা হয়ে গিয়েছে। ১৫ বছরে প্রথম বার গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পালিয়ে গিয়েছেন।’’

প্রশাসক হিসাবে মমতা কতটা ‘ব্যর্থ’, তা বোঝাতে শনিবারই তেলঙ্গানার রাজধানী হায়দরাবাদে হওয়া মেসির অনুষ্ঠানের ছবি দেখাতে শুরু করেছে বিজেপি। যদিও তেলঙ্গানায় এখন কংগ্রেসের সরকার এবং সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর উপস্থিতিতে সেখানে মেসির অনুষ্ঠান হয়েছে, তবু সে অনুষ্ঠানের মসৃণ ব্যবস্থাপনার ছবি তুলে ধরতে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি পিছপা হচ্ছে না। কলকাতার মতো হাদয়রাবাদ, মুম্বই বা দিল্লির ক্ষেত্রেও মেসির অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক শতদ্রু দত্ত। কারণ তিনিই মেসির এই ভারত সফরের প্রধান উদ্যোক্তা। শতদ্রুর আয়োজিত অনুষ্ঠান অন্যান্য শহরে সুষ্ঠু ভাবে মিটছে (যদিও শতদ্রু এখন পুলিশ হেফাজতে), কিন্তু তৃণমূলের ‘দুর্নীতি ও অপদার্থতা’র কারণে কলকাতায় তা সম্ভব হল না— এই ভাষ্য বিজেপি তুলে ধরার চেষ্টা শুরু করেছে।

শতদ্রুর গ্রেফতারি নিয়েও রবিবার শুভেন্দু প্রশ্ন তুলেছেন। শতদ্রুকে ‘বলির পাঁঠা’ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য পুলিশের এডিজি-আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিম সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলেন যে, শতদ্রু দত্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শতদ্রু গ্রেফতার বলে দুপুর ২টো ৪৯ মিনিটে জানানো হয়েছে। অথচ এফআইআর নথিভুক্ত হয়েছে সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে।’’ এফআইআরে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে বলেও শুভেন্দু অভিযোগ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সাড়ে ১২টা থেকে ৪টের মধ্যে ঘটনা ঘটেছে বলে এফআইআরে লেখা হয়েছে। ঘটনা আসলে সাড়ে ১২টা নাগাদ শেষ হয়ে গিয়েছে।’’ বিরোধী দলনেতার দাবি, এমন ভাবে এফআইআর লেখানো হয়েছে, যার সঙ্গে কোনও তথ্যপ্রমাণ মিলবে না, ফলে মামলাই দাঁড়াবে না। তিনি বলেন, ‘‘এফআইআর ওই ভাবে করা হয়েছে মন্ত্রীদের বাঁচাতে, মমতার পরিবারকে বাঁচাতে।’’

বিজেপির এই আক্রমণাত্মক মেজাজের মাঝে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের একটি পোস্ট। যুবভারতী-কাণ্ড নিয়ে রাজ্য সরকারকেই বিঁধেই শনিবার পোস্টটি করেছিলেন দিলীপ। কিন্তু মেসিকে সে পোস্টে ‘ক্রিকেটার’ লেখা হয়েছিল। পরে তা সংশোধন করে ‘ফুটবলার’ লেখা হয়। কিন্তু তার আগেই দিলীপের পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ শুরু করে তৃণমূল। দিলীপ সে প্রসঙ্গে রবিবার আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, ‘‘ওই পোস্টে আমার বক্তব্যের ভিডিয়োও রয়েছে। সেই ভিডিয়োটা দেখলেই বুঝবেন, আমি ফুটবলারই বলেছিলাম। ভিডিয়োটি যিনি আমার ফেবসুক পেজে পোস্ট করেছেন, উপরে কয়েক লাইন লিখতে গিয়ে তিনি ভুল করে ‘ক্রিকেটার’ লিখেছিলেন। ভুলটি নজরে আসার পরে সংশোধন করে নেওয়া হয়।’’ দিলীপের কথায়, ‘‘তৃণমূল দিশাহারা হয়ে এখন খড়কুটো আঁকড়ে বাঁচতে চাইছে।’’

একা দিলীপ নন, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির প্রথম সারির আরও অনেকেই দাবি করছেন যে, তৃণমূল ‘দিশাহারা’। এসআইআর প্রক্রিয়ার প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার পরে যে পরিমাণ ‘গরমিলের’ আভাস মিলছে, তা দেখেই তৃণমূল ‘দিশাহারা’ এবং বিজেপি ‘উজ্জীবিত’ বলে বিজেপি নেতাদের দাবি। তার মধ্যে যুবভারতীতে যে ঘটনা শনিবার ঘটেছে, তা তৃণমূলকে আরও ‘ব্যাকফুটে’ ঠেলল বলে বিজেপি নেতারা মনে করছেন।

Advertisement
আরও পড়ুন