Lionel Messi in Kolkata: Salt Lake Stadium vandalised

স্টেডিয়ামের ভিতরে যা হয়েছে, তার জন্য আমি কেন দায়ী? প্রশ্ন তুললেন শতদ্রু! পুলিশের যুক্তি মেনে হেফাজতেই পাঠাল কোর্ট

শতদ্রুর আইনজীবী দাবি করেছেন, তাঁর মক্কেল মেসিকে রাজ্যে নিয়ে এসেছিলেন একটি ‘মহৎ’ উদ্দেশ্যে। বাংলার খুদে ফুটবলারেরা যাতে তাঁর থেকে শিখতে পারেন, সেটাই ছিল উদ্দেশ্য।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:৩৯
রবিবার সকালে বিধাননগর মহকুমা আদালতে শতদ্রু দত্ত।

রবিবার সকালে বিধাননগর মহকুমা আদালতে শতদ্রু দত্ত। — নিজস্ব চিত্র।

তিনি কোনও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেননি। মাঠে কী হয়েছে, সেই দায় তাঁর নয়। রবিবার সকালে বিধাননগর মহকুমা আদালতে দাঁড়িয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে এমনই দাবি করলেন কলকাতায় লিয়োনেল মেসির অনুষ্ঠানের আয়োজক শতদ্রু দত্ত। নিজের মক্কেলের জামিনের আবেদনও করেন আইনজীবী। সরকারি আইনজীবী পাল্টা সওয়াল করে জানান, মেসির সামনে কে যাবেন, কে যাবেন না তাঁর দায়িত্ব ছিল আয়োজকেরই। কিন্তু সেখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল। এর পরেই শতদ্রুর জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে কোর্টে। ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে শতদ্রুকে।

Advertisement

শনিবার বিমানবন্দরের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয় শতদ্রুকে। রবিবার তাঁকে বিধাননগর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়। সেখানেই শতদ্রু আইনজীবীর মাধ্যমে বলেন, ‘‘আমার অতীতে যা খ্যাতি ছিল, তা নষ্ট হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে একাধিক আইনের ধারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কে দোষ করেছে? আমি কোনও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করিনি।’’ শতদ্রুর বিরুদ্ধে এমপিও (মেনটেন্যান্স অফ পাবলিক অর্ডার), পিডিপিপি (প্রিভেনশন অফ ড্যামেজ অফ পাবলিক প্রপার্টি) আইনে মামলা রুজু হয়েছে। আদালতে সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর আইনজীবী। তাঁর সওয়াল, ‘‘আমি কী করেছি, যে এই আইনে আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে?’’

তার পরেই শতদ্রু আইনজীবী দ্যুতিময় ভট্টাচার্যের মাধ্যমে আদালতে বলেন, ‘‘আমি এক জনকে নিয়ে এসেছি, যিনি শিক্ষা দেবেন। বাচ্চাদের দেখাবেন। স্টেডিয়ামে কী হয়েছে, তার জন্য আমার বিরুদ্ধে কেন মামলা হবে? ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজত কেন চাওয়া হচ্ছে?’’ জামিন যদি না হয়, তা হলে হেফাজতের দিন সংখ্যা কমানো হোক বলে আর্জি জানিয়েছেন তিনি।

সরকারি আইনজীবী অমিতাভ লালা শতদ্রুর এই দাবি মানেননি। তিনি আদালতে সওয়াল করে বলেন, ‘‘তদন্তে উঠে এসেছে, অন্যদের সঙ্গেও একই কাজ করেছেন ধৃত। মেসির সামনে কে যাবেন, কে যাবেন না, তার দায়িত্ব আয়োজকেরই। তিনি নিজের লোকদের নিয়ে এমন ঘিরে ছিলেন, যে বাকি লোকেরা মেসিকে দেখতে পাননি।’’

শনিবার যুবভারতীর মাঠে মেসিকে দেখতে হাজার হাজার টাকার টিকিট কেটেছিলেন দর্শকেরা। কিন্তু অনুষ্ঠানের পুরো সময়টায় ফুটবল তারকাকে ঘিরে ছিলেন আয়োজক এবং রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীরা। দর্শকাসন থেকে তাঁকে দেখতে পাননি অনুগামীরা। এর পরে মেসি মাঠ থেকে বেরিয়ে গেলে ক্রোধে ফেটে পড়েন দর্শকেরা। তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। সরকারি আইনজীবী রবিবার আদালতে সেই প্রসঙ্গও তুলেছেন। তিনি সওয়াল করে বলেন, ‘‘মেসি যখন মাঠে প্রবেশ করেন, তখন এ দিক থেকে ও দিকে যাওয়া-আসা করছিল লোকজন। দর্শকেরা মাঠ থেকে মেসিকে দেখতে পাননি।’’ সরকারি আইনজীবী ১০টি কারণে শতদ্রুকে পুলিশে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানান। প্রমাণ সংগ্রহ, বয়ান নেওয়া-সহ একাধিক কারণে ধৃতকে হেফাজতে চেয়ে আদালতে আবেদন করেন সরকারি আইনজীবী। সেই আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক।

আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে শতদ্রুর আইনজীবী জানান, তিনি মক্কেলের জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন। তাঁর মক্কেলকে ১৪ দিন হেফাজতে রাখার প্রয়োজন নেই বলেও জানিয়েছেন। কেন, সে কথাও জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যে সব কারণে পুলিশ আমার মক্কেলকে হেফাজতে চেয়েছে, তার জন্য ১৪ দিন রাখার দরকার নেই। ঘটনাস্থলের কাছেই থাকবেন আমার মক্কেল।’’ আইনজীবীর প্রশ্ন, মাঠে কে কী করছেন, না করছেন, তার জন্য শতদ্রুর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে কেন। ইভেন্ট ম্যানেজার এবং আয়োজকের কাজ এক নয়। তিনি এ-ও দাবি করেছেন, তাঁর মক্কেল মেসিকে রাজ্যে নিয়ে এসেছিলেন একটি ‘মহৎ’ উদ্দেশ্যে। বাংলার খুদে ফুটবলারেরা যাতে তাঁর থেকে শিখতে পারেন, সেটাই ছিল উদ্দেশ্য। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মক্কেলকে ভিকটিমাইজ করা হয়েছে।’’

যুবভারতীতে শনিবার সকালে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল, তার দায় শতদ্রুর নয় বলেও দাবি করেছেন আইনজীবী। তিনি এই ব্যর্থতার দায় দর্শকদের উপরেই চাপিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ব্যর্থতা আসলে মানুষের। সকলে জানেন, মেসি এক জন আন্তর্জাতিক তারকা। এটা ঠিক, অনেক টাকা দিয়ে টিকিট কেটে দর্শকেরা সেখানে গিয়েছিলেন। সকলে চাইছিলেন মেসির কাছে গিয়ে ছবি তুলতে, যাতে স্মৃতি হয়ে থাকে। কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী যে নিরাপত্তাব্যবস্থা মোতায়েন থাকে, তাকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’’ তিনি আরও জানান, দর্শকদের একটা উন্মাদনা থাকে। তবে যা পরিস্থিতি হয়েছে, তা মানা যায় না। প্রশ্ন ওঠে, তবে কি যুবভারতীর নিরাপত্তাব্যবস্থার দিকে আঙুল তুলছেন তিনি? শতদ্রুর আইনজীবী বলেন, ‘‘যাঁরা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা জানবেন কী ব্যবস্থা ছিল। এখন কাউকে দায়ী বলাটা সম্ভব না। তদন্ত করে যেটা পাওয়া যাবে, জানতে পারবেন। বিষয়টি কোর্টে বিচারাধীন।’’ তিনি এ-ও জানিয়েছেন, কলকাতা থেকে মেসি হায়দরাবাদে গিয়েছেন। সেখানে কোনও সমস্যা হয়নি। ‘সুষ্ঠু ভাবে’ হয়েছে অনুষ্ঠান। এখানে যাঁরা ঘটনাস্থলে ছিলেন, তাঁদের কিছু ইতিবাচক-নেতিবাচক কাজেই এই বিশৃঙ্খলা হয়েছে। তবে কলকাতার ঘটনা নিয়ে তিনি এই পর্যায়ে আর কিছু বলতে চান না বলেই জানিয়েছেন আইনজীবী।

Advertisement
আরও পড়ুন