Green wall across Jharkhand border

ঝাড়খণ্ড সীমানা জুড়ে গাছের সবুজ প্রাচীর তৈরি করছে রাজ্য, বায়ুদূষণ রুখতে বৃক্ষরোপণের বৃহৎ উদ্যোগ সরকারের

পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (ডব্লিউবিপিসিবি) এবং সহযোগিতায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগম। শিল্পাঞ্চল ও খনি অধ্যুষিত ঝাড়খণ্ড থেকে আসা ধূলিকণা ও দূষিত বায়ুর প্রবাহ কমাতেই এই সবুজ প্রাচীর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:৪৮
Green wall across Jharkhand border: Massive tree plantation initiative to curb air pollution in West Bengal

ত্রিস্তরীয় বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে রাজ্যের চার জেলায় গড়ে তোলা হচ্ছে সবুজ প্রাচীর। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

পশ্চিমবঙ্গের বায়ুদূষণ প্রতিরোধে এক গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ হিসাবে ঝাড়খণ্ড সীমানা সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায় ‘সবুজ প্রাচীর’ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (ডব্লিউবিপিসিবি) এবং সহযোগিতায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগম। শিল্পাঞ্চল ও খনি অধ্যুষিত ঝাড়খণ্ড থেকে আসা ধূলিকণা ও দূষিত বায়ুর প্রবাহ কমাতেই এই সবুজ প্রাচীর গড়ে তোলায় উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভূম— এই চারটি জেলায় প্রায় ৭৯৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সবুজ প্রাচীর গড়ে তোলা হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রাচীরটি তৈরি হচ্ছে ত্রিস্তরীয় বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে, যাতে দূষণ প্রতিরোধের পাশাপাশি জীববৈচিত্র রক্ষা করা যায় ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। প্রথম স্তরে ঝোপজাতীয় উদ্ভিদ, দ্বিতীয় স্তরে মাঝারি উচ্চতার গাছ এবং তৃতীয় স্তরে দীর্ঘায়ু ও বৃহদাকার বৃক্ষ রোপণ করা হচ্ছে। এই সবুজ প্রাচীর প্রকল্পে যে সব গাছ লাগানো হচ্ছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নিম, অর্জুন, করঞ্জ, জাম, পেয়ারা, কল্কে ও শিশু। এই গাছগুলি বায়ু থেকে ধূলিকণা ও ক্ষতিকর গ্যাস শোষণে বিশেষ ভাবে কার্যকর। পাশাপাশি এই প্রজাতির গাছ মাটির ক্ষয় রোধ করে, জলধারণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে একাধিক ক্ষতিকর দূষক পদার্থ পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়াচ্ছে বলে পরিবেশবিদদের দাবি। বিশেষ করে কয়লাখনি অধ্যুষিত ধানবাদ, বোকারো, রাঁচী সংলগ্ন অঞ্চল থেকে নির্গত কয়লার ধুলো, ফ্লাই অ্যাশ ও সূক্ষ্ম কণিকা (পিএম ২.৫ এবং পিএম) হাওয়ার সঙ্গে ভেসে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছোচ্ছে। এর পাশাপাশি কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ইটভাটা থেকে নির্গত সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং কার্বন মনোক্সাইডও দূষণের মাত্রা বাড়াচ্ছে।

শীতকালে উত্তর-পশ্চিম দিকের শুষ্ক বাতাস এবং তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে এই কণাগুলি সহজে ছড়িয়ে পড়ে ও বায়ুমণ্ডলে আটকে যায়। ফলে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান-সহ সংলগ্ন জেলাগুলিতে শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা ও ফুসফুসজনিত সমস্যার অভিযোগ বাড়ছে। এ ছাড়াও সীমান্তবর্তী এলাকায় বনজ আগুন ও ভারী যানবাহনের চলাচল দূষণকে আরও তীব্র করছে। বিশেষজ্ঞদের মত ছিল, আন্তঃরাজ্য সমন্বয় ছাড়া এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে খনিশিল্পে কড়া নজরদারি, সবুজ বেষ্টনী বৃদ্ধি এবং দূষণ উৎসে প্রযুক্তিগত সংস্কার জরুরি বলে মত দিয়েছিলেন তাঁরা। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েই পশ্চিমবঙ্গে সবুজ প্রাচীর নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

চলতি বছরে এই প্রকল্পের আওতায় মোট ৩৪০ হেক্টর জমিতে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। সবুজ প্রাচীর নির্মাণের ফলে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫৭ হাজার ৭২৩টি কর্মদিবস রূপায়িত হয়েছে, যা গ্রামীণ ও প্রান্তিক এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। স্থানীয় মানুষদের এই কাজে যুক্ত করে এক দিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা করা হচ্ছে, তেমনই অন্য দিকে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা।

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদের আধিকারিকদের মতে, এই সবুজ প্রাচীর সম্পূর্ণ হলে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলে বায়ুদূষণের মাত্রা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমবে। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চল সংলগ্ন এলাকাগুলিতে বাতাসের গুণমান উন্নত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে জনস্বাস্থ্যের উপর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পরিবেশবিদদের মতে, এই উদ্যোগ রাজ্যের পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ, যা ভবিষ্যতে অন্যান্য রাজ্যের কাছেও অনুকরণীয় হয়ে উঠতে পারে।

Advertisement
আরও পড়ুন