GST Raid in Domjur

৯৫০০ টাকা বেতন, ৭ কোটি টাকা জিএসটি বকেয়া! আধিকারিক হানায় হতভম্ব হাওড়ার কারখানার শ্রমিক

কার্তিক যখন কারখানায় কাজ করছিলেন, তখন খবর পান তাঁর বাড়িতে রাজ্য জিএসটি অফিসের ছয় সদস্যের একটি দল হানা দিয়েছে। যত না ভয় পান তার চেয়ে বিস্মিত হন বেশি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৫ ১৬:২৩
GST Raid

বিল হাতে হতভম্ভ কার্তিক রুইদাস। —নিজস্ব চিত্র।

পেশায় কারখানার শ্রমিক। মাসিক আয় মাত্র সাড়ে ৯ হাজার টাকা। অথচ তাঁর নাকি সাত কোটি টাকা জিএসটি বাকি! ওই বকেয়া আদায় করতে ডোমজুড়ের শ্রমিকের বাড়িতে হানা দেন জিএসটি আধিকারিকরা। চালান তল্লাশি। পুরো ঘটনায় হতভম্ব ২৫ বছরের যুবক কার্তিক রুইদাস। সোমবার এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন থানায়।

Advertisement

ডোমজুড়ের খাটোরার বাসিন্দা কার্তিক কাজ করেন ডোমজুড়ের জাতীয় সড়কের ধারে জালান কমপ্লেক্সের একটি কারখানায়। গত বৃহস্পতিবার কার্তিক যখন কারখানায় কাজ করছিলেন, তখন খবর পান তাঁর বাড়িতে রাজ্য জিএসটি অফিসের ছয় সদস্যের একটি দল হানা দিয়েছে। বাড়ি থেকে ফোন পেয়ে যত না ভয় পেয়েছিলেন তার চেয়ে বিস্মিত হয়েছিলেন ঢের বেশি। কারখানায় বলে আগেভাগে সাইকেল নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন কার্তিক।

কারখানার শ্রমিক বাড়ি ফিরতেই জিএসটি আধিকারিকেরা জানান, তাঁর নামে সাত কোটি টাকা জিএসটি বাকি। শুধু তা-ই নয়, কার্তিক নাকি কেডি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি কোম্পানির মালিক। সেখানে কার্তিকের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে ৩৬ কোটি টাকা আদানপ্রদান হয়। তিনি কোটি কোটি টাকা ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ায় অভিযুক্ত।

অফিসারদের মুখে এই সব কথা শুনে চোখ কপালে ওঠে কার্তিকের। আধিকারিকদের তিনি বলেন, সামান্য বেতনে জালান কমপ্লেক্সের একটি কারখানায় কাজ করেন। দিন আনি দিন খাই অবস্থা। ওই সামান্য আয়ে স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়ে কোনও ক্রমে সংসার টানছেন। জীবনে কোনও দিন কোনও ব্যবসা করেননি। কিংবা করার মতো সামর্থ্য বা সাহসও নেই।

কার্তিকের অভিযোগ, তাঁর নাম-ঠিকানা, প্যান কার্ড, আধার কার্ড এবং ইলেকট্রিক বিলের তথ্য ব্যবহার করে কেউ বা কারা জিএসটি পোর্টালে তার নাম তুলে দিয়েছেন। কার্তিকের ভাঙাচোরা বাড়ি এবং বাড়ির সামনের সরু রাস্তা দেখে জিএসটি আধিকারিকেরাও বোধহয় বুঝতে পারেন কোথাও একটা গন্ডগোল হচ্ছে। তাঁরা গিয়েছিলেন কার্তিকের গোডাউনে হানা দেবেন বলে। কিন্তু এ তো ভাঙাচোরা বাড়ি!

খোঁজখবর করে জিএসটি কর্তারা দেখেন, জিএসটি পোর্টালে যে দুটি মোবাইল নম্বর আছে সেগুলো ভুয়ো। কার্তিকের মোবাইল নম্বর আলাদা। ঘটনাক্রমে ওই শ্রমিক ডোমজুড় থানা এবং হাওড়া সিটি পুলিশের সাইবার সেলে অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশের তরফে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এই ঘটনার পিছনে কোনও সংঘটিত অপরাধ চক্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, মাস দেড়েক আগে কার্তিকের এক সন্তান হয়েছে। স্ত্রী এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন। এর মধ্যে জিএসটি আধিকারিকদের হানায় আতঙ্কে গোটা পরিবার। ছাপোষা পরিবারের কর্তা কার্তিক বুঝেই উঠতে পারছেন না কী করে কী হল। অস্ফুটে শ্রমিক বলেন, ‘‘আমি নাকি কোম্পানির মালিইইক! বাহ্!’’

Advertisement
আরও পড়ুন