মেসির ভারত সফরের আয়োজক শতদ্রু দত্তের রিষড়ার বাড়িতে হানা পুলিশের। — নিজস্ব চিত্র।
লিয়োনেল মেসির অনুষ্ঠানে কলকাতার যুবভারতী স্টেডিয়ামে ভাঙচুরের ঘটনার তদন্তে এ বার অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক শতদ্রু দত্তের হুগলির বাড়িতে হানা দিল পুলিশ। শুক্রবার সকালে রিষড়ায় শতদ্রুর বাড়িতে গিয়েছে বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ দল। পরিচারিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি বিলাসবহুল ওই তিনতলা বাড়িতে তল্লাশিও চালানো হয়েছে। অন্য দিকে, স্টেডিয়াম ভাঙচুরের ঘটনায় আরও তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের শুক্রবার আদালতে হাজির করানো হবে।
শুক্রবার সকালে প্রথমে রিষড়া থানায় যায় বিধাননগর পুলিশের দলটি। দলে এক মহিলা পুলিশকর্মী-সহ পাঁচ পুলিশ আধিকারিক ছিলেন। এর পর রিষড়া থানার পুলিশের সহযোগিতায় তাঁরা রিষড়ার বাঙুর পার্কে শতদ্রুর বাড়িতে পৌঁছোন। ঝাঁ-চকচকে তিনতলা বাড়িতে সুইমিং পুল এবং ফুটবল খেলার মাঠ রয়েছে। তবে বাড়িতে সে সময় পরিচারিকা ছাড়া কেউ ছিলেন না। তদন্তকারীরা তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি, বাড়ির ঘরে ঘরে তল্লাশি চালানো হয়। তবে কোনও কিছু বাজেয়াপ্ত করা হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, গোটা বিষয়টি যেহেতু তদন্তাধীন, তাই এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে মেসির অনুষ্ঠানে ‘কালো টাকা’ ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে বলে তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান। যুবভারতীকাণ্ডে পুলিশের পক্ষ থেকে বিধাননগর দক্ষিণ থানায় দু’টি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। স্টেডিয়ামে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি প্রায় ১০০ কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে আয়োজক সংস্থার বিরুদ্ধে। সূত্রের খবর, ওই বিপুল পরিমাণ কালো টাকার উৎস সন্ধানে নামতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। তা ছাড়া, কত টিকিট ও পাস বিক্রি হয়েছে, মেসির সঙ্গে ছবি তোলার জন্য যে ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে, সে সবেরও হিসাব রাখা হয়নি বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই ইসিআইআর দায়ের করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। শীঘ্রই গোটা ঘটনার তদন্তে নামতে পারে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
গত ১৩ ডিসেম্বর যুবভারতীতে মেসির অনুষ্ঠানে তাণ্ডবের পরেই কলকাতা বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল শতদ্রুকে। আপাতত তাঁকে হেফাজতে নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। মূলত ‘স্পোর্টস প্রোমোটার’ বা ক্রীড়া সংগঠক হিসাবেই পরিচিত ছিলেন শতদ্রু। অতীতে পেলে, মারাদোনা, এমিলিয়ানো মার্তিনেসকে কলকাতায় এনেছেন। কিন্তু গোল বাধে মেসির বেলায়। অনুষ্ঠান শুরুর কিছু ক্ষণের মধ্যেই মাঠজুড়ে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। পুলিশের সঙ্গে সমর্থকদের ধস্তাধস্তি, চেয়ার ভাঙা থেকে শুরু করে বোতল ছোড়া— সব মিলিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় যুবভারতীতে।
অন্য দিকে, স্টেডিয়াম ভাঙচুরের ঘটনায় আরও তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের নাম ঋজু দাস, সৌম্যদীপ দাস এবং তন্ময় দে। শুক্রবার তাঁদের আদালতে হাজির করিয়ে হেফাজতে নেওয়া হবে। এই নিয়ে যুবভারতীকাণ্ডে মোট ন’জনকে গ্রেফতার করা হল।