Asit Mazumdar Chaos at SIR Hearing

বিএলএ-রা নেই কেন? হুগলির কেন্দ্রে ঢুকে শুনানি বন্ধ করলেন তৃণমূল বিধায়ক! বললেন, লড়াই মমতা-অভিষেকের নির্দেশেই

গত শনিবার থেকে রাজ্যে এসআইআর-এর শুনানি পর্ব শুরু হয়েছে। অভিযোগ, অসুস্থ এবং বয়স্কদেরও দূরের শুনানিকেন্দ্রে বাধ্যতামূলক ভাবে হাজিরা দিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ক্ষণ বসে থাকতে হচ্ছে। এর বিরুদ্ধেই সরব হয়েছে তৃণমূল।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:৪৭
চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার।

চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার। —নিজস্ব চিত্র।

হুগলিতে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) শুনানিকেন্দ্রে গিয়ে শুনানি প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিলেন তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার। দাবি, শুনানিতে বিএলএ বা রাজনৈতিক দলের এজেন্টদের থাকতে দিতে হবে। সূত্রের খবর, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করে রবিবারই এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেও তিনি জানিয়েছিলেন, বিএলএ-দের শুনানিকেন্দ্রে থাকার বিষয়টি আসলে দলনেত্রী মমতার নির্দেশ। তার পরেই অসিতের এই তৎপরতা। দু’ঘণ্টা শুনানি বন্ধ রাখার পর অসিত ‘মানবিক কারণে’ অবস্থান তুলে নেন।

Advertisement

গত শনিবার থেকে রাজ্যে এসআইআর-এর শুনানি পর্ব শুরু হয়েছে। অভিযোগ, কমিশনের প্রক্রিয়ায় এখনও অনেক ত্রুটি রয়েছে। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও কেউ কেউ ডাক পাচ্ছেন বলে দাবি। অসুস্থ এবং বয়স্কদেরও দূরের শুনানিকেন্দ্রে বাধ্যতামূলক ভাবে হাজিরা দিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ক্ষণ বসে থাকতে হচ্ছে। এর বিরুদ্ধেই সরব হয়েছে তৃণমূল। সোমবার বেলা ১১টার পর দলবল নিয়ে চুঁচুড়া-মগড়া ব্লক অফিসে পৌঁছোন অসিত। শুনানি বন্ধ করে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। দাবি, দলের এজেন্টদের উপস্থিতিতে শুনানি করতে হবে। এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দিতে হবে। তা না হলে নির্বাচন কমিশনকে লিখিত দিতে হবে। কেন এজেন্টরা কেন্দ্রে থাকবেন না, তা সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে লিখে দিতে বলেন অসিত। এ নিয়ে গোলমাল শুরু হয়।

সকাল থেকে চুঁচুড়া-মগড়া ব্লক অফিসে শুনানির জন্য অনেকে হাজির হয়েছিলেন। গোলমালের মাঝে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাইরে ভোটারদের লাইন পড়ে যায়। তাঁদের মধ্যে বয়স্কেরাও রয়েছেন। কখন দরজা খুলবে, কখন শুনানির কাজ মিটবে, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় তাঁরা দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন।

অসিত শুনানিকেন্দ্র থেকে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘যাকে তাকে যে কোনও অবস্থায় শুনানিতে হাজির করা হচ্ছে। যাঁরা সরকারি কর্মচারী, দীর্ঘ দিন চাকরি করেছেন, পেনশন পান, তাঁদেরও ডাকা হচ্ছে। পাসপোর্ট থাকলেও ডাকা হচ্ছে। ২০০২ তালিকায় নাম থাকলেও ডাকা হচ্ছে। এটা একটা চরম অব্যবস্থা। আমরা এই ধরনের শুনানি-পদ্ধতির বিরুদ্ধে। নির্বাচন কমিশন নাগরিকত্ব ঠিক করার কে?’’ এর পরেই অসিতের সংযোজন, ‘‘আমাদের প্রশ্ন একটাই, বিএলএ-রা কেন শুনানিতে থাকবেন না? ওঁদের রাখতে হবে। ওঁদের ছাড়া শুাননি হবে না। কমিশন তাদের বক্তব্য লিখে দিক। আমরা চলে যাব। একজন বৈধ ভোটারের নামও বাদ দেওয়া যাবে না। আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে নির্দেশ দেবেন, আমরা সে ভাবেই লড়ব।’’

কমিশনের বিরুদ্ধে জুলুমবাজির অভিযোগ করেছেন অসিত। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলায় রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি কোথায় আছে? প্রমাণ তো হয়নি। এটা নির্বাচন কমিশনের জমিদারি। আমরা তা চলতে দেব না। তাই আমরা এখানে শুনানি বন্ধ করেছি। আমাদের কর্মীরা, দলের প্রধান এবং উপপ্রধানেরা আছেন। কমিশনকে জুলুমবাজি করতে দেব না। কারও নাগরিকত্ব প্রমাণ না হলে সে বাদ যাক। কিন্তু এটা ব্যভিচার।’’ মগরা থেকে পোলবা বিডিও অফিসে যাবেন বলে জানিয়েছেন অসিত। এসডিও-তেও যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মহকুমাশাসকের সঙ্গে শুনানিকেন্দ্র থেকেই তিনি ফোনে কথা বলেন। শুনানি বন্ধের কারণে সাধারণ মানুষের হেনস্থা প্রসঙ্গে তাঁর যুক্তি, ‘‘কমিশন তো সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করছেই। আমরা তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টা করছি।’’ ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন মগড়া থানার আইসি সৌমেন বিশ্বাস। চুঁচুড়া-মগ়ড়ার বিডিও রাজীব পোদ্দারও বিধায়কের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরে অবস্থান তুলে নেওয়ার কথা জানান অসিত। বলেন, ‘‘অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। মানবিক কারণে তাই শুনানি চালু করতে দিলাম। কিন্তু এজেন্টদের থাকতে না-দিলে মঙ্গলবার থেকে ফের শুনানি বন্ধ থাকবে।’’

শুনানিকেন্দ্রে বিএলএ-দের উপস্থিতি নিয়ে প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ের পথে হাঁটবে তৃণমূল, কর্মীদের বৈঠকে জানিয়েছিলেন অভিষেক। এ ছাড়াও, শুনানিকেন্দ্রের বাইরে সহায়তা শিবির খুলে দলের নেতাদের সাধারণ মানুষকে সাহায্যের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। অসিত তার পরের দিনই সক্রিয় হলেন।

Advertisement
আরও পড়ুন