ঠিকাদারেরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, টাকা না দিলে দু’লক্ষেরও বেশি বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়ার কাজ আর হবে না। —প্রতীকী চিত্র।
কেন্দ্র-রাজ্য গোলমালের জেরে অর্থসঙ্কটে হাওড়ায় থমকে যেতে বসেছে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জল জীবন মিশন’ বা ‘হর ঘর জল’ প্রকল্প। কারণ, এই প্রকল্পে কর্মরত রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তালিকাভুক্ত ঠিকদারেরা কোনও টাকা না পাওয়ায় ইতিমধ্যে রাজ্যের কাছে তাঁদের বকেয়া হয়ে গিয়েছে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা। সেই বকেয়া আদায়ের দাবিতে বৃহস্পতিবার হাওড়ার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের অফিসে অবস্থান-বিক্ষোভে শামিল হলেন ওই ঠিকাদারেরা। অবিলম্বে সমস্যার সমাধান না হলে শীঘ্রই বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
২০১৯-’২০ অর্থবর্ষের অগস্ট মাসে কেন্দ্রীয় সরকার সারা দেশে ‘জল জীবন মিশন’ ঘোষণা করে। দেশের প্রতিটি ঘরে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে গ্রহণ করা এই প্রকল্পে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ব্যয় বরাদ্দ ৫০:৫০ অনুপাতে দেওয়ার চুক্তি হয়। কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রক ৫৬ হাজার কোটি টাকা পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ করে।
কিন্তু জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত পাঁচ বছরে রাজ্য সরকার এই প্রকল্পে ১৫ হাজার ১১ কোটি টাকা দিলেও কেন্দ্র ব্যয় করেছে মাত্র ১৩ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। রাজ্যের দেওয়া টাকায় ৪ লক্ষ ৫৫৪টি বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বাকি রয়েছে প্রায় দু’লক্ষেরও বেশি বাড়ি।ঠিকাদারেরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, টাকা না দিলে ওই দু’লক্ষেরও বেশি বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়ার কাজ আর হবে না।
‘অল বেঙ্গল পিএইচই কন্ট্র্যাক্টর অ্যাসোসিয়েশন’-এর পক্ষে তাপস ঘোষ, দীপঙ্কর চক্রবর্তীরা বলেন, ‘‘২০২৪ সালে অগস্টের পর থেকে আমরা টাকা পাইনি। অনেকেই ব্যাঙ্ক বা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু সেই ঋণ শোধ করা যাচ্ছে না। আমরা বার বার হাওড়া জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু হাজারো আবেদনেও লাভ হয়নি।’’
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, গত এক বছর ধরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর কোনও টাকা না দেওয়ায় কাজের গতি যেমন মুখ থুবড়ে পড়েছে, তেমনই তাঁদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের দাবিতে সহমত জানিয়েছেন হাওড়ার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক পদস্থ কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘এক বছর ধরে প্রকল্পের কাজ করেও টাকা না পেলে সমস্যা তো হবেই। আমি যথাস্থানে ওঁদের দাবি জানাব। আসলে, কেন্দ্র টাকা বন্ধ করে দেওয়ায় এই সমস্যা হচ্ছে। নানা টালবাহানা করে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে।’’