Rishra Murder Case

‘ক্রাইম পেট্রল’ দেখে বন্ধুকে পিছন থেকে ছুরি মেরে খুন! রিষড়াকাণ্ডের নেপথ্যকারণ পেলেন তদন্তকারীরা

গত ১৪ জানুয়ারি ভরসন্ধ্যায় রিষড়ায় খুন হন কলেজছাত্র অভিষেক পাসোয়ান। মৃতের দিদি সবিতা পাসোয়ান রিষড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে সুজল সাউ নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩২
Rishra Murder Case

এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

কাজ হারিয়ে বন্ধুর উপর রাগ এবং সেই রাগের চোটে অস্ত্র দিয়ে তাঁকে খুন করেছেন যুবক। হুগলির রিষড়ায় ২২ বছরের অভিষেক পাসোয়ানের খুনের তদন্তে নেমে এমনই তথ্য পেল পুলিশ। ইতিমধ্যে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তদন্তকারীরা এ-ও জানতে পেরেছেন, টিভিতে একটি ধারাবাহিক দেখে বন্ধুকে খুনের ছক কষেছিলেন ২২ বছরের সুজল সাউ।

Advertisement

গত ১৪ জানুয়ারি ভরসন্ধ্যায় রিষড়ায় খুন হন কলেজছাত্র অভিষেক। সেই রাতেই অভিষেকের দিদি সবিতা পাসোয়ান রিষড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। খুনের নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ঘটনাক্রমে গত গত ১১ ফেব্রুয়ারি রিষড়ার পিএল মুখার্জি রোড থেকে সুজল নামে ২২ বছরের এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতকে শ্রীরামপুর মহকুমা আদালত হাজির করানো হলে তাঁর সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ‘ক্রাইম পেট্রল’ দেখে বন্ধুকে খুনের চক্রান্ত করেন তিনি। সোমবার দুপুরে ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য ধৃতকে নিয়ে যায় পুলিশ। অভিযুক্তের দেখানো মতো একটি পুকুর থেকে ভোজালি উদ্ধার হয়েছে। সেটি দিয়েই বন্ধুকে খুন করেছিলেন সুজল।

পুলিশ সূত্রের খবর, অভিষেক আর সুজল ‘ভাল বন্ধু’ ছিলেন। সুজল একটি রেশন দোকানে কাজ করতেন। সেই কাজটি হঠাৎ চলে যায় তাঁর। কলেজপড়ুয়া অভিষেকও পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতির জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি একটি দোকানে কাজ করতেন। তিনি কিছু দিন পড়াশোনার জন্য ব্যস্ত ছিলেন বলে ওই কাজটি ছেড়ে দেন। তাঁর জায়গায় ওই দোকানে কাজ পান সুজল। কিন্তু কিছু দিন পরে অভিষেক পুরনো কাজে যোগ দিলে সুজলের কাজ চলে যায়। তিনি অভিষেককে জানান, কাজটা তাঁর খুবই প্রয়োজন। অভিষেক তখন সুজলকে অন্য একটি কাজ দেখে দেবেন বলে জানান। যে কয়েক দিন সুজল কাজ করেছিলেন, তার পারিশ্রমিক পেয়ে গেয়েছিলেন। কিন্তু বন্ধুর উপর ক্ষোভ বাড়ে সুজলের। অভিযোগ, ওই রাগেই অভিষেককে খুন করেন তিনি।

গত ১৪ জানুয়ারি কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন অভিষেক। বাড়ির ঠিক কাছে বন্ধুকে পিছন থেকে ভোজালি মেরে খুন করেন সুজল। রক্তাক্ত অবস্থায় বন্ধু পড়ে যান রাস্তায়। তাঁকে ফেলে দৌড়ে পালান সুজল। পুলিশ তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ এবং অভিযুক্তের ফোনের টাওয়ার লোকেশন দেখে ঘটনার ২৮ দিন পর সুজলকে গ্রেফতার করে। বিভিন্ন ধরনের অপরাধের ঘটনাকে গল্পাকারে দেখানো হয় ‘ক্রাইম পেট্রল’ নামে একটি ধারাবাহিকে। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘ওই ধারাবাহিক দেখে বন্ধুকে খুনের ছক কষেন অভিযুক্ত। তবে ওই ধারাবাহিকে দেখানো হয় অপরাধী যত চালাকই হোন না কেন, তিনি ধরা পড়েনই। অভিযুক্ত হয়তো ওই জায়গাটি থেকে কোনও শিক্ষা নেননি।’’ তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তে আরও কিছু তথ্য জানার চেষ্টা চলছে।

মৃত অভিষেকের দিদি সবিতা বলেন, ‘‘আমার ভাই খুব ভাল ছিল। রেশন দোকানে কাজ করত। সেই সঙ্গে কলেজে পড়াশোনা করত। রেশন দোকানে কাজ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বিবাদ হয়। সুজল সারাদিন টিভিতে ‘ক্রাইম পেট্রল’ দেখত। আমার একটাই ভাই। ওকে সেই সিরিয়াল দেখে পরিকল্পনা করে খুন করেছে সুজল। আমি ওর ফাঁসি চাই।’’

Advertisement
আরও পড়ুন