(বাঁ দিকে) হুমায়ুন কবীর, নওশাদ সিদ্দিকী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
হুমায়ুন কবীরের দলের সঙ্গে জোট নিয়ে কোনও কথাই হয়নি। এমনটাই জানালেন আইএসএফ চেয়ারম্যান নওশাদ সিদ্দিকী। শনিবার বিকেলে রাজ্য সিপিএমের সদর দফতর আলিমুদ্দিন ষ্ট্রিটে এসেছিলেন ভাঙড়ের বিধায়ক। সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন নওশাদ। সেখানেই হুমায়ুনের দাবি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। জবাবে নিজের দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন তিনি।
মুর্শিদাবাদে হুমায়ুন বলেছেন, ‘‘১৮২টি আসনে লড়াই করে কী ফল আনব...? একটা কথা বলে দিচ্ছি, মিরাকল রেজ়াল্ট হবে। বাংলার প্রবীণ এবং দক্ষ রাজনীতিকেরা যা পারেননি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কেউ বাংলা কংগ্রেস করেছিলেন, সিপিআই হয়েছিল সিপিএম...। বাংলার রাজনীতিতে আগামিদিনে আমি এবং আইএসএফ একজোট হচ্ছি। মিম যোগদান করলে স্বাগত।’’এমন দাবির পাল্টা নওশাদ বলেন, “আমাদের সঙ্গে এই ধরনের প্রস্তাব নিয়ে কেউ কোনও যোগাযোগ করেননি। আমাদের রাজ্য কমিটির কোনও নেতৃত্বের সঙ্গে এ রকম কোনও আলোচনা কেউ করেননি।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের দলের রাজ্য নেতৃত্বের কারও সঙ্গে যদি বিষয়টি নিয়ে মৌখিক ভাবে আলোচনা করতেন, সেটা তাঁরাও আমাকে জানাতেন। তাই এমন কোনও খবর আমার জানা নেই।”
উল্লেখ্য, ২২ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদে সভা করে নিজের রাজনৈতিক দল জনতা উন্নয়ন পার্টির কথা ঘোষণা করেছেন বহিষ্কৃত তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন। সমমনোভাবাপন্ন দলগুলিকে নিয়ে জোট করে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে লড়াই করার কথাও ঘোষণা করে দিয়েছেন তিনি। রেজিনগর এবং বেলডাঙা বিধানসভা আসনে নিজেই লড়াই করবেন বলে ঘোষণা করেছেন হুমায়ুন। ইতিমধ্যে হুমায়ুনের সঙ্গে হায়দরাবাদের দল ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলমিনি’ (মিম)-এর সঙ্গে জোট করে বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। মিমের পশ্চিমবঙ্গ শাখার নেতা ইমরান সোলাঙ্কিও জানিয়েছেন, আসাদউদ্দিন ওয়েইসিও পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আগ্রহী। তাই আগামী নির্বাচনে হুমায়ুন এবং আসাদউদ্দিনকে পাশাপাশি দেখা যেতেই পারে। কিন্তু, সেই জোটে আইএসএফ শামিল হবে কিনা, তা নিয়ে এখনও কোনও আলোচনা শুরু হয়নি বলে জানিয়ে দিয়েছেন নওশাদ।
তবে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসাবে ‘সলতে পাকানো’র কাজ নওশাদ কয়েক মাস আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছিলেন। তিনি একযোগে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারকে ইমেল মারফত জোট প্রস্তাবের আলোচনা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। বিধানভবন থেকে কংগ্রেস নেতৃত্ব সাড়া না দিলেও, মুজফ্ফর আহমেদ ভবন থেকে সুবজ সংকেত পেয়েই শনিবার আলিমুদ্দিন ষ্ট্রিটে যান নওশাদ। সেখানে বিমান ছাড়াও, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং শ্রীদীপ ভট্টাচার্যর সঙ্গেও কথা হয়েছে তাঁর। নওশাদের কথায়, ‘‘জোট আলোচনা সবে শুরু হয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সংযুক্ত মোর্চা নাম দিয়ে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আইএসএফ জোট করে বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করেছিল। সেই ভোটে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হিসাবে একমাত্র ভাঙড় আসনে জিতেছিলেন নওশাদ। তবে ২০২৪ সালে জোট আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় সংযুক্ত মোর্চার ছাতার তলায় সবাইকে আনা সম্ভব হয়নি। তা সত্ত্বেও, মালদহ দক্ষিণ আসনে বামফ্রন্টের সমর্থন পেয়ে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেসের ঈশা খান চৌধুরী। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-বামফ্রন্ট-আইএসএফ-হুমায়ুন এবং মিমকে দেখা যাবে কি না, সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলার রাজনীতিতে।