প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম
পেশায় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সারাইয়ের কাজ করতেন তিনি। স্কুল সার্ভিস কমিশনে (এসএসসি) কোনও পদে ছিলেন না প্রসন্ন রায়। কিন্তু তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে তাঁর প্রভাব রাজ্য শিক্ষা প্রশাসনের উঁচুতলাতেও ছেয়ে গিয়েছিল বলে আদালতে নথি পেশ করেছে সিবিআই। ২০১৬ সালের পর থেকে রাজ্যে স্কুল শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির এক জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে প্রসন্নের উত্থান সিবিআই-তদন্তে উঠে এসেছে।
সিবিআইয়ের মামলায় জামিন পেলেও ইডির মামলায় এখনও হেফাজতে রয়েছেন প্রসন্ন। প্রসন্ন ও তাঁর পরিবার-পরিজনের নামে কম-বেশি ৩০০ কোটি টাকার সম্পত্তির হিসাব মিলেছে বলেও কোর্টে দাবি করেছে ইডি। তদন্তকারীদের দাবি, এসএসসির বহু আধিকারিক, ডেটা অপারেটর এবং কর্মচারীদের লিখিত বয়ানে প্রসন্নের প্রতিপত্তির খবর উঠে এসেছে। একাধিক সাক্ষী তাঁদের বয়ানে জানিয়েছেন, অযোগ্যদের জন্য শূন্য পদ সৃষ্টি এবং বাঁকা পথে চাকরির ব্যবস্থার জন্য নিউ টাউনে একটি আলাদা অফিস খুলে বসেন প্রসন্ন। তাঁর শাগরেদ ছিলেন ছোট্টু সিংহ। সিবিআই ও ইডির মামলায় ছোট্টুও গ্রেফতার হয়েছিলেন। এখনজামিনে রয়েছেন।
তদন্তকারীদের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত এসএসসি উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, অশোক সাহারাও প্রসন্নকে খানিকটা সমঝে চলতেন। নিউ টাউনে প্রসন্নের অফিসে এসএসসির সমান্তরাল নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালীন কম্পিউটার থেকে চেয়ার, টেবিল, কাগজ-কলম সব এসএসসি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হত বলেও দাবি। তদন্তে প্রকাশ, একটি বৈঠকে উপস্থিত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অশোক সাহা, শান্তিপ্রসাদ সিংহেরা ওই অফিসের সরঞ্জাম, সামগ্রী সরবরাহের দাম নেওয়ার কথা বলেছিলেন। তাতে পার্থ উল্টে শান্তিপ্রসাদ, অশোক সাহাদের তিরস্কার করেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। এতটাইদাপট ছিল প্রসন্নের।
তদন্তকারীদের আরও দাবি, নিউ টাউনের অফিসে বসে নিয়োগ দুর্নীতির নানা দিক একসঙ্গে সামলাতেন প্রসন্ন। এক দিকে, পার্থের হাতে লেখা সুপারিশের তালিকা ধরে শূন্য পদ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় রক্ষার কাজ তিনি চালাতেন বলে তদন্তে স্পষ্ট। আবার ওই অফিসেই অযোগ্য প্রার্থীদের অনেককে তলব করে সরাসরি কথা চালানো হত বলে জানা গিয়েছে। তদন্তে প্রকাশ, জেলায় জেলায় নিয়োগ দুর্নীতির বিভিন্ন মিডলম্যানের সঙ্গে প্রসন্নের যোগাযোগের ক্ষেত্রও ছিল ওই অফিস। সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের দাবি, অযোগ্যদের তালিকা প্রসন্ন আকছার এসএসসির কর্তাদের হাতে দিয়ে নির্দেশ পাঠাতেন। মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাও বিধায়ক হওয়ার আগে থেকেই নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত কারবারে নিউ টাউনের অফিসে প্রসন্নের কাছে যাতায়াত করতেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। তদন্তকারীদের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতি প্রক্রিয়ায় চাকরি পাওয়া অযোগ্যদের মধ্যে এমন প্রার্থীও রয়েছেন, যাঁরা কোনও পরীক্ষা দেননি। এসএসসি অফিসের ছায়া না মাড়িয়ে নিউ টাউনে প্রসন্নের অফিস থেকেও অনেকে নিয়োগপত্র পেয়ে যান বলে তদন্তেউঠে এসেছে।