Salt Lake Stadium Vandalized

যুবভারতীকাণ্ডে ছ’টি সংস্থার প্রতিনিধিকে তলব বিধাননগর পুলিশের, মঙ্গলে হাজিরা দিতে হবে শতদ্রুর সংস্থার কর্তাদেরও!

মেসির কলকাতা-সহ ভারত সফরের প্রধান আয়োজক শতদ্রু। বিশ্বজয়ী ফুটবলার কলকাতায় এসেছিলেন শনিবার। তাঁকে দেখতে হাজার হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটে যুবভারতীতে যান ভক্তেরা। কিন্তু মেসিকে গ্যালারি থেকে দেখা যায়নি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:০২
লিয়োনেল মেসি চলে যাওয়ার পর সল্টলেক স্টেডিয়াম ভাঙচুর দর্শকদের। শনিবার।

লিয়োনেল মেসি চলে যাওয়ার পর সল্টলেক স্টেডিয়াম ভাঙচুর দর্শকদের। শনিবার। —ফাইল চিত্র।

সল্টলেকের যুবভারতী স্টেডিয়ামে লিয়োনেল মেসির অনুষ্ঠানে বিপর্যয়ের ঘটনায় ছ’জনকে তলব করল বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট। তাঁরা ছ’টি পৃথক সংস্থার প্রতিনিধি। তাঁদের মধ্যে শতদ্রু দত্তের সংস্থার কর্তারাও রয়েছেন বলে খবর। মঙ্গলবার তাঁদের থানায় হাজিরা দিতে বলা হয়েছে।

Advertisement

বিধাননগর পুলিশ সূত্রে খবর, যাঁদের তলব করা হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই শনিবারের অনুষ্ঠানের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে জড়িত ছিলেন। ওই ছয় সংস্থা কোনও না কোনও দায়িত্বে ছিল। অনুষ্ঠানে জল ও ঠান্ডা পানীয় সরবরাহের দায়িত্বে যারা ছিল, টিকিট বিতরণের দায়িত্বে যারা ছিল, তাদের প্রতিনিধিকেও তলব করেছে পুলিশ। টিকিট সরবরাহকারী সংস্থাকে অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করতে বলেছে পুলিশ। শতদ্রুর সংস্থার কাছে যাতে টাকা না পৌঁছোয়, তা-ও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার থানায় এই সংস্থাগুলির প্রতিনিধিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আয়োজনে তাঁদের ভূমিকা কী ছিল, তাঁদের তরফে কোনও গাফিলতি ছিল কি না, খতিয়ে দেখা হবে।

মেসির কলকাতা-সহ ভারত সফরের প্রধান আয়োজক শতদ্রু। শনিবারই কলকাতা বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সল্টলেক স্টেডিয়ামে মেসির অনুষ্ঠান ঘিরে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল ওই দিন। আয়োজকদের অপদার্থতায় মাত্র ১৬ মিনিটেই মাঠ ছাড়তে হয় মেসিদের। অভিযোগ, মেসিকে গ্যালারি থেকে দেখাই যায়নি। তিনি মাঠে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ঘিরে ধরেছিলেন শ’খানেক মানুষ। তাঁদের মধ্যে নেতা-মন্ত্রী, আয়োজক কর্তাব্যক্তি, ছবিশিকারিরা ছিলেন।

মেসি এসেছিলেন সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ় এবং রদ্রিগো ডি’পলকে নিয়ে। ভিড়ের ধাক্কাধাক্কিতে সুয়ারেজ়ের পেটে কনুইয়ের গুঁতো লাগে। হাতে নখের আঁচড় লাগে ডি’পলের। অত্যন্ত অস্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়েন তাঁরা। মেসিকে বার করে নিয়ে যান তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা। এর পরেই ক্রুদ্ধ জনতা যুবভারতীতে ভাঙচুর চালায়। চেয়ার উপড়ে ছোড়া হয় মাঠে। হাজারো মানুষ মাঠের ভিতর ঢুকে পড়েন। পুলিশকে তাড়া করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছিল। সে দিনই মেসির সঙ্গে হায়দরাবাদে উড়ে যাচ্ছিলেন শতদ্রু। তাঁকে বিমানবন্দর থেকে ধরে আনে বিধাননগর পুলিশ। রবিবার বিধাননগর মহকুমা আদালত শতদ্রুর জামিনের আর্জি খারিজ করে দিয়েছে। তাঁকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এ বার তাঁর সংস্থার কর্তাদেরও পুলিশ ডাকল।

এই ঘটনার তদন্তের জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার রায়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিটিতে আছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তীরা। রবিবার যুবভারতীর ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন তাঁরা। নমুনা সংগ্রহ করেছেন। হয়েছে ভিডিয়োগ্রাফি। দীর্ঘ ক্ষণ স্টেডিয়ামের ভিতরে বৈঠক করেছে তদন্ত কমিটি। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে প্রাক্তন বিচারপতি রায় জানান, তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে। কমিটির রিপোর্টে তাঁদের অনুসন্ধানের ফলাফল বিশদে উল্লেখ থাকবে।

অভিযোগ, মেসির সফর ঘিরে আয়োজকদের পরিকল্পনার অভাব ছিল। কখন কী হবে, মেসি কখন আসবেন, কী করবেন, হাঁটবেন না দাঁড়াবেন, কেউ কিছুই জানতেন না। প্রশাসনের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করেননি শতদ্রুরা। এই ধরনের ‘মেগা ইভেন্ট’-এ সাধারণত প্রতি মিনিটের কার্যক্রমের সূচি তৈরি করা থাকে। টিকিটের পিছন দিকেও লেখা থাকে কখন কী হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে সব ছিল না। আগের দিন যুবভারতীতে কোনও মহড়াও হয়নি। পৃথক সংস্থা পৃথক পৃথক দায়িত্ব দিয়েছিলেন শতদ্রু। তাদের কারও সঙ্গে কারও যোগাযোগ ছিল না।

Advertisement
আরও পড়ুন