Humayun Kabir

কৌশলে মমতা এবং অভিষেকের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা হুমায়ুনের! ব্রিগেডে ১০ লক্ষ লোক হাজির করার চ্যালেঞ্জ

হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, আগামী বছরের জানুয়ারিতেই তাঁর দলের প্রথম ব্রিগেড সভা হবে। অন্তত ১০ লক্ষ লোক হাজির হবেন সেখানে বলে প্রত্যয়ী বিধায়ক। সেখানেই আগামী বিধানসভা ভোটে জনতা উন্নয়ন পার্টির জোটসঙ্গীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন রাজ্যবাসীর

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:১৬
Humayun Kabir

(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, হুমায়ুন কবীর এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। তাই সরকার গড়ার জন্য তাঁকে এবং তাঁর দলের নবনির্বাচিত বিধায়কদের প্রয়োজন হবেই। মঙ্গলবার কলকাতায় দাঁড়িয়ে এমনই ভবিষ্যদ্বাণী করলেন তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হয়ে নিজের দল তৈরি করা বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। এর আগেই তিনি বলেছেন, ‘‘অভিষেক (বন্দ্যোপাধ্যায়) দাঁড়ালে প্রার্থী দেব না, মমতার (বন্দ্যোপাধ্যায়ের) বিরুদ্ধে প্রার্থী দেব।’’ ফের মমতাকে তোপ দেগে জনতা উন্নয়ন পার্টির চেয়ারম্যানের মন্তব্য, ‘‘উনি রাজনৈতিক সন্ন্যাস নিয়ে মন্দিরে গেলে আমিও আমার দলীয় পদ ছাড়ব।’’

Advertisement

হুমায়ুনের দলের ‘প্রেস সচিব’ হিসাবে নিযুক্ত করেছেন কামাল হোসেনকে। ভরতপুরের বিধায়ক জানান, এ বার থেকে তাঁর দলের যে কোনও বিবৃতি কলকাতা থেকে জানাবেন কামাল। হুমায়ুনের কথায়, ‘‘কলকাতা কেন্দ্রিক পার্টির বিবৃতি জানানোর জন্য ওঁকে নিযুক্ত করলাম।’’ এর পরেই হুমায়ুন জানিয়েছেন, আগামী বছরের জানুয়ারিতেই তাঁর দলের প্রথম ব্রিগেড সভা হবে। অন্তত ১০ লক্ষ লোক হাজির হবেন সেখানে বলে প্রত্যয়ী বিধায়ক। সেখানেই আগামী বিধানসভা ভোটে জনতা উন্নয়ন পার্টির জোটসঙ্গীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন রাজ্যবাসীর। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা জানুয়ারির ২৫ থেকে ৩১ তারিখের মধ্যে ব্রিগেড করব। আপনারা জানেন ওটা ডিফেন্সের মাঠ। অনুমতির জন্য সেনার আধিকারিকদের সঙ্গে আমাদের রাজ্য স্তরের নেতারা যোগাযোগ করছেন। ব্রিগেডে ১০ লক্ষ মানুষ হবেই, আমার স্থির বিশ্বাস। ওই দিনই জনতা উন্নয়ন পার্টির জোটসঙ্গীদের হাজির করব বলে আশা করছি।’’

এর আগেও কৌশলে তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টায় হুমায়ুন বলেছিলেন, ‘‘যদি ভবানীপুর থেকে অভিষেক প্রার্থী হন, তা হলে আমার দল প্রার্থী দেবে না। আর যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা শুভেন্দু অধিকারী দাঁড়ান, তা হলে প্রার্থী দেবই।’’ মঙ্গলবার ওই প্রসঙ্গ ফের টেনে হুমায়ুন মমতার ‘মন্দির রাজনীতি’র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘‘গতকাল (সোমবার) মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের কোষাগার থেকে ২৬২ কোটি টাকা নিয়ে দুর্গা অঙ্গনের জন্য শিলান্যাস করেছেন। টেন্ডার পেয়েছে হিডকো। এই ভাবে কৌশলে সরকারি বোঝা বাড়িয়ে মন্দির করছেন।’’ পর ক্ষণেই তাঁর সংযোজন, ‘‘মন্দির একটা নয়, ১০টা হোক। কিন্তু সরকারি টাকায় হবে না। কই রামমন্দির তো কোনও সরকারি টাকায় হয়নি। সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা সেখানে অর্থ দিয়েছেন। কিন্তু ঘুরপথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটব্যাঙ্ক সুরক্ষিত রাখার জন্য সরকারি বোঝা বাড়িয়ে চলেছেন। আমি মন্দিরের বিরোধিতা করব না। তবে শিলিগুড়িতে যখন আর একটা মন্দিরের (মহাকাল মন্দির) শিলান্যাস হবে, সে দিন এই সরকারের পতন হবে।’’ তাঁর বাবরি মসজিদ নিয়ে অভিষেকের মন্তব্য টেনে হুমায়ুন বলেন, ‘‘উনি পিসিকে বলুন। উনি জগন্নাথ ধাম করেছেন। উনি যবে বলবেন, ‘আমি ২০২৬ সালের ভোটে লড়ব না। মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসার চেষ্টা করব না। রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিয়ে মন্দির করব’, সে দিনই আমি জনতা উন্নয়ন পার্টির পদ থেকে সরে যাব। পার্টি থাকবে। তবে আমি ভোটে লড়ব না।’’

হুমায়ুনের দাবি, এ বার ১০০ আসনেই আটকে যাবে বিজেপি। তৃণমূল থাকবে তৃতীয় আসনে। তাই সরকার গড়ার জন্য হুমায়ুনকে দরকার হবে যে কারও। জনতা উন্নয়ন পার্টির নবনির্বাচিত বিধায়কদের সহায়তাতেই বাংলায় নতুন সরকার হবে।

অন্য দিকে, দলে থেকে দলেরই একাধিক নেতার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন হুমায়ুনের পুত্র গোলাম নবি আজাদ। তিনি জানিয়েছেন, প্রয়োজনে রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। কিন্তু তৃণমূলে আর নয়। উল্লেখ্য, বাবার নিরাপত্তারক্ষীকে মারধরের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন গোলাম। বেলডাঙা-২ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ গোলাম বলেন, ‘‘দীর্ঘ দেড় বছর ধরে বাবা বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার এবং দলীয় (তৃণমূল) নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খুলছিলেন, যা আমার ভাল লাগেনি। আমি বাবাকে বারবার বুঝিয়েছি। বলেছি, প্রয়োজন হলে তুমি দলত্যাগ করে যা বলার বলো। কিন্তু দলে থেকে এভাবে বিড়ম্বনা তৈরি করো না।’’ সেই দলের ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’ হয়ে তিনি তৃণমূলত্যাগ করছেন বলে জানান।

Advertisement
আরও পড়ুন