অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার রায়। — ফাইল চিত্র।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার রায়ের নেতৃত্বে যুবভারতীকাণ্ডের তদন্ত করছে মুখ্যমন্ত্রীর গড়ে দেওয়া কমিটি। রবিবার কমিটির সদস্যেরা মাঠ ও গ্যালারির বেশ কিছু জায়গা ঘুরে দেখেছেন। দু’দিনে তদন্ত কত দূর এগোল, তা নিয়ে এ বার সাংবাদিক বৈঠক করলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রায়। জানালেন, লিয়োনেল মেসির সফরের দিন কারা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ‘সিট’ গঠন করে তদন্তের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যুবভারতীকাণ্ডের।
মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিক বৈঠক করেন অসীম। তিনি জানিয়েছেন, গোটা ঘটনায় নদরদারির অভাব ধরা পড়েছে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বলেন, ‘‘প্রশ্ন উঠেছে, মাঠে খাবার, জলের বোতল ঢুকল কী ভাবে? আমি যত দূর জানি, মাঠের ভিতরে জলের বোতল ঢুকতে দেওয়া হয় না। অথচ মাঠে অসংখ্য ভাঙা চেয়ার, ভাঙা গেট, জল ও ঠান্ডা পানীয়ের বোতল পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। আমরা দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রশ্ন করে জানতে পেরেছি, স্টেডিয়ামের ভিতরে স্টল হয়েছিল। তবে এখনও সবটা তদন্তসাপেক্ষ। আমরা প্রাথমিক ভাবে মনে করছি, সে দিন যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, এটা তাঁদের দেখা উচিত ছিল। তাই আমরা সরকারের কাছে বলেছি, ওঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’
যুবভারতীকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতার গড়ে দেওয়ার কমিটির সাংবাদিক বৈঠক। বাঁদিক থেকে, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার রায় এবং স্বরাষ্ট্রসচিব পদে নন্দিনী চক্রবর্তী। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র
সোমবার রাতেই যুবভারতীকাণ্ডে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির তদন্ত কমিটি। কমিটির সদস্যদের মতে, মেসির কলকাতা সফরের বিষয়টি দেখাশোনার দায়িত্বে ছিল পুলিশ ও ক্রীড়া দফতর। তাঁরা দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। মুখ্যমন্ত্রীর গড়ে দেওয়া তদন্ত কমিটির তরফে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ নিয়ে রিপোর্ট দিতে হবে। ঘটনার দিন পুলিশ বা ক্রীড়া দফতরের কারা দায়িত্বে ছিলেন, সফর নিয়ে আগে থেকে কী কী পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রিপোর্টে।
তৃতীয়ত, গোটা ঘটনায় সিট গঠন করে তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অসীম। সিটে কারা থাকবেন, তা সরকারি ভাবে ঠিক করা হবে। তবে সিনিয়র পুলিশকর্তাদের ওই বিশেষ তদন্ত দলে রাখার কথা বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, যে হেতু ঘটনাটি বিধাননগরে ঘটেছে এবং বিধাননগর পুলিশই ঘটনার তদন্ত করছে, তাই যাতে তদন্তের নিরপেক্ষতা বা স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্যই সিট গড়ার কথা ভাবা হচ্ছে। অসীম জানিয়েছেন, মাঠ ঘুরে দেখার দিন চেয়ার হাতে নিয়ে দেখা হয়েছে সেগুলো সহজে ছুড়ে ফেলা যায় কি না। স্ক্রু ঢিলে ছিল কি না, সে সবও দেখা হয়েছে। পাশাপাশি, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মাঠের ভিতর কী ভাবে খাবার ও জলের বোতল ঢুকল, তা নিয়েও তদন্ত করা হবে।
তা হলে কি নজরদারি এড়িয়ে রাতেই জলের বোতল ঢোকানো হয়েছিল? গেটে চেকিংয়ের সময়ে গাফিলতি হয়েছে? কার দোষে শনিবার এত বড় বিশৃঙ্খলা ঘটে গেল যুবভারতীতে? কেন বিশৃঙ্খলা শুরু হতেই তৎপর হল না পুলিশ? এ সব প্রশ্নের জবাবে অসীম বলেন, ‘‘এগুলো জানতে গভীর তদন্ত প্রয়োজন। সেটা পুলিশের কাজ। তা ছাড়া, গ্যালারির মধ্যে আমরা সব সময় দেখি পুলিশ থাকে, কিছু গন্ডগোল হলেই পুলিশ নেমে আসে। সে দিন কেন এমন হল না, তা জানা যাচ্ছে না। হাতে প্রমাণ না থাকলে এ ভাবে কাউকে দোষী বলা যায় না। আমরা সবটাই খতিয়ে দেখছি। রিপোর্ট এলে সব জানা যাবে।’’ তা হলে যাঁরা চড়া দামে টিকিট কেটে মেসিকে দেখতে গিয়েও দেখতে পেলেন না, তাঁরা কি টাকা ফেরত পাবেন? এখনই এ বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে পরবর্তী কালে সে নিয়েও সুপারিশ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি।