মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
১) কেন্দ্রীয় অথবা রাজ্য সরকারের কর্মী হিসাবে কাজ করেছেন অথবা পেনশন পান এমন পরিচয়পত্র। ২) ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, এলআইসি, স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া যে কোনও নথি। ৩) জন্ম শংসাপত্র। ৪) পাসপোর্ট। ৫) মাধ্যমিক বা তার অধিক কোনও শিক্ষাগত শংসাপত্র। ৬) রাজ্য সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দেওয়া বাসস্থানের শংসাপত্র। ৭) ফরেস্ট রাইট সার্টিফিকেট। ৮) জাতিগত শংসাপত্র। ৯) জাতীয় নাগরিক রেজিস্টার (যেখানে প্রযোজ্য)। ১০) স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া পারিবারিক রেজিস্টার। ১১) জমি অথবা বাড়ির দলিল।
১২) এ ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক পরিচয়পত্র হিসাবে আধার কার্ড দেখানো যাবে। তবে তা দেখিয়ে নাগরিকত্বের দাবি করা যাবে না। কমিশন জানিয়েছে, আধার কার্ডের সঙ্গে এই ১১টি নথির যে কোনও একটি দিতে হবে। এই ১১টি নথির বাইরে কোনও নথি যদি নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারে, তবে তা-ও গ্রহণ করা হবে।
কোন কোন নথি গ্রাহ্য, জানিয়ে দিল কমিশন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বিএলওরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম দেবেন এবং তা সংগ্রহ করবেন। ইআরওরা ভোটার তালিকা তৈরি, দাবি-আপত্তি শুনানি এবং চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবেন। এইআরও ইআরও-কে সহায়তা করবেন। ইআরও-র সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রথম আপিল শুনবেন ডিএম। ডিএমের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আপিল শুনবেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক।
১) ভারতীয় নাগরিক হতে হবে
২) ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স হতে হবে
৩) সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় থাকতে হবে
৪) কোনও আইনে ভোট দেওয়ার অধিকার বাতিল হলে চলবে না
জ্ঞানেশ জানিয়েছেন, ১৯৫১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত দেশে এসআইআর হয়েছে আট বার। ২১ বছর আগে শেষ বার এসআইআর হয়েছে— ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত।
কমিশন জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে এনুমেরেশন ফর্ম ছাপা এবং বিএলওদের প্রশিক্ষণের কাজ। চলবে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমেরেশন ফর্ম দেওয়া হবে ৪ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে ৯ ডিসেম্বর। এই তালিকা নিয়ে অভিযোগ থাকলে তা ৯ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে হবে। অভিযোগ শোনা এবং খতিয়ে দেখার কাজ চলবে ৯ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে ৭ ফেব্রুয়ারি।
আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে অসমে। কিন্তু সেখানে এসআইআর হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জ্ঞানেশ। কারণ, সেখানে এনআরসি প্রায় শেষের পথে। তা ছাড়া অসমের নিজস্ব বিধান রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, গোয়া, গুজরাত, কেরল, লক্ষদীপ, মধ্যপ্রদেশ, পুদুচেরি, আন্দামান নিকোবর। এই ১২ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৫১ কোটি ভোটারের তালিকার এসআইআর হবে।
কেউ রাজ্যের বাইরে গেলে বা প্রবাসীরা অনলাইনেও ফর্ম ভরতে পারবেন।
যে ভোটারদের পড়তে বা লিখতে সমস্যা রয়েছে, তাঁদের সাহায্য করবেন বিএলওরা। কখনও কোনও ভোটদাতা বাড়িতে না থাকলে তাঁর বাড়ি আবার যাবেন বিএলও। এক জন ভোটদাতার বাড়িতে তিন বার যাবেন এক জন বিএলও। প্রত্যেক বাড়িতে যাবেন বিএলও।
২০০৩ সালের সূচিতে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের আর কোনও কাগজ দিতে হবে না। কারও নিজের নাম না থাকলেও যদি বাবা-মায়ের নাম থাকে, তা হলে আর কাগজ দিতে হবে না। কমিশনের সাইটে গিয়ে এই ‘ম্যাচিং’ ভোটারেরা নিজেরাই করতে পারবেন।
যে সব রাজ্যে এসআইআর হবে, সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠক করবেন কর্মীরা।
এসআইরের সময়ে প্রথমে আবেদনপত্র (এনিউমেরাশন ফর্ম) প্রিন্ট করা হবে। যে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এসআইআর হবে, সেখানকার ভোটদাতাদের সূচি সোমবার রাত ১২টায় ‘ফ্রিজ়’ করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ সোমবার রাত ১২টা থেকে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত সব কাজ বন্ধ থাকবে। নতুন নাম তোলা, সংশোধন, পরিবর্তন করা যাবে না। সেই সূচিতে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের এনুমারেশন ফর্ম দেওয়া হবে।
জ্ঞানেশ জানান, বিহারে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিলে যখন এসআইআর হয়েছে, তার পরে শূন্য অভিযোগ জমা পড়েছে। বুথ লেভেল এজেন্টদের সঙ্গে মিলে কর্মীরা খুব ভাল কাজ করেছেন।
জ্ঞানেশ জানান, এসআইআরের সময়ে বহু কর্মী কমিশনের সঙ্গে কাজ করেছেন। ১০০০ ভোটারপিছু রয়েছে একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র। একটি বিধানসভা কেন্দ্রে ৩০০ থেকে ৪০০ ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থাকে। সব কেন্দ্রে ইলেকটোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার থাকেন। তাঁর অধীনে কাজ করেন বিএলওরা।
তিন ধাপে হবে এসআইআর প্রক্রিয়া—
বিএলও, ইআরও এবং অন্য আধিকারিকদের প্রশিক্ষণ হবে। তার পরে আগের ভোটার তালিকার সঙ্গে তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে। শেষে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কথা বলে পুরো প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা হবে।
এর পরে এনুমারেশন-পর্ব। সেখানে ফর্ম বিতরণ, সংগ্রহ এবং মিলিয়ে দেখার কাজ চলবে। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১২০০ ভোটারের সীমানা মানা হবে।
এনুমারেশন ফর্মের কাজ মিটে গেলে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। যাঁদের নাম মেলেনি, তাঁদের নোটিস পাঠানো হবে। কারও কোনও দাবি এবং আপত্তি থাকলে তার শুনানি হবে। সব ঠিকঠাক হলে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
কী ভাবে এগোবে এসআইআর প্রক্রিয়া, তা-ও জানিয়েছে কমিশন। গ্রাফিকর: আনন্দবাজার ডট কম।
জ্ঞানেশ বলেন, ‘‘বিহারের সাড়ে সাত কোটি ভোটদাতা অংশগ্রহণ করেছেন। বিএলও, বুথ লেভেল এজেন্ট, সকলে মিলে এই এসআইআরকে সফল করেছেন। এ বার ১২ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হবে এসআইআর।’’ তালিকায় রয়েছে বাংলাও।
দ্বিতীয় দফায় দেশের ১২ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হচ্ছে এসআইআর। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
জ্ঞানেশ বলেন, ‘‘সকলকে স্বাগত। ছট উপলক্ষে বিহারের মানুষজনকে শুভেচ্ছা জানাই। বিহারে এসআইআর সফল ভাবে হয়েছে। একটিও ভুল কেউ ধরাতে পারেননি। শুদ্ধ এসআইআর হয়েছে সেখানে।’’
জ্ঞানেশ কুমার এলেন দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দফতরে। শুরু হচ্ছে সাংবাদিক বৈঠক।
দেশের মধ্যে প্রথম বিহারে এসআইআর করে কমিশন। প্রাথমিক ভাবে সে রাজ্যে ৬৫ লক্ষ লোকের নাম বাদ পড়ে। বিহারের সময়ই কমিশন জানিয়েছিল, ধাপে ধাপে সারা দেশে ওই সংশোধনের কাজ চলবে। সেইমতো প্রস্তুতিও শুরু হয়। বুথ লেভেল অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেয় কমিশন। কাজ এগিয়ে রাখতে ম্যাপিং করে তারা। ২০০২ সালে বাংলায় শেষ বার এসআইআর হয়েছিল।
আগামী ১ নভেম্বর থেকে বুথ লেভেল অফিসারেরা (বিএলও) বাড়ি বাড়ি ফর্ম নিয়ে যাবেন বলে কমিশন সূত্রে খবর। প্রথমেই দিল্লি থেকে এনুমারেশন ফর্মের সফ্ট কপি নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিকদের (ইআরও) পোর্টালে পাঠিয়ে দেবে কমিশন। তার পরে সেগুলি পাঠানো হবে ছাপার জন্য। এক জন ভোটারের জন্য দুটো করে এনুমারেশন ফর্ম ছাপবে কমিশন। এখন বাংলার ভোটার সংখ্যা প্রায় ৭.৬৫ কোটি। অর্থাৎ, তার দ্বিগুণ ফর্ম ছাপা হবে। ওই ফর্মগুলি প্রত্যেক ভোটারের বাড়িতে পোঁছে দেবেন বিএলওরা। ফর্মের বাকি অংশ পূরণ করে উপযুক্ত নথি-সহ জমা দিতে হবে। একটি ফর্ম সংশ্লিষ্ট ভোটারের কাছে থাকবে। অন্যটি বিএলও নিয়ে যাবেন।
পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি এসআইআর শুরু হচ্ছে তামিলনাড়ু, কেরল, অসম এবং পুদুচেরিতে।