Mamata Banerjee Abhishek Banerjee

তৃণমূলে পালাবদলের পালা শুরু! সুদীপের জায়গায় অভিষেককে তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা ঘোষণা করলেন দলনেত্রী মমতা

গত কয়েক মাস ধরে সুদীপ অসুস্থতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর অসুস্থতা এতটাই গুরুতর যে, চলতি বাদল অধিবেশনে তাঁকে এক দিনও সংসদে দেখা যায়নি। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, এ হেন পরিস্থিতিতে লোকসভায় দলনেতা বদল করা অনিবার্যই ছিল।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৫ ১৭:৫৪
Mamata Banerjee Announces Abhishek Banerjee is TMCs Parliamentary Party Leader in Lok Sabha

(বাঁ দিক থেকে) সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

‘প্রবীণ’ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জায়গায় লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা হলেন ‘নবীন’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তৃণমূলের সাংসদদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করছেন দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকেই তাঁর ওই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। ঘটনাচক্রে, তৃণমূলের অন্দরে ‘প্রবীণ-নবীন’ আলোচনা বা মতদ্বৈধ শুরু হয়েছিল মূলত সুদীপকে ঘিরেই। প্রবীণের তালিকায় রয়েছেন সাংসদ সৌগত রায়ও। তিনি অধুনা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।

Advertisement

গত কয়েক মাস ধরে সুদীপও অসুস্থতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর অসুস্থতা এতটাই গুরুতর যে, চলতি বাদল অধিবেশনে তাঁকে এক দিনও সংসদে দেখা যায়নি। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, এ হেন পরিস্থিতিতে লোকসভায় দলনেতা বদল করা অনিবার্যই ছিল। অধিবেশনের মধ্যেই তা করে দিলেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী। তৃণমূলের কাঠামো অনুযায়ী লোকসভা এবং রাজ্যসভার সংসদীয় দলের পৃথক দু’জন নেতা রয়েছেন। রাজ্যসভার সংসদীয় দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। লোকসভায় ছিলেন সুদীপ। তাঁর বদলে হলেন অভিষেক। এই দুই দলেরই মাথায় রয়েছেন মমতা। তিনি দুই কক্ষের সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন।

অনেকেই মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তৃণমূলে পরবর্তী প্রজন্মকে তুলে আনার পালাবদলের পালা শুরু হল। এখন দেখার, বাকি যে প্রবীণ সাংসদ-বিধায়কেরা রয়েছেন, তাঁদেরও দায়িত্ব ধীরে ধীরে লাঘব করা হতে থাকে কি না। ঘটনাচক্রে, বয়সের কথা খেয়াল রেখে পালাবদলের প্রসঙ্গ প্রথম এসেছিল অভিষেকের কথাতেই।

সোমবার সাংসদদের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন মমতা। সেখানেই তিনি সুদীপের খোঁজ করেন। সুদীপ জানান দেন, তিনি বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সাংসদ জানান, মমতা সুদীপকে বলেন, অসুস্থতার জন্য লোকসভার নেতাকে সংসদে বাদল অধিবেশনে দেখাই যায়নি। সুদীপ যেন বিশ্রাম নেন। তাঁর বদলে অভিষেক লোকসভার কাজকর্ম দেখবেন। বৈঠকে উপস্থিত এক সাংসদের কথায়, ‘‘সুদীপ’দা তখন নেত্রীকে বলেছিলেন, তিনি সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। নেত্রী চাইলে তিনি কালকেই (মঙ্গলবার) দিল্লি পৌঁছে যেতে পারেন। কিন্তু নেত্রী তাঁকে বলেন, তার প্রয়োজন নেই। সুদীপদা যেন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে সংসদে যান। অভিষেকই এখন থেকে লোকসভার দলনেতার কাজ করবেন। কারা কোন বিষয়ে, কখন বক্তৃতা করবেন, তা-ও অভিষেকই ঠিক করবেন। চূড়ান্ত তালিকা মমতাকে দেখিয়ে নেবেন।’’ তার পরে সুদীপ আর কিছু বলেননি।

পরে মমতা তাঁর এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদদের সঙ্গে আমি আজ ভার্চুয়াল বৈঠক করি। যে হেতু আমাদের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অসুস্থ এবং চিকিৎসাধীন, সাংসদেরা সমবেত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ওই দায়িত্ব সামলাবেন, যত দিন না সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সুস্থ শরীরে ফিরছেন।আমরা সুদীপদার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’’

Mamata Banerjee Announces Abhishek Banerjee is TMC's Parliamentary Party Leader in Lok Sabha

মমতার এক্স পোস্ট।

রাতে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে অভিষেক লেখেন, ‘‘লোকসভায় সংসদীয় দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ‘দিদি’ এবং সমস্ত সাংসদ যে আমার উপর আস্থা রেখেছেন, তার জন্য আমি সম্মানিত বোধ করছি।’’ পোস্টে অভিষেক স্পষ্ট করে দিয়েছেন, লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা হিসাবে তাঁর লক্ষ্য হবে বাংলার অধিকার এবং সম্মান রক্ষা করা। পোস্টের শেষে বাংলায় অভিষেক লিখেছেন, ‘জয় হিন্দ, জয় বাংলা’। তার পর পেশী ফোলানোর একটি ইমোজি।

অভিষেকের এক্স পোস্ট।

অভিষেকের এক্স পোস্ট।

অভিষেককে তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা করার সিদ্ধান্তকে নিছক ‘অনিবার্য’ বলে মনে করছেন না অনেকেই। বরং তাঁদের মতে, এই ঘোষণা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। কারণ, লোকসভায় তৃণমূলের সংসদীয় দলে অভিষেকের থেকেও বেশি বার জেতা এবং সংসদীয় রাজনীতিতে আরও অভিজ্ঞ সাংসদ রয়েছেন। তাঁদের বাদ দিয়ে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদকে লোকসভার দলনেতা করা ‘অর্থবহ’। অভিষেক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকও বটে। গত কয়েক বছর ধরে দলের সাংগঠনিক বিষয় মূলত তিনিই পরিচালনা করেন। তার সঙ্গেই এ বার যুক্ত হল লোকসভার দলনেতার দায়িত্বও। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের নিরিখেও এই সিদ্ধান্ত ‘গুরুত্বপূর্ণ’। ঘটনাচক্রে, গত নভেম্বরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের পরে এই অভিষেককেই তৃণমূল আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘দিল্লির মুখপাত্র’ ঘোষণা করেছিল। যা দেখে অনেকে মনে করেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির বিষয়ে দলীয় স্তরে তাঁর ‘নিয়ন্ত্রণ’ খর্ব করা হল। সেই ধারণাকে আরও মজবুত করেছিল পারিপার্শ্বিক আরও কিছু ঘটনা। যার মধ্যে অন্যতম ছিল মাঝে মাঝে অভিষেকের দলের মূলস্রোত থেকে খানিকটা সরে থাকা। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে আগের মতোই অভিষেক সংগঠনে সক্রিয়। শুধু তা-ই নয়, সর্বভারতীয় বিভিন্ন বিষয়ে দলীয় অবস্থান কী, তা-ও স্পষ্ট হচ্ছিল তাঁর সমাজমাধ্যমের নিয়মিত পোস্ট থেকে।

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা এবং অপারেশন সিঁদুরের পরে কেন্দ্রের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলে তৃণমূলের তরফে অভিষেকই এশিয়ার পাঁচটি দেশে সফর করেছিলেন। প্রথমে বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকার বহরমপুরের সাংসদ ইউসুফ পাঠানের নাম ঠিক করলেও তা মানেনি তৃণমূল। পরিস্থিতি এমন হয় যে, বরফ গলাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু মমতার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন। তার পরে মমতা অভিষেককেই ওই দায়িত্বের জন্য মনোনীত করেন। অনেকে মনে করছেন, তখনই সংসদীয় দলে অভিষেকের ভবিষ্যৎ দায়িত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। সেই ইঙ্গিতও স্পষ্টতর হল, যখন আরও এক ধাপ এগিয়ে অভিষেককেই সংসদীয় রাজনীতিতে আরও বড় দায়িত্ব দিলেন দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা।

Advertisement
আরও পড়ুন