—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
কারও হাতে ভোটার কার্ড, কারও হাতে আধার বা জমির দলিল। কেউ কেউ হাজির খালি হাতেই! উৎকণ্ঠা নিয়ে শনিবার এসআইআরের শুনানি পর্বের প্রথম দিন লাইনে দাঁড়ালেন মতুয়া উদ্বাস্তু সমাজের এমন বহু মানুষ, যাঁদের অনেকেরই ২০০২-এর ভোটার-তালিকায় নাম নেই। উত্তর ২৪ পরগনার নানা প্রান্তেই এ ছবি। বিশেষ করে, মতুয়া প্রধান বাগদা ব্লকে উদ্বেগ বেশি।
বাগদার আকন্দতলার বাসিন্দা, মতুয়া-ভক্ত বৃদ্ধ রঞ্জন মজুমদারের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে। ব্লক অফিসে শুনানির লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘ও দেশে অত্যাচারিত হয়ে এ দেশে আসি কয়েক দশক আগে। চার মাস আগে সিএএ-তে (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন) আবেদন করেছি। এখনও নাগরিকত্ব পাইনি। জানি না, চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় নাম থাকবে কি না!”
বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ থেকে ১৯৯৩ সালে এ দেশে আসেন বাগদার শাঁড়াহাটির মতুয়া সুকুমার পাণ্ডে। শুনানিতে তিনি ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ও জমির দলিল নিয়ে হাজির হন। উৎকণ্ঠা তাঁর গলাতেও।
বনগাঁ শহরের একটি মাদ্রাসায় চলা শুনানিতে হাজির গোবিন্দ সরকারের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের যশোরে। তিনি ২০০২ সালের আগে এ দেশে আসেন। বলেন, ‘‘কমিশনের চাওয়া নথি আমাদের কাছে নেই। জানি না কী হবে!”
বনগাঁরই একটি শুনানি কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে রোহিণী দাস এবং তাঁর স্বামী অজিত দাস জানান, তাঁরা জমির দলিল, আধার কার্ড দেখিয়েছেন। নাম উঠবে কি না, বুঝতে পারছেন না।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জেলায় খসড়া ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে প্রায় সাত লক্ষ ৪১ হাজার ৭০০ জনের। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই মতুয়া এবং উদ্বাস্তু সমাজের বলে মনে করা হচ্ছে। কমিশনের তরফে নির্দিষ্ট করে দেওয়া ১৩টি নথির মধ্যে অনেকের কাছেই একটিও নেই।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা একটি মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর দাবি করেন, “মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষদের কাছে কমিশনের চাওয়া নথিগুলির মধ্যে একটি-দু’টি আছে। ফলে, তাঁদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। যাঁদের কিছু নেই, তাঁরা সিএএ-তে আবেদন করলে নাগরিকত্ব, একই সঙ্গে ভোটার কার্ডও পাবেন।” শুনানিতে কেন আধার কার্ড বাধ্যতামূলক হল না, এই প্রশ্ন তুলে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা আর একটি মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর পাল্টা বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে মতুয়াদের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। জানি না, কী ভাবেমতুয়াদের বাঁচাতে পারব!”