প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
ছ’বছর পর আরও একবার নদিয়ার তাহেরপুরের মাঠে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সে বার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সিএএ (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন) পাস করিয়ে উদ্বাস্তুদের স্থায়ী নাগরিকত্বের পথ পরিষ্কার করবেন। প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। কিন্তু ঘটনাচক্রে ছ’বছর পরে মোদীর তাহেরপুর সফরের আগে আবার আলোচনার কেন্দ্রে সেই নাগরিকত্বই। সৌজন্যে: ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)।
শনিবার মতুয়াপ্রধান রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের তাহেরপুরে প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা এবং জনসভা। সঙ্গে থাকছেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ এবং জাতীয় সড়ক মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীও। জাতীয় সড়ক সংক্রান্ত দু’টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস সেরে প্রধানমন্ত্রী কী বার্তা দেবেন রানাঘাট-বনগাঁকে, কী বার্তা থাকবে অবশিষ্ট পশ্চিমবঙ্গের জন্য, সে দিকেই নজর রাজনৈতিক শিবিরের।
তাহেরপুরের নেতাজি পার্ক ময়দানে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির আয়োজন হয়েছে। সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে তৈরি হয়েছে হেলিপ্যাড। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রীর বিমান কলকাতায় নামবে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ। ১০টা ৩৫ নাগাদ হেলিকপ্টারে তিনি রওনা দেবেন তাহেরপুরের উদ্দেশে। ১১টা ৫ মিনিটে নামবেন তাহেরপুর থানার পাশে শ্মশান মাঠের হেলিপ্যাডে। ১১টা ১৫ মিনিটে পৌঁছোবেন সভাস্থলে অর্থাৎ নেতাজি পার্ক ময়দানে। মোদী প্রশাসনিক সভায় থাকবেন আধ ঘণ্টা। ১১টা ১৫ মিনিট থেকে ১১টা ৪৫ মিনিট। সেখানে ৩,০০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের জাতীয় সড়ক প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস করবেন বলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে। ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের কৃষ্ণনগর থেকে বড়জাগুলি পর্যন্ত প্রায় ৬৮ কিলোমিটার অংশকে চার লেন করে তোলার কাজ শেষ হয়েছে। সেই অংশেরই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শনিবার মোদীর হাতে হবে। পাশাপাশিই বারাসত থেকে বড়জাগুলি পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার অংশকে চার লেন করে তোলার কাজের শিলান্যাস করবেন তিনি।
বেলা ১২টা থেকে ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত রাজনৈতিক সভার মঞ্চে থাকবেন মোদী। শনিবার সেই মঞ্চ থেকে তিনি কী বলেন, সে দিকে রাজনৈতিক শিবিরের সব অংশই নজর রাখছে। কারণ, এসআইআর শুরুর পরে এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গে আসছেন মোদী। এসআইআর আবহে এমন একটি জায়গায় তিনি প্রথম সভাটি করছেন, যেটি উদ্বাস্তু তথা মতুয়াপ্রধান এলাকা হিসাবে পরিচিত এবং ভোটার তালিকায় নাম থাকা বা না-থাকা নিয়ে যে অঞ্চলে উদ্বেগও এখন যথেষ্ট। সে প্রসঙ্গে মোদী শনিবার ‘আশ্বাসবাণী’ শোনাতে পারেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর। কারণ, এসআইআর ঘিরে মতুয়া এলাকায় তৈরি হওয়া উদ্বেগের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছে বলে বিজেপি সূত্র দাবি করছে।
মোদী যে এলাকায় জনসভা করতে আসছেন, তার সংলগ্ন ফুলিয়া এবং শান্তিপুর তাঁতশিল্পের পীঠস্থান। তাই তাঁতশিল্পীদের উদ্দেশেও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বার্তা থাকতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে মোদীর সাম্প্রতিক জনসভাগুলির সবক’টিতেই বাঙালির গৌরব নিয়ে অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। এ বারের কর্মসূচি যেহেতু নদিয়া জেলায়, তাই তাহেরপুরের মঞ্চ থেকে চৈতন্য মহাপ্রভুর মাহাত্ম্যকীর্তনও প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোনা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভা বলে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পুঙ্খানুপুঙ্খ নজর রয়েছে এসপিজি-র। তবে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে তাহেরপুরে পুলিশি তৎপরতাও রয়েছে চোখে পড়ার মতো। শুধু সভাস্থল ঘিরে নয়, গোটা তাহেরপুরে এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাতেও বড়সড় বাহিনী নামিয়েছে রাজ্য পুলিশ। থানার কাছে মোদীর জন্য হেলিপ্যাড হোক বা পার্শ্ববর্তী পুরসভা বীরনগরের বিভূতি পার্ক ময়দানে গডকড়ীর জন্য হেলিপ্যাড, সর্বত্রই নজরদারি চলছে। তাহেরপুরের জনসভা শেষে শনিবার হেলিকপ্টারেই কলকাতায় ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে রওনা দেবেন অসমের গুয়াহাটির উদ্দেশে।