দিঘা জগন্নাথ ধামের উদ্বোধন হয়েছিল গত এপ্রিলে। —নিজস্ব ছবি।
উদ্বোধনের পর এক বছরও পার হয়নি। তার মধ্যেই দিঘার জগন্নাথ ধামে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছাড়াল এক কোটি। ডিসেম্বর শেষ হওয়ার আগে রেকর্ড গড়ল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্রসৈকতে তৈরি হওয়া মন্দির তথা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
২৮ ডিসেম্বর, রবিবারের বিকেলে সমুদ্রের হাওয়ায় যখন মন্দিরের ধ্বজ উড়ছে, তখনই তৈরি হল সেই ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’ জগন্নাথ ধামের কোটিতম দর্শনার্থী হিসাবে চিহ্নিত করা হয় এক খুদেকে। বালিকার নাম কাকলি জানা। কলকাতার টালিগঞ্জের মেয়েটি বাবা-মা আর ভাইয়ের সঙ্গে জগন্নাথ দর্শন গিয়েছিল রবিবার। মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে কাকলি ও তার পরিবারকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। বালিকার হাতে তুলে দেওয়া হয় জগন্নাথের মহাপ্রসাদ, মালা এবং বিশেষ স্মারক। কাকলির বাবা সুরজিৎ জানা বলেন, “আমরা তো ঠাকুর দর্শনে এসেছিলাম। কিন্তু প্রভুর কৃপায় যে এমন বিরল সম্মানের সাক্ষী হব, তা কল্পনাও করতে পারিনি। এ এক পরম প্রাপ্তি।”
২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল, অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা জগন্নাথ ধামের উদ্বোধন করেছিলেন। তার আট মাসের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা দিঘাকে তীর্থক্ষেত্র হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। বিগত কয়েক মাসে সৈকত শহরের ভোলও বদলে গিয়েছে। এখন দিঘা শুধু সমুদ্র-বিলাসের জায়গা নয়, ভক্তি এবং সাংস্কৃতিক চর্চার মহামিলনস্থল।
জগন্নাথ ধামের কোটিতম দর্শনার্থী কাকলি জানা বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে। —নিজস্ব চিত্র।
মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তথা ট্রাস্টি রাধারমণ দাসের কথায়, “এই ভিড় তো শুধু সংখ্যাতত্ত্ব নয়, প্রভু জগন্নাথের বিশ্বজনীন আকর্ষণের প্রমাণ। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই মন্দির আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।” মুখ্যমন্ত্রীর ‘দূরদর্শী চিন্তা’র প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘‘এই উদ্যোগ বাংলার আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে যেমন উচ্চতা দিয়েছে, তেমনই স্থানীয় মানুষের অন্নসংস্থানের নতুন পথ খুলে দিয়েছে।’’ রাধারমণ জানান, দিঘার ধাম এখন আর রাজ্যের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। ১৫০টি দেশের ভক্তেরা এখন দিঘামুখী। আমেরিকা, ইউরোপ বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পুণ্যার্থীদের উপস্থিতিতে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে আক্ষরিক অর্থেই আন্তর্জাতিক বৈষ্ণব সংস্কৃতির মেলবন্ধন চোখে পড়ার মতো। আধুনিক পরিকাঠামো আর সাগরের স্নিগ্ধতা— দুইয়ে মিলে মন্দিরটি যেন শান্তির মরুদ্যান।
পর্যটনের ভরা মরসুমে জগন্নাধ ধামের কোটি ছোঁয়া কীর্তিতে উচ্ছ্বসিত স্থানীয় বাসিন্দা থেকে ছোট দোকানিরা। খুশি পরিবহণ এবং হোটেল শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক ইউনিস ঋষিন ইসমাই বলেন, ‘‘উদ্বোধনের দিন থেকেই দিঘার জগন্নাথ ধামকে কেন্দ্র করে মানুষের উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দিঘার জনপ্রিয়তা। জেলা প্রশাসন সর্বদা মন্দির এবং পর্যটনকেন্দ্রের পরিকাঠামোগত বিষয় নিয়ে সজাগ।’’ উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে দিঘার উপচে পড়া ভিড় হচ্ছে। তা মাথায় রেখে পিডব্লিউডি, পিএইচই, বিদ্যুৎ দফতর থেকে পুলিশ, সকলে সমন্বয় রেখে কাজ করছে। সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতায় জগন্নাথ ধাম আজ কোটিতম দর্শনার্থীর উপস্থিতির মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলল।’’