BLO's Wedding

‘কাজ কঠিন নয়, তবে চাপের বটে!’ প্রীতিভোজে ঘরের কোণে নববিবাহিত বিএলও, মগ্ন এসআইআরের কাজে

মুর্শিদাবাদের ডোমকলের ভাতশালার বাসিন্দা মুস্তাক আহমেদ পেশায় শিক্ষক। বাড়ি থেকে স্কুল প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। সেখানকার বিএলও হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:৪১
বিয়ের প্রীতিভোজে বর ব্যস্ত এসআইআরের কাজে।

বিয়ের প্রীতিভোজে বর ব্যস্ত এসআইআরের কাজে। —নিজস্ব চিত্র।

বাড়িতে অতিথি সমাগম। হইচই। ব্যস্ত সকলে। কিন্তু যাঁর বিয়ে উপলক্ষে প্রীতিভোজের আয়োজন তিনি কোথায়? খোঁজ খোঁজ।

Advertisement

অতিথি আপ্যায়নের দায়িত্ব যার কাঁধে, তাঁকে পাওয়া গেল ঘরে। তাঁর কানে মোবাইল, হাতে কলম, চোখ এনুমারেশন ফর্মে। বিয়েতেও ছুটি নেই? নববিবাহিত বিএলও হেসে জানালেন, ‘‘এসআইআরের কাজ বাকি। সময় কম। তাই...।’’

মুর্শিদাবাদের ডোমকলের ভাতশালার বাসিন্দা মুস্তাক আহমেদ পেশায় শিক্ষক। বাড়ি থেকে স্কুল প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। সেখানকার বিএলও হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। প্রায় ৭০০ ভোটারকে এনুমারেশন ফর্ম দেওয়া, সেগুলো সংগ্রহ করা এবং বিএলও পোর্টালে আপডেট করা— দীর্ঘ কর্মকাণ্ড। কিন্তু বিয়ে তো ঠিক হয়ে গিয়েছিল আগেই। তাই এক দিকে বিয়ের প্রস্তুতি এবং অন্য দিকে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের কাজ। দুটোই সমানতালে করছিলেন মুস্তাক। বলাই বাহুল্য গত কয়েক দিন প্রচণ্ড ব্যস্ততায় কাটছে তাঁর। শনিবার বিয়ে হয়েছে। রবিবার ছিল প্রীতিভোজ। কিন্তু নববিবাহিত মুস্তাক ব্যস্ত ছিলেন এনুমারেশন ফর্ম নিয়ে।

রাজ্যে কাজের চাপে বিএলওরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বাংলায় তিন বিএলওর মৃত্যুর নেপথ্যে এসআইআরকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে বিএলও মুস্তাকের কথায়, ‘‘কাজটা যে মারাত্মক পরিশ্রমের, সেটা বলব না। তবে সময়সাপেক্ষ এবং চাপের। এই চাপটা নেওয়াই আসল। সত্যি বলতে আমি নিজেও খুব টেনশনে। সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতেই হবে।’’ তিনি জানান, অতিথি আপ্যায়নের বিষয়টা পরিবার সামলে দিয়েছে। তিনি দু’-এক বার মুখ দেখিয়ে আবার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের কাজে মন দিয়েছেন।

শিক্ষকের বিয়ের প্রীতিভোজে নিমন্ত্রিত ছিলেন প্রৌঢ় তোজাম্মেল হোসেন। তিনি মুস্তাকের দায়িত্ববোধের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সবে বিয়ের অনুষ্ঠান হল ছেলেটার। রবিবার ভোজ খেয়ে এসে আমাদেরই ঠিকঠাক ঘুম ভাঙেনি। সকালে দেখি ও এসআইআরের কাজে বেরিয়ে পড়েছে। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়ে যে দায়িত্বের প্রতি কতটা অবিচল তা আমাদের এই বিএলও সাহেবকে দেখে শিখলাম।’’

সস্ত্রীক বিএলও।

সস্ত্রীক বিএলও। —নিজস্ব চিত্র।

সোমবার প্রায় ২০ জন ভোটারের তথ্য ডিজিটালাইজ় করেছেন। ঘুরেছেন প্রায় ৩০টিরও বেশি ভোটারের বাড়ি। মাঝে দু’বার ফোন এসেছিল শ্বশুরবাড়ি থেকে। খুব বেশি কথা বলার সময় পাননি বিএলও। সোমবার বিকেলে খানিকটা জিরিয়ে নিয়ে মোস্তাক বলেন, ‘‘দিনের কাজ দিনে শেষ করতে হবে। প্রতি দিন আমি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছি। আর বিয়ে তো আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। এর মাঝে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব এসে পড়েছে। দুটোই ব্যালান্স করে এগোচ্ছি।’’

বরের কাছ থেকে সোমবারও সময় পাননি উন্মেষা সালমা। তা নিয়ে বিশেষ আক্ষেপও নেই তাঁর। পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত নববিবাহিতা। সালমার কথায়, ‘‘প্রশাসন ওকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা ব্যক্তিগত দায়িত্ব এবং সম্পর্কের থেকে অনেক বড়। সে কাজ ও ভাল ভাবে শেষ করুক। বাকি জীবন তো আমার জন্য রইল।’’

Advertisement
আরও পড়ুন