প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
বিধানসভা ভোটের আগে মতুয়া গড়ে প্রধানমন্ত্রীর সভা ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে, এসআইআর ও নাগরিকত্ব আইন এই দুই বিষয়কে কেন্দ্র করে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানাপড়েন। ভোটের মুখে তাহেরপুরে নরেন্দ্র মোদীর এই সভা তাই দক্ষিণ নদিয়ার রাজনীতিতে বাড়তি মাত্রা যোগ করছে।
মতুয়া সম্প্রদায়ের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে— এই অভিযোগ ঘিরে আগেই সরব হয়েছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনগাঁয় গিয়ে প্রকাশ্য সভা থেকে বার্তা দেন— কোনও মতুয়ার নাম যদি বাদ যায়, রাজ্য সরকার তাঁদের পাশেই থাকবে। এর পরেই গত মাসে ঠাকুরনগরে তৃণমূলপন্থী মতুয়া সংগঠনের অনশন রাজনৈতিক পারদ আরও চড়িয়েছে।
নাগরিকত্ব নিয়েও একাধিক বার কেন্দ্র ও বিজেপিকে নিশানা করেছে তৃণমূল। তাদের স্পষ্ট দাবি, মতুয়া সম্প্রদায়কে নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিতে হবে। এসআইআরের নামে বহু মতুয়ার নাম বাদ পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে শাসক দল। দক্ষিণ নদিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মতুয়ারা একটি বড়সড় ভোটব্যাঙ্ক হওয়ায় তাঁদের সমর্থন আদায়ে সব পক্ষই মরিয়া।
এই প্রেক্ষাপটে তৃণমূলের দাবি, বিজেপি-শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারই মতুয়া অধ্যুষিত এলাকায় নাম বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। অন্য দিকে বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূল ইচ্ছাকৃত ভাবে মতুয়াদের বিভ্রান্ত করছে এবং নাগরিকত্ব প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করছে।বিধানসভা ভোটের আগে তাহেরপুরে প্রধানমন্ত্রীর সভা থেকে বিজেপি তৃণমূলের অভিযোগের জবাব দিতে চাইছে। বিজেপির বক্তব্য, মতুয়াদের নাগরিকত্ব আরও সুদৃঢ় করতেই কেন্দ্র কাজ করছে, কিন্তু তৃণমূল সেই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে।
রানাঘাটের সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির অন্যতম সহ-সভাপতি জগন্নাথ সরকার বলেন,“মতুয়াদের জন্যই তো কেন্দ্রীয় সরকার ভাবনাচিন্তা করছে। তাঁদের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই মতুয়াদের নাগরিকত্ব পেতে বাধা দিচ্ছেন। তৃণমূল ভুল বোঝাচ্ছে। আগের ভোটেই প্রমাণ হয়েছে, মতুয়ারা আমাদের সঙ্গেই আছেন, এ বারও তার ব্যতিক্রম হবে না।” অন্য দিকে যুব তৃণমূলের রানাঘাট সংগঠনিক জেলার সভাপতি ও বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী পাল্টা বলেন, “বিজেপি মতুয়াদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। যাঁরা জন্মসূত্রে নাগরিক, তাঁদের কাছেই আবার নাগরিকত্বের প্রমাণ চাওয়া হচ্ছে। বিজেপি আসলে মতুয়াদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে চাইছে। এই প্রতারণার যোগ্য জবাব মতুয়ারা ভোটেই দেবেন।” সব মিলিয়ে, তাহেরপুরের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে স্পষ্ট বার্তা দেওয়াতে চাইছে বিজেপি।
অন্যদিকে, রবিবার দুর্গাপুরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘তাহেরপুরে মতুয়াদের জন্য নয়, যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে এত লুঠপাটের পরেও সেখানে সিপিএম টিকে আছে এবং পুরসভা দখলে রেখেছে, তৃণমূল যেটা পারেনি, মোদী আসছে লাল হটানোর চেষ্টা করতে।’’