Election Commission Of India

পুনর্যাচাই: ৪ দিনে এক কোটির বেশি

বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত চলা এসআইআরের প্রথম পর্ব তথা এনুমারেশন পর্যায়ে এত নথিবদ্ধ তথ্য দাগিয়ে দিয়েছে কমিশনের তথ্য যাচাইয়ের সফটওয়্যার। যেগুলি প্রধানত গত ২০০২ সালে এসআইআর-তালিকার সঙ্গে এখনকার ভোটারের মিল সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৩০

—প্রতীকী চিত্র।

চার দিনে অন্তত ১ কোটি ৬০ লক্ষ নাম। শুক্রবার থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যক ভোটার-তথ্য পুনর্যাচাইয়ের নির্দেশ দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সেই যাচাই করতে হবে প্রধানত বিএলও-দেরই।

তবে কমিশন সূত্রের বক্তব্য, এই সংখ্যক নথি চিহ্নিত করার অর্থ এটা নয়, যে পুরোটাই ভুয়ো তথ্যের উপর ভর করে বা অসাধু উপায়ে নথিবদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে কাজের স্বাভাবিক ভুল থাকতে পারে। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ভুয়ো তথ্য দাখিল হয়েছে কি না, তা-ও বুঝে নেওয়া জরুরি। পুনর্যাচাইয়ের পরেও জটিলতা থাকলে তখন শুনানিতে ডাকার কথা।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত চলা এসআইআরের প্রথম পর্ব তথা এনুমারেশন পর্যায়ে এত নথিবদ্ধ তথ্য দাগিয়ে দিয়েছে কমিশনের তথ্য যাচাইয়ের সফটওয়্যার। যেগুলি প্রধানত গত ২০০২ সালে এসআইআর-তালিকার সঙ্গে এখনকার ভোটারের মিল সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে। শুক্রবার পাওয়া কমিশনের তথ্য— এ রাজ্যে মোট প্রায় ৭.৬৬ কোটি ভোটারের মধ্যে ৩৮.৩৪% ভোটারের নাম দুই তালিকায় ছিল (সেল্ফ ম্যাপিং)। ৫০.০৭% ভোটার পারিবারিক কোনও সম্পর্কের নিরিখে মিল নথিবদ্ধ করেছেন। সংখ্যার নিরিখে তা প্রায় ৩.৮৩ কোটি ভোটার। অনেকের মতে, শুধু ‘ম্যাপিংয়ের’ নিরিখে এত সংখ্যক চিহ্নিত হলে, এর প্রায় অর্ধেক তথ্য পুনর্যাচাইয়ের আওতায় থাকতে পারে!

এনুমারেশন পর্ব যত শেষের দিকে এগিয়েছে, ততই পুনর্যাচাইয়ের চাপ বাড়তে শুরু করেছিল বিএলও-দের উপর। তাঁদের নির্দিষ্ট অ্যাপেও সংশোধনের বাড়তি ‘অপশন’ যোগ করে কমিশন। কিন্তু তখন সেগুলি ছিল প্রধানত একই নামে একাধিক ভোটারের উপস্থিতি সংক্রান্ত। কমিশন সূত্রে শুক্রবার জানা গিয়েছে, আরও অনেকগুলি মানদণ্ডে চিহ্নিত হওয়া প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ নাম এ বার পুনর্যাচাই করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, সেই মানদণ্ডগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, একই মা-বাবা অথবা ঠাকুরদা-ঠাকুরমার নামে বহু লোকের ‘ম্যাপ’ করানো রয়েছে। কোথাও পিতার বয়স ৮৫, অথচ ছেলের বয়স ৩০। কমিশন-কর্তাদের বক্তব্য, বিষয়টি একেবারে অস্বাভাবিক নয় ঠিকই। তবে সংখ্যার নিরিখে এমন ‘এন্ট্রি’গুলি খতিয়ে দেখা জরুরি। কোথাও দেখা গিয়েছে, পিতার বয়স ৫০-৫৫ বছর, অথচ সন্তানের বয়স ৩৫-এর বেশি। বেশ কিছু তথ্যে বয়স্ক কোনও ব্যক্তির সঙ্গে ম্যাপ করানো হয়েছে, অথচ সম্পর্কের পরিচয় দেওয়া হয়েছে ‘আদার্স’ বা অন্যান্য হিসেবে। আবার কিছু তথ্য আগে চিহ্নিত করে বলার পরেও সংশোধন করা হয়নি। ঘটনাচক্রে, তথ্য নথিবদ্ধ করার সময়ে একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে বিভিন্ন মহল থেকে।

গত ১ ডিসেম্বরই কমিশন লিখিত ভাবে জানিয়েছিল, ২০০২ সালের তালিকায় নাম ছিল বলে যাঁরা জানিয়েছিলেন, তাঁদের বয়স সেই সময়ে ৬০ বছর বা তার বেশি ছিল কি না, তা দেখতে হবে। নজর দিতে হবে তেমন ভোটারদের দিকে, যাঁদের ২০০২ সালের তালিকায় মা-বাবা অথবা ঠাকুরদার নাম ছিল এবং ২০২৫ সালে বয়স ৫০ বছর বা তার বেশি। ২০২৫ সালে অক্টোবরের পরে ভোটার তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মা-বাবার নাম সংক্রান্ত তথ্য যদি এনুমারেশনে দেওয়া তথ্যের সঙ্গে না মেলে, তার যাচাই হতে হবে। ২০০২ সালের তালিকায় দেখানো মা-বাবার বয়সের সঙ্গে ভোটারের বয়সের ব্যবধান ৪৫ বছরের বেশি বা ১৮ বছরের কম হলেও, তা দেখতে হবে।

আরও পড়ুন