গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
দৈনিক শুনানির সংখ্যা আরও কিছুটা বাড়াতে চাইছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, জেলা-কর্তাদের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে তাঁদের। এর লক্ষ্য— ম্যাপিংয়ের আওতায় না থাকা ভোটারদের শুনানি দ্রুত শেষ করে তথ্যগত গরমিল থাকা ব্যক্তিদের নিবিড় শুনানির জন্য হাতে তুলনায় বেশি সময় রাখা।
অন্য দিকে, বিএলও-দের অ্যাপে ত্রুটি সংশোধনের জন্য একটি সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। তাতে তথ্য নথিভুক্তির খামতি ওই স্তরেই দূর করে ফেলা যাবে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত এক জন আধিকারিক দৈনিক সর্বাধিক ১০০টি শুনানি করবেন বলে ঠিক হয়েছিল। কমিশন এখন চাইছে, সেই সংখ্যা বাড়িয়ে ১৫০ করা হোক। লক্ষ্য রয়েছে, ৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রাথমিক শুনানিগুলি সেরে ফেলা। এই স্তরে রয়েছেন সেই ভোটারেরা, ২০০২ সালের এসআইআরের সময়কার ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম বা পারিবারিক সংযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, প্রায় ৩১ লক্ষ তেমন ভোটারদের জন্য শুনানির নোটিস জারি করা শুরু হয়ে গিয়েছে। সোমবার পর্যন্ত প্রায় ১১ লক্ষ নোটিস বের হয়েছে। আজ, মঙ্গলবারের মধ্যে বাকি নোটিসগুলিও বের করার চেষ্টা হচ্ছে। এই গোত্রের ভোটারদের শুধু নথি-সহ জানাতে হবে, তিনি এদেশের নাগরিক।
পরবর্তী পর্যায়ে নিবিড় শুনানির লক্ষ্য রয়েছে কমিশনের। তাদের নিজস্ব যাচাইয়ে এমন প্রায় ১.৩৬ লক্ষ ভোটারের সন্ধান মিলেছে, যাঁদের তথ্যগত এমন কিছু ত্রুটি রয়েছে, যা বাস্তবের সঙ্গে মানানসই নয়। যেমন, ছ’জনের বেশি ব্যক্তির পিতৃপরিচয়ে একজন ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে। আবার অনেকেই আছেন, যাঁদের এনুমারেশন ফর্মে দেওয়া বাবার নাম এসআইআর তালিকায় মিলছে না। আবার বাবার সঙ্গে ছেলে বা ঠাকুরদার সঙ্গে নাতির বয়সের ব্যবধান অস্বাভাবিক ভাবে কম বা বেশি নিয়েও কিছু ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে। কমিশনের বক্তব্য, খটকা থাকলেও সব ‘ভুয়ো ভোটার’ বলে ধরা হচ্ছে না। নথিবদ্ধ করার ভুল বা পদ্ধতিগত ত্রুটিও হতে পারে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ ভোটারের ক্ষেত্রে এমনটা হওয়ার কথা নয়। তাই ‘হিউম্যান এরর’গুলি সংশোধনের পরে যাঁরা বাকি থাকবেন, তাঁদের শুনানিতে ডাকা হবে এবং নিবিড় যাচাই করবেন আধিকারিকেরা।
প্রসঙ্গত, এই ত্রুটি সংশোধনের জন্য বিএলও-অ্যাপে একটি সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে কিছু দিন আগেই। তাতে ‘লজিক্যাল ডিসক্রিপ্যান্সি’গুলি পুনর্যাচাই এবং সংশোধন করাতে পারবেন ভোটারেরা। কিন্তু এখন নতুন করে কোনও ম্যাপিং করা যাবে না। পাশাপাশি, শুনানির জন্য যাঁদের নোটিস তৈরি হয়েছে, তাঁদের কাছে তা পৌঁছচ্ছে কি না, তা ওই অ্যাপে আরও একটি সুবিধার মাধ্যমেজানতে পারবেন বিএলও। কমিশনের ব্যাখ্যা, নামের বানান, মাঝের নাম থাকা বা না-থাকার সমস্যা ইত্যাদি ছোটখাটো ত্রুটিগুলি সংশোধন করে ফেলা সম্ভব অ্যাপেই। এতে অনেকের সুবিধা হবে।
সব ঠিক থাকলে হাজার চারেক মাইক্রো অবজ়ার্ভারের প্রশিক্ষণ হতে পারে কাল, বুধবার। ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে এক-এক জনকে নির্ধারিত এলাকায় পৌঁছে যেতে হবে। তাঁদের নজরদারিতেই এক-একটি বিধানসভা এলাকায় শুনানি করবেন এক জন ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও) এবং ১০ জন করে এইআরও। তাঁদের সহযোগিতার জন্য ইতিমধ্যে প্রায় ২৮০০ জন অতিরিক্ত এইআরও নিয়োগের অনুমোদন দিয়ে রেখেছে কমিশন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতর প্রয়োজন মতো তাঁদেরব্যবহার করবে।
এ দিন কমিশন যে তথ্যদিয়েছে তাতে, খসড়া তালিকা প্রকাশের পর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ ফর্ম ৬ বা নতুন নাম তোলার আবেদন করেছেন। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ আবেদন করেছেন ফর্ম ৭ দিয়ে, যাতে মৃত ব্যক্তিকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার উপায় রয়েছে।
এ দিনই সিইও দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল প্রভাবিত বিএলও অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্যরা। সেখানে থাকা ব্যারিকেড উপড়ে ফেলার চেষ্টা করেন তাঁরা। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয় তাদের। অভিযোগ, এক জন পুলিশ কর্মী এতে আহত হয়েছেন। নতুন আর একটি মঞ্চ করার জন্য উপকরণ সামগ্রী নিয়ে একটি গাড়ি বিক্ষোভকারীরা নিয়ে এলে সেটিকে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। দীর্ঘক্ষণ এই পরিস্থিতি চলতে থাকে।