Digha Jagannath Dham

পুরীর মন্দিরের নিমকাঠ দিঘায় আসেনি, বিতর্কে ইতি টানল ওড়িশা সরকার! ‘বদনাম কেন রটালেন?’ প্রশ্ন তুললেন মমতা

পুরীর মন্দির প্রশাসন তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছে ওড়িশা সরকারকে। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই ‘নিমকাঠ’ বিতর্কে ওড়িশার আইনমন্ত্রী হরিচন্দ্রন ইতি টানেন। তবে ‘ধাম’ শব্দ সরানোর অনুরোধ জানাবে ওড়িশা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৫ ১৫:০৯
No sacred wood from Puri Temple has been transported to Digha for making of Idols, Clarifies Odisha Government, But ‘Dham’ is still an objection for them

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

নিমকাঠ বিতর্কে ইতি। তবে ‘ধাম’ নিয়ে জিইয়ে রইল টানাপড়েন। পুরীর ‘শ্রীজগন্নাথ মন্দির প্রশাসনে’র রিপোর্ট পাওয়ার পরে ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দ্রন জানিয়েছেন, নবেকলেবরে উদ্বৃত্ত হওয়া নিমকাঠ দিয়ে দিঘার মন্দিরের বিগ্রহ নির্মিত হয়নি। পুরীর মন্দিরের যে সেবায়েত বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরার সামনে বলেছিলেন যে, পুরীর নিমকাঠ এনেই দিঘার বিগ্রহ তৈরি হয়েছে, তিনিও দাবি করেছেন যে, তিনি ‘মুখ ফস্কে ভুল’ বলে ফেলেছিলেন। ফলে মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে ফের মুখ খুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমার নামে বদনাম করলেন কেন? তা হলে কত টাকা ফাইন হওয়া উচিত?’’

Advertisement

দিঘায় জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার বিগ্রহ যে পুরীর মন্দির থেকে নিমকাঠ এনে করা হয়নি, তা ওড়িশা সরকারের তরফ থেকে সোমবারই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়। পুরীতে জগন্নাথের নবকলেবর নির্মাণের পরে যে নিমকাঠ উদ্বৃত্ত ছিল, সেই কাঠ দিয়েই দিঘার মন্দিরের জন্য বিগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে পুরীর এক সেবায়েত দাবি করায় বিতর্ক ছড়িয়েছিল। পুরীর মন্দির থেকে নিমকাঠ অন্যত্র সরানোর ‘খবর’ অজস্র জগন্নাথভক্তের মনে এবং সাড়ে চার কোটি ওড়িশাবাসীর মনে গভীর আঘাত দিয়েছে বলে ওড়িশার আইনমন্ত্রী হরিচন্দ্রন মন্দির প্রশাসনকে লিখেছিলেন। নিমকাঠ মন্দির থেকে অন্যত্র পাঠানোর সঙ্গে এবং দিঘায় বিগ্রহ তথা মন্দির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে পুরীর মন্দিরের কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখতে মন্দির প্রশাসনকে অনুরোধ করেন হরিচন্দ্রন। আইনমন্ত্রীর চিঠি পেয়ে মন্দির প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ করে। যে সেবায়েত দাবি করেছিলেন যে, পুরীর মন্দিরের নিমকাঠ দিয়েই দিঘায় বিগ্রহ তৈরি করা হয়েছে, তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি পুরীর মন্দিরের কাঠ দিঘায় পাঠানোর কথা অস্বীকার করেন। পুরীতে জগন্নাথের বিগ্রহ তৈরির কাজ যাঁরা করেন, সেই মহারানা সেবকদের সঙ্গেও মন্দির প্রশাসন কথা বলেন। তাঁরাও জানান যে, পুরীর মন্দিরে উদ্বৃত্ত হওয়া নিমকাঠ অন্য কোথাও পাঠানো হয়নি। তার পরেই আইনমন্ত্রীকে রিপোর্ট পাঠানো হয়। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরে হরিচন্দ্রন সোমবার জানান, পুরীর উদ্বৃত্ত নিমকাঠ দিঘায় ব্যবহৃত হয়নি।

হরিচন্দ্রন অবশ্য দিঘার মন্দিরের নামকরণে ‘ধাম’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে আপত্তি বহাল রেখেছেন। তিনি জানিয়েছেন, দিঘায় নবনির্মিত মন্দিরের নাম থেকে ‘জগন্নাথধাম’ কথাটি সরানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ওড়িশা সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে অনুরোধ করবে। হিন্দু পরম্পরা অনুযায়ী যে চারটি সর্বোচ্চ ধর্মীয় পীঠস্থান ‘ধাম’ হিসেবে চিহ্নিত, পুরী তার মধ্যে একটি। তাই দিঘার মন্দিরের নামকরণে ‘ধাম’ শব্দের ব্যবহার ভক্তদের মনে আঘাত দিচ্ছে বলে হরিচন্দ্রন মন্তব্য করেছেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা সোমবারই বলেছিলেন যে, দিঘার বিগ্রহের নিমকাঠ পুরীর মন্দির থেকে আনা হয়নি। পুরীর মন্দির প্রশাসন এবং ওড়িশার সরকারও পরে সেই একই কথা মেনে নিয়েছে। তাই মঙ্গলবার ফের বিষয়টি নিয়ে মমতা মুখ খুলেছেন। মুর্শিদাবাদের সুতিতে ভাষণ দেওয়ার সময়ে মমতা বলেন, ‘‘বলছে আমি নাকি নিমকাঠ চুরি করেছি। কান মুলে দেওয়া উচিত। বাংলায় কি নিমগাছ নেই? যাঁরা বলেছিলেন ওই কথা, তাঁরাই বলছেন ঠিক নয়।’’ কারও নাম না-করে কটাক্ষের সুরে মমতা মঙ্গলবার নিমকাঠ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘আমরা অত ভিখারি নই। পকেটমারও নই, জোতদারও নই। আমরা পাহারাদার।’’

Advertisement
আরও পড়ুন