—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
কোচবিহারের সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দা যে মেয়েদের এলাকার বাইরে বিয়ে হয়েছে, তাঁদের অনেককেই ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন সংক্রান্ত (এসআইআর) নোটিস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অথচ, প্রথমে ২০১১ এবং পরে ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময়ের সময়ে সমীক্ষায় ওই বাসিন্দাদের নাম ছিল না। সে কারণে এখন তাঁদের ছিটমহলের বাসিন্দা হিসাবে ধরা হচ্ছে না। তাঁদের পূর্বপুরুষদের নামও আগের ভোটার তালিকায় নেই। শুক্রবার এই সমস্যা নিয়ে মহকুমাশাসককে (দিনহাটা) স্মারকলিপি দিলেন সাবেক ছিটমহলবাসী।
আন্দোলনকারী জয়নাল আবেদিন, আজিবর শেখরা জানিয়েছেন, তথ্য অনুযায়ী, ৩৫ জনের মতো বাসিন্দাকে এই নোটিস দেওয়া হয়েছে। ২০১৫-র ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি কার্যকর হয়। সে ক্ষেত্রে এসআইআরের জন্য সেখানকার বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব প্রমাণে কী নথি জমা দিতে হবে, তা নিয়ে প্রথমে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। পরে, রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজকুমার আগরওয়াল জানান, ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের অসুবিধে হবে না। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের আশ্বাসে ফর্ম নিতে শুরু করেন বাসিন্দারা। কিন্তু জটিলতা হয় অন্য ক্ষেত্রে।
সাদ্দাম জানান, সাবেক ছিটমহলের এক হাজারের বেশি মেয়ের বিয়ে হয়েছে ২০১১ সালের আগে। ২০১১ ও ২০১৫ সালের সমীক্ষায় ওই মেয়েদের নাম নেই। সে বিষয়টি মাথায় রেখে তাঁদের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় তোলার আর্জি তাঁরা জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও অনেকে নোটিস পেয়েছেন। সে ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের কাছে যেনথি চাওয়া হচ্ছে, তা-ও তাঁদেরকাছে নেই।
দিনহাটা ২ ব্লকের দক্ষিণ গাউচুলকা গ্রামের বাসিন্দা হাওয়া বিবি জানান, ছিটমহল বিনিময়ের প্রায় ২০ বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল ভারতীয় গ্রাম কুমারগঞ্জে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ছিলাম মশালডাঙা ছিটমহলের কচুয়া গ্রামে। বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে চলে আসি। এখন দক্ষিণ গাউচুলকা গ্রামে নতুন বাড়ি করেছি। শ্বশুরবাড়ির সকলেই ভারতীয়। আমি ছিটমহলের বাসিন্দা। ৩১ ডিসেম্বর শুনানির নোটিস পেয়েছি। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না!’’
দিনহাটার বিধায়ক তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেছেন, ‘‘ছিটমহল চুক্তির বিনিময়ে ওই মানুষগুলি ২০১৫ সালে ভারতীয় নাগরিক হয়েছেন। চুক্তির অনেক আগে অনেক মেয়ের বিভিন্ন জায়গায় বিয়ে হয়েছে। ওঁদের দায়িত্ব ভারত সরকারকে নিতে হবে।’’ এক সময়ে ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনের পরিচিত মুখ, বর্তমানে বিজেপি নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, যাঁরা নোটিস পেয়েছেন, তাঁদের নাম ও পরিবারের নাম ইতিমধ্যে হলফনামা করে প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। বাকি প্রশাসনের দায়িত্ব। এ দিন বহু চেষ্টাতেও কোচবিহারের জেলাশাসক রাজু মিশ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে। নির্দেশ মতো কাজ হবে।’’