Glenary's Bar and Restaurant

‘সেতু বিতর্কের পরেই বন্ধ’ গ্লেনারিজ়ের পানশালা! ‘রহস্য’ দেখছেন অজয়, জিটিএর দাবি: আইজিজেএফ নেতা ‘মিথ্যা বলছেন’

পানশালা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় এ বার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন অজয়। তাঁর হয়ে আদালতে সওয়াল করবেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:৪৩
অজয় এডওয়ার্ড।

অজয় এডওয়ার্ড। — ফাইল চিত্র।

বেনিয়মের অভিযোগে আগামী তিন মাসের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দার্জিলিঙের ঐতিহ্যবাহী রেস্তরাঁ ‘গ্লেনারিজ়’-এর পানশালা। তবে খোলা রয়েছে রেস্তরাঁ। পানশালা বন্ধকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক পারদ চড়ছে পাহাড়ে। তাঁর রেস্তরাঁর পানশালা বন্ধের সময় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ইন্ডিয়ান গোর্খা জনশক্তি ফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা মালিক অজয় এডওয়ার্ড। তাঁর প্রশ্ন, সেতু উদ্বোধনের ১২ ঘণ্টার মধ্যেই কেন এই পদক্ষেপ? এর নেপথ্যে ‘রহস্য’ রয়েছে বলেও দাবি করেছেন অজয়। আঙুল তুলেছেন জেলা পুলিশের দিকেও। যদিও জিটিএ অজয়ের এই বক্তব্য উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, অজয়কে নোটিস আগেই পাঠানো হয়েছে। এখন তিনি মিথ্যা বলছেন। এই ঘটনায় হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন অজয়।

Advertisement

সম্প্রতি বিজনবাড়ি ব্লকের জোড়বাংলোয় টুংসুং চা-বাগানের কাছে টুংসুং খোলা (নদী)-র উপরে একটি সেতু তৈরি হয়। রবিবার সেই সেতুর উদ্বোধন করেন অজয়। তার সামনে লেখা ‘গোর্খাল্যান্ড’। অজয় দাবি করেন, সেই সেতু পাহাড়বাসীর চাঁদায় তৈরি হয়েছে। যদিও একাংশের অভিযোগ, সেতু তৈরির টাকা মূলত দিয়েছেন ‘গ্লেনারিজ়-কর্তা’। সেই নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)। সেই সেতু তৈরির পরেই নির্দিষ্ট নথি ও নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আগামী তিন মাসের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অজয়ের রেস্তরাঁর পানশালা। অজয়ের অভিযোগ, সেতু তৈরির পরে ঘটনাচক্রে এই পদক্ষেপ করেনি আবগারি দফতর। সরাসরি জিটিএর বিরুদ্ধে তোপ না দাগলেও তিনি বলেন, ‘‘সময়টা খুব রহস্যজনক। সেতু উদ্বোধন হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই এত তড়িঘড়ি ব্যবস্থা, নিঃসন্দেহে সন্দেহজনক।’’ অজয়ের এই মন্তব্যকে উড়িয়ে দিয়েছে জিটিএ। জিটিএ মুখপাত্র এসপি শর্মা বলেন, ‘‘অজয় এডওয়ার্ড মিথ্যে কথা বলছেন। কারণ, গত ১৪ নভেম্বর অজয়কে নোটিস দিয়েছিল আবগারি বিভাগ। হঠাৎ করে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।’’

বর্ষেশেষের উৎসবের আবহে ‘গ্লেনারিজ়’-এর পানশালা বন্ধ হওয়ায় কিছুটা ভেঙে পড়েছেন দার্জিলিঙের পর্যটকেরা। পানশালা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় এ বার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন অজয়। তাঁর হয়ে আদালতে সওয়াল করবেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। অজয় বলেন, ‘‘আমার আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য হাই কোর্টে গিয়েছেন। আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করছি। যদি কোনও প্রকার সুরাহা না মেলে, তা হলে সম্পূ্র্ণ গ্লেনারিজ় বন্ধ রাখতে হবে। পানশালা বন্ধ হওয়ার পরে রেস্তরাঁর বিক্রি ৫০ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। হাইকোর্ট কী রায় দেয়, তার উপর নির্ভর করেছে সবটা।’’

দার্জিলিং জেলা পুলিশের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অজয়। তিনি বলেন, ‘‘জেলা পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ আমাকে অনুমতি দিয়েছিলেন। বিগত পুলিশ সুপারও অনুমতি দিয়েছিলেন ‘সিঙ্গিং বার’ চালাবার। পার্ক স্ট্রিটে যখন থেকে হচ্ছে, তারও আগে লাইভ ব্যান্ড এখানে পারফর্ম করে। ১৫০ বছরের পুরোনো এই বিল্ডিং। বর্তমান পুলিশ সুপার লিখিত অনুমতি দিলেও পরবর্তী কালে তিনি এটা আর চালাতে দিলেন না৷ এটা সঠিক নয়। এই বিষয়টা সন্দেহজনক।’’

দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ সাফ বলেন, ‘‘এই পানশালার অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে আমার বা পুলিশের কোনও ভূমিকাই নেই। নিয়ম অনুযায়ী এটা আবগারি দফতরের কাজ। অনুমতি দেবে কি দেবে না, সবটাই আবগারি বিভাগের উপর নির্ভরশীল।’’

জিটিএ মুখপাত্র শক্তিপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘‘নভেম্বর মাসের ১৪ তারিখে আবগারি দফতর নোটিস দেয় অজয় এডওয়ার্ডকে। হঠাৎ করে হয়েছে এমন কোনও বিষয় নেই। অজয় যে কথাগুলো বলছেন, তার কোনও মানে নেই। তিনি জানতেন, যে তাঁর পানশালার লাইসেন্স বা বার বন্ধ হবে। এর মাঝে গোর্খাল্যান্ড সেতু নিয়ে একটা ‘ভিক্টিম কার্ড’ খেলার চেষ্টা করছেন। সবটাই জনগনের সামনে।’’

গ্লেনারিজ় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে, পর্যটন ব্যবস্থার উপরে কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে চিন্তায় পর্যটন সংস্থাগুলি। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজ়ম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট স্যানাল বলেন, ‘‘দার্জিলিঙের পর্যটকদের কাছে গ্লেনারিজ় বাড়তি আকর্ষণ। তা নিয়ে যে নস্টালজিয়া রয়েছে, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। কাগজপত্র সঠিক থাকলে তাঁর আইনের দ্বারস্থ হওয়া উচিত।’’

Advertisement
আরও পড়ুন