Gorkhaland Bridge

গোর্খাল্যান্ড সেতু বেআইনি ভাবে তৈরি, দাবি জিটিএ-র! অজয়ের দেওয়া নাম নিয়ে আপত্তি কিসের, উঠছে সে প্রশ্নও

বিজনবাড়ি ব্লকের জোড়বাংলোয় টুংসুং চা-বাগানের কাছে টুংসুং খোলা (নদী)-র উপরে একটি সেতু তৈরি করা হয়। রবিবার তাঁর উদ্বোধন করেন অজয় এডওয়ার্ড। সেই সেতুর সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘গোর্খাল্যান্ড’!

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:১৬
Political tension over Ajay Edward\\\\\\\'s Gorkhaland Bridge

টুংসুং চা-বাগানের কাছে নদীর উপর নবনির্মিত সেই সেতু। —নিজস্ব চিত্র।

সেতুর সামনে বড় বড় করে ‘গোর্খাল্যান্ড’ লেখা নিয়ে পাহাড়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। ‘ইন্ডিয়ান গোর্খা জনশক্তি ফ্রন্ট’-এর প্রধান অজয় এডওয়ার্ডের তৈরি ওই সেতুর নামকরণের নেপথ্যে ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ দেখছে পাহাড়ের ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)। তারা মনে করে, সেতুটি অবৈধ ভাবে নির্মাণ করেছেন অজয়। তবে অনেকের মতে ‘গোর্খাল্যান্ড’ শব্দ নিয়ে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। কারণ জিটিএর মধ্যেই রয়েছে ‘গোর্খাল্যান্ড’ শব্দটি।

Advertisement

বিজনবাড়ি ব্লকের জোড়বাংলোয় টুংসুং চা-বাগানের কাছে টুংসুং খোলা (নদী)-র উপরে একটি সেতু তৈরি করা হয়। রবিবার তাঁর উদ্বোধন করেন অজয়। সেই সেতুর সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘গোর্খাল্যান্ড’! অজয় বার বার দাবি করছেন, এই সেতু সরকারি টাকায় তৈরি নয়। পাহাড়ের মানুষ চাঁদা তুলে তৈরি করেছে। তবে পাহাড়ের রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, পাহাড়বাসী এবং পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘ দিনের ‘পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ড’-এর দাবি মেটেনি। সেই দাবিকেই জিইয়ে রাখতে সেতুর সামনে বড় বড় করে গ্লো সাইন বোর্ডে ‘গোর্খাল্যান্ড’ লেখা হয়েছে!

স্থানীয় সূত্রে দাবি, ১৪০ ফুট দীর্ঘ সেতু তৈরিতে সরকার, জিটিএ বা স্থানীয় প্রশাসন কোনও টাকা খরচ করেনি। এমনকি অনুমতিও নেওয়া হয়নি প্রশাসনের। সেতুটি স্থানীয় মানুষ, ১৬ টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আর অজয়ের আর্থিক সাহায্যে তৈরি হয়েছে। টুংসুং চা-বাগানের সঙ্গে ধোতরে ভ্যালির মধ্যে যোগাযোগের সুবিধার জন্য এই সেতুর দাবি ছিল অনেক দিনেরই। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তবে অনেকের দাবি, প্রশাসন, পুলিশ এবং রাজনৈতিক চাপের কারণে এত দিন এই সেতু তৈরি হয়নি। কিন্তু সেতুর সামনে ‘গোর্খাল্যান্ড’ লেখা নিয়ে আপত্তি পাহাড়ের শাসকদল ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার।

অনেকের মতে, গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সামনে রেখে পাহাড়বাসীর আবেগকে কাজে লাগাতে চাইছেন অজয়। তবে অজয়ের দাবি, ‘‘গোর্খাল্যান্ড সেতু প্রমাণ করেছে যে, যতই বাধা আসুক না কেন, সবাই মিলে চাইলে তা আটকানো যায় না। এর আগে এই সেতু নির্মাণের জন্য অনেক বার সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু কেউ শোনেনি।’’ কেন এমন নামকরণ? অজয়ের কথায়, ‘‘পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ড আমাদের স্বপ্ন, আমাদের আবেগ। কিন্তু ২০১৭ সালের পর থেকে সেই দাবি অনেকটাই স্তিমিত হয়ে গিয়েছে। তাই সেই দাবিকে আবার মানুষের মনে জাগিয়ে তুলতে এই নামকরণ করা হয়েছে।’’

অন্য দিকে, ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা তথা জিটিএর মুখপাত্র শক্তিপ্রসাদ শর্মা এই নামকরণকে রাজনৈতিক অবস্থান (পলিটিক্যাল স্টান্ট) বলে মনে করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনের আগে একটা সেতুর নামকরণ গোর্খাল্যান্ড করে আসলে গোর্খাল্যান্ডের আবেগকে কাজে লাগাতে চাইছেন অজয়। কিন্তু মানুষ এতো বোকা নয়।’’ সেতু তৈরির ঠিকাদার সুরজ তামাংয়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই মামলা দায়ের হয়েছে। গ্রেফতারও করা হয় তাঁকে। সেই প্রসঙ্গ টেনে শক্তিপ্রসাদ বলেন, ‘‘সেতু তৈরির ব্যাপারে কোনও দফতরের কোনও অনুমতি ছিল না। এমন ধসপ্রবণ এলাকায় নিজের ইচ্ছে মতো কোনও কাজ করা যায় না।’’ এ ব্যাপারে অজয়ের দাবি, ‘‘এখানে জিটিএ-র কোন ভুমিকা নেই৷ কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের কোনও ভুমিকা নেই যে তাদের নামে হবে৷ এটা সেই সব মানুষদের যাঁরা গোর্খাল্যান্ডের স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্ন প্রতিপালন করেন৷ এটা গোর্খাল্যান্ডের একটা নিদর্শন। উল্টে জিটিএ এটার বিরোধিতা করেছে৷ আমাদের সেতু তৈরি করতে সব রকমের অসুবিধে করেছে তারা।’’

অজয়ের ‘গোর্খাল্যান্ড’ সেতু উস্কে দিয়েছে বছর কয়েক আগে বিমল গুরুংয়ের গাড়ির নম্বর প্লেট বিতর্ককেও। একটা সময় গোর্খাল্যান্ড (জিএল) নম্বর প্লেটের গাড়ি ব্যবহার করতে দেখা যেত বিমলকে। সেই সময় ‘জিএল’ নম্বর প্লেট নিয়ে স্থানীয় চালক সংগঠনদের মধ্যেও উত্তেজনার পারদ চড়েছিল। অনেকেই বিমলকে অনুসরণ করেন। যদিও প্রশাসন কড়া হাতে সেই প্রবণতা দমন করে। অনেক গাড়ির চালক এবং মালিককে গ্রেফতারও করা হয়। তবে বিমলের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এত দিন পর আবার ‘গোর্খাল্যান্ড’ সেতু নিয়ে একই বিতর্কে জন্ম নেয়। সেতু তৈরির ঠিকাদারকে গ্রেফতার করা হলেও অজয়ের বিরুদ্ধে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।

Advertisement
আরও পড়ুন