দার্জিলিঙের পথে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। — নিজস্ব চিত্র।
দুর্নীতির অভিযোগে চাকরি হারিয়েছেন জিটিএ (গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) এলাকার ৩১৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। তার পরেই বিক্ষোভ শুরু পাহাড়ে। বৃহস্পতিবার সকালে পাহাড়ের সব স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ রেখে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে শামিল হন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের বিক্ষোভে শামিল হতে দেখা যায় অন্য শিক্ষক এবং শিক্ষা সংগঠনের সদস্যদের।
প্রথমে ঘুম রেল স্টেশন থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল গোটা পাহাড় পরিক্রমা করে। পরে দার্জিলিং রেল স্টেশনের সামনে একটি পথসভা হয়। সেখান থেকে ফের মিছিলটি গোর্খা ভবন পর্যন্ত যায়। সেখানে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের আগামী কর্মসূচি নিয়ে বৈঠকে বসে চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকারা এবং সংযুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতি।
বেআইনি নিয়োগের অভিযোগে ৩১৭ জনের চাকরি খারিজ করে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বেঞ্চ। বিচারপতির মন্তব্য, ওই নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বেআইনি এবং আইনবিরোধী। আদালতের এই রায়ের ফলে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিপাকে পড়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল এবং পাহাড়ের শাসকদল অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। যদিও চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়িয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন অনীত। তবে সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও।
চাকরিহারা শিক্ষক সংগঠনের সদস্য দিবস ছেত্রী বলেন, ‘‘আমাদের চাকরি হারাতে হয়েছে, তার দায় একমাত্র জিটিএ এবং রাজ্য সরকারের। আমাদের নিয়োগ যদি বেআইনি হয়, তবে আমরা যে এত দিন ধরে পাহাড়ের ছাত্রদের পড়িয়েছি, পরীক্ষা নিয়েছি, পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালন করেছি, সে সব বেআইনি। সেগুলিকেও বাতিল করা হোক। অবিলম্বে সসন্মানে আমাদের পুনর্নিয়োগ করতে হবে। না হলে আমাদের লাগাতার আন্দোলন চলবে।’’
এই ঘটনার পর থেকে সুর চড়িয়েছে বিজেপি। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূল যেখানে থাকবে, সেখানে দুর্নীতি হবেই। আর যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁরা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এর দায় নিতে হবে অনীত থাপা আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আমরা চাকরিহারাদের পাশে রয়েছি।’’
ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা তথা গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মুখপাত্র শক্তিপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘‘রাজ্যের অন্যান্য জায়গার থেকে জিটিএর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। জিটিএ-তে নিয়োগের নিয়ম নেই৷ যেখানে নিয়ম নেই সেখানে নিয়ম ভাঙার কোনও প্রশ্নই উঠছে না। আমাদের বোর্ড আসার পরে এই পক্রিয়া চালু করা হয়েছিল। তার কারণ শিক্ষা নৈতিক অধিকার। এই রায় নিয়ে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। আমরা আশাবাদী এই রায় যেটা রয়েছে সেটা বদলে যাবে৷’’