Murshidabad Father-Son Murder Case

৩৩৩টি চার্জশিট, ওয়াকফ-হিংসায় আরও বিচারের আশায় পুলিশ

গত ১১ এপ্রিল ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকা উত্তপ্ত হলে বিরাট পুলিশবাহিনী নিয়েও উচ্চপদস্থ কর্তারা সামলাতে পারেননি। ১১, ১২ এপ্রিল লুঠপাট, ভাঙচুর এবং আগুন লাগানো হয় শমসেরগঞ্জের বেতবোনা, জাফরাবাদের মতো ছ’টি গ্রামে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:২৬

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

শমসেরগঞ্জের জাফরাবাদে বাবা-ছেলেকে খুনের ঘটনায় ধৃতদের যাবজ্জীবন সাজার পরে বাকি ৩৩৩টি মামলার বিচারও দ্রুত শেষ করতে চাইছে পুলিশ। ইতিমধ্যে প্রায় আটটি মামলার বিচার শেষের পথে।

সূত্রের খবর, ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে মুর্শিদাবাদের সুতি, ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জের মতো বিভিন্ন এলাকায় গ্রামের পর গ্রাম ভাঙচুর, বাসিন্দাদের খুনের চেষ্টা, বাড়িতে আগুন, পুলিশকে মারধর, পুলিশের ফাঁড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনাগুলিতে পুলিশ ৩৩৩টি মামলা রুজু করে। সম্প্রতি পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট ওই ৩৩৩টি মামলায় স্থানীয় জঙ্গিপুর আদালতে চার্জশিট পেশ করেছে। এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, সব ক’টি মামলার তদন্ত গুরুত্ব সহকারে করা হয়েছে। সাত মাসে ৩৩৩টি মামলার তদন্তের প্রাথমিক পর্ব শেষ করে ৩০০র বেশি অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। এখন ওই মামলাগুলির বিচার মিটিয়ে অভিযুক্তদের দোষী সাব‍্যস্ত করার চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।

গত ১১ এপ্রিল ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকা উত্তপ্ত হলে বিরাট পুলিশবাহিনী নিয়েও উচ্চপদস্থ কর্তারা সামলাতে পারেননি। ১১, ১২ এপ্রিল লুঠপাট, ভাঙচুর এবং আগুন লাগানো হয় শমসেরগঞ্জের বেতবোনা, জাফরাবাদের মতো ছ’টি গ্রামে। সেখানেই দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন বাবা, ছেলে। অভিযোগ ওঠে, ওই দু’জনকে খুন ছাড়া পর পর কয়েকটি গ্রামে আগুন লাগিয়ে বাসিন্দাদের খুনের চেষ্টা করা হয়। দুষ্কৃতীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি পুলিশের গাড়ি থেকে পুলিশ ফাঁড়ি।

পুলিশ জানিয়েছে, ছ’টি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা শমসেরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। দু’দিনের গোলমালে ৩২৪টি মামলা রুজু হয়। যার বেশির ভাগই বাড়িতে ভাঙচুর এবং আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা। পুলিশকে মারধর, ভাঙচুরের মামলাও রয়েছে। এ ছাড় সুতি থানা এলাকায় ওই দু’দিনের গোলমালে ন’টি মামলা রুজু হয়েছে।তার মধ্যে পুলিশককর্মীকে খুনের চেষ্টা-সহ পুলিশের কিয়স্ক ভাঙচুর, আগুন লাগানোর ঘটনাও আছে।

সূত্রের খবর, ওই ঘটনার পরেই মুর্শিদাবাদের ডিআইজি ওয়াকার রাজার নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করা হয়েছিল। পুলিশের তরফে এপ্রিলের ওই মামলাগুলির তদন্তভার তুলে দেওয়া হয় সিটের হাতে। প্রাথমিক ভাবে সিটকে কয়েকটি মামলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলা হয়। যার এক নম্বরে ছিল শমসেরগঞ্জের জাফরাবাদে বাবা-ছেলেকে খুনের ঘটনা। ওই মামলায় সাজা ঘোষণা হতেই পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, আরও আটটি মামলার বিচারও শেষের পথে। যার মধ্যে রয়েছে, জাফরাবাদের এক প্রতিবন্ধী এবং এক মৃৎশিল্পীর বাড়ি ভাঙচুর করে তাঁদের পুড়িয়ে মারার চেষ্টার মামলা। দু’টি মামলাতেই অভিযুক্তরা এখনও জেলে। এ ছাড়া শমসেরগঞ্জের নিউ ডাকবাংলো মোড় এবং সুতি মোড়ে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর এবং এক পুলিশকে খুনের চেষ্টার মামলারও বিচার দ্রুত শেষ হবে বলে আশা তদন্তকারীদের। ওই একটি মামলায় জখম পুলিশকর্মী অমিত তামাংয়ের দেহে ৭৪টি সেলাই করতে হয়েছিল। এক পুলিশ অফিসার জানান, সব ক’টি মামলাতেই অভিযুক্তদের জেল হেফাজতে রেখে কাস্টডি ট্রায়াল করার চেষ্টা চলছে। তবে চার্জশিট জমা দেওয়া হলেও কিছু মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। কয়েক জন অভিযুক্ত পলাতক রয়েছে। যার মধ্যে কয়েক জন ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা।

তবে শমসেরগঞ্জে জোড়া খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের পরিজনের দাবি, তাঁরা ন্যায় বিচার পাননি। তাই উচ্চ আদালতে যাবেন এবং সিবিআই-তদন্তের আর্জি জানাবেন। সাজাপ্রাপ্ত ইনজামুল হকের দাদা নুর ইসলামের দাবি, ‘‘কাউকে আড়াল করতে আমার ভাই আর বাকিদের ফাঁসানো হয়েছে। আমরা প্রথম থেকেই সিবিআই-তদন্তের দাবিতে হাই কোর্টে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় নেতারা আশ্বাস দেন, ন্যায় বিচার পাব। এ বার হাই কোর্টে যেতেই হবে।’’ সাজাপ্রাপ্তদের তরফের আইনজীবী মিঠুন সরকার বলেন, ‘‘কলকাতার এক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।’’ জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা আস্থা রেখেছিলাম আদালতের উপরে। মিথ্যা আশ্বাস কাউকে দেওয়া হয়নি।’’

আরও পড়ুন